মূল বিষয় আড়াল করতে ‘আইওয়াশ’ আমফান মামলায় হাইকোর্ট
মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু,
সোমবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডালের ডিভিশন বেঞ্চে উঠেছিল আমফান বিষয়ক মামলা। সেখানে গতবারের মত এবারেও হাইকোর্ট রাজ্যের রিপোর্ট দেখে বললো – ‘ মূল বিষয় আড়াল করতে আইওয়াশ করা হচ্ছে’। সোমবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডালের ডিভিশন বেঞ্চে উঠেছিল আমফানে দুকোটি টাকার সরকারি সরঞ্জাম চুরির মামলা। গত শুনানিতে এই মামলায় রাজ্যের তৈরি রিপোর্ট জমা নেয়নি আদালত। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডালের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছিল – ‘ রাজ্যের রিপোর্ট আইওয়াশ ছাড়া কিছুই নয়। কেননা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ধারা প্রয়োগ করা হয়নি? কেন তদন্তকারী পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণে নীরব? ‘ এইসব প্রশ্ন রাখে কলকাতা হাইকোর্ট। পুনরায় রাজ্য কে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। আজ সেই রিপোর্ট দেখে কলকাতা হাইকোর্ট একই মন্তব্য করে থাকে। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমফানে ক্ষতির জন্য উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক ও ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে দু’কোটি টাকার আমফানের রুট সরঞ্জাম দেওয়া হয়। আবেদনকারীর অভিযোগ ঘোড়ারাস কুলীন গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য ও উপপ্রধান ওই সরঞ্জাম ব্যক্তিগতভাবে একটি গোডাউনে মজুত করে রাখে। চলতি বছরের ২ জুন ওই সরঞ্জাম ট্রাকে করে পাচার করার চেষ্টা হয়। স্থানীয় মানুষরা ধরে ফেলে। মাটিয়া থানার পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত অভিযোগ দায়ের করে ওই দিন। পরে আরও ৬ জুন সংশ্লিষ্ট ওই প্রাইভেট গোডাউন থেকে ফের আমফানের সরঞ্জাম পাচার করতে যায়। এলাকার মানুষ আবার তিনটি ট্রাককে ধরে ফেলে। স্থানীয়রা ফের মাটিয়া থানায় ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। তবে ওই অভিযোগে ৪০৯ ধারা দেওয়া হয় না। এই বিষয়টিই কলকাতা হাইকোর্টের নজরে এনে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন স্বপন কুমার কর্মকার নামে এক এলাকাবাসী । এই মামলায় গত শুনানিতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে রিপোর্ট জমা দিতে গেলে সেই রিপোর্ট নিতে অস্বীকার করে ডিভিশন বেঞ্চ। তদন্তের গতি প্রকৃতি জানিয়ে ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুনরায় তদন্তের রিপোর্ট জমা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল রাজ্য সরকারকে। আজ সেই রিপোর্ট জমা পড়ে রাজ্যের তরফে।এর আগে আমফান নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি টি বি রাধাকৃষ্ণনের ডিভিশন বেঞ্চে আমফানে ক্যাগ তদন্তে রাজ্যের পুনবিবেচনার আর্জি খারিজ হয়েছিল। সেইসাথে আদালতের তরফে পরিস্কারভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল – ‘ রাজ্য কে আর সময় নয়, আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনবার্সনে আর্থিক অনুদান বিলির যাবতীয় কাগজপত্র তুলে দিতে হবে ক্যাগের হাতে।তদন্তে অসহযোগিতা করা যাবেনা।যদি অসহযোগিতার অভিযোগ উঠে তাহলে আদালত কড়া অবস্থান নেবে’। পুনবিবেচনার জন্য আর কোন সময়সীমা রাজ্য কে দিতে রাজী নয় আদালত । তৎকালীন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি বি রাধাকৃষ্ণনের ডিভিশন বেঞ্চে আমফান নিয়ে আপিল মামলার শুনানি চলেছিল। সেখানে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের আইনজীবী কে নির্দেশ দিয়েছিল – ‘ক্যাগ কে হিসাব দেবে নবান্ন’।যদিও রাজ্যের আইনজীবী সেইদিন শুনানিতে জানিয়েছিলেন -‘ চলতি বছরের আর্থিক বর্ষ এখনও শেষ হয়নি।এজন্য ১৬ টি জেলার জেলাশাসকরা যথাযথভাবে হিসাব দিতে পারছেন না রাজ্য কে’। মূলত আমফানে ত্রাণ ও পুনবার্সন নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থদের আর্থিক অনুদানের হিসাব এটি।এটি যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ, তাই দুর্নীতির অভিযোগে কেন্দ্রীয় এজেন্সি ক্যাগ কে তদন্তভার দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট।