খায়রুল আনাম,
ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি
জরুরী তলব পেয়ে দিল্লি গেলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য
একের পর এক ঘটনায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশন্যাল রাঙ্কিং ফ্রেম ওয়ার্ক বা এনআইআরএফ-এর বিচারে বিশ্বভারতীর শিক্ষার অবনমন চিত্রটিও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। রাজ্যের মধ্যে এই একটি মাত্র কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার এই অবনমন চিত্র দেখে হতাশ ও বিরক্ত শিক্ষা জগৎ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বপ্নের বিশ্বভারতীর বর্তমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ও শিক্ষার অবনমন নিয়ে দেশ- বিদেশে বিস্তর চর্চাও হচ্ছে। তারই মধ্যে পড়ুয়াদের বহিষ্কার ও একাধিক অধ্যাপককে সাসপেণ্ড করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়েছে বিশ্বভারতী-সহ সারা রাজ্যের শিক্ষা জগৎ। টানা ১২ দিন ধরে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর উপাচার্যের সরকারি বাস ভবন অবরুদ্ধ করে চলেছে পড়ুয়াদের আন্দোলন। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ সেই আন্দোলনের সমর্থনে রাস্তায় নেমেছেন। কলকাতা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে রাজ্য পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকরা গিয়ে উপাচার্যের বাস ভবনের ফটকের তালা ভেঙেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে পারেন নি। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টে একাধিক মামলায় জড়িয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। বিশ্বভারতীর মতো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বার বার এ ধরনের মামলায় জড়ানোর ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্ট তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে যে সব মন্তব্য করেছে তাতে বিশ্বভারতীর মর্যাদাও ক্ষুন্ন হয়েছে বলেও মনে করা হয়। আবার উপাচার্য বাইরে এসে বিশ্বভারতীর বিভিন্ন ভবনের অধ্যক্ষ ও অধ্যাপকদের ‘চোর’ বলায় তা নিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এমন কী, উপাচার্যের একটি ভার্চুয়াল বৈঠকের চিত্র প্রকাশ হওয়ায় যা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে বিভিন্ন মহলে। যেখানে উপাচার্য ভবন অধ্যক্ষ ও অধ্যাপকদের সম্পর্কে যে সব মন্তব্য করেছেন, তার প্রতিবাদে ৫০ জন অধ্যাপক রাস্তায় নেমে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। বিশ্বভারতীর আচার্য হিসেবে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিশ্বভারতীর পরিদর্শক রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এবং রেক্টর রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। তাই বিশ্বভারতী এভাবে একের পর এক বিতর্ক এবং মামলায় জড়ানোয় তাঁদেরও সম্মানহানি হচ্ছে বলে মনে করছে বিভিন্ন মহল। আবার বিশ্বভারতী খুললেই উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন হবে বলে বিভিন্ন মহল থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতেই বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে দিল্লিতে জরুরী তলব করলো কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক। আর সেই তলব পেয়েই দিল্লি গেলেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে যে, ২২ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর উপাচার্য বিশ্বভারতীতে অনুপস্থিত থাকবেন। এই সময় কালে বিশ্বভারতীর শিক্ষা ভবনের অধ্যক্ষ তারাপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় বিশ্বভারতীর ভার সামলাবেন বলে জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক বিশ্বভারতীর সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সঙ্গে আলোচনা করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।।
ছবি- উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।