মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে বিধানসভা লড়ুক দল, চাইছেন যোগী
আমিরুল ইসলাম,
আগামী বছর দেশের সর্ববৃহত্তম রাজ্য উত্তরপ্রদেশে বিধানসভার নির্বাচন রয়েছে। তাই বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ চাইছেন – মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে বিধানসভা লড়ুক দল। এই লক্ষ্য পূরণে এখন থেকেই ঘুঁটি সাজাতে শুরু করে দিয়েছেন যোগী। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপর সুকৌশলে চাপ সৃষ্টির রাস্তাও নিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি রাজধানী দিল্লির ল্যুটিয়েন্স এলাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকার বাসস্ট্যান্ডে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যোগীর ছবি-সহ বড় বড় হোর্ডিংয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে।মূলত, প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে বিজেপির কুড়ি দিন ব্যাপী কর্মসূচি,এইসব বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে ঠিকই, তবে এর কারণ অন্যকিছু বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বিজ্ঞাপনের কোনওটিতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে শুরু করে করোনা টিকাকরণের ক্ষেত্রে উত্তরপ্রদেশের সাফল্য তুলে ধরা হয়েছে। রাজধানীর বুকে উত্তরপ্রদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এই ধরনের বিজ্ঞাপন দেওয়ার কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, দিল্লি সংলগ্ন উত্তরপ্রদেশের বহু মানুষ রাজধানীতে কাজ করতে আসেন। মূলত তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই এমন বিজ্ঞাপন বলে যুক্তি যোগী সরকারের। অথচ দিল্লি সংলগ্ন আরেক বিজেপি শাসিত রাজ্য হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টারের বিজ্ঞাপন কিন্তু দিল্লির ওই এলাকায় কোনও দিনই চোখে পড়েনি। হরিয়ানা থেকে বহু মানুষ দিল্লিতে কাজ করতে আসেন।এখন দেখার যোগী আদিত্যনাথের ভোটের অঙ্ক মিলে কিনা আগামী বিধানসভায় উত্তরপ্রদেশের বুকে।
এদিকে নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে কোনও নাম তুলে ধরা নয়, ভোটের ফল প্রকাশের পর দল ক্ষমতায় এলে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন। বেশ কয়েক বছর ধরে এই নীতিতেই চলছে বিজেপি। তবে দলের এই নীতি মানতে যোগী যে নারাজ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আগামী বছরের গোড়ায় উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোট। তার জন্য বিজেপি নির্বাচন সংক্রান্ত সাংগঠনিক প্রস্তুতিপর্ব ইতিমধ্যেই সেরে ফেলেছে। এবারও তারা কোনও রাজ্যেই কাউকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করতে চায় না। বিজেপি একপ্রকার স্পষ্ট করে দিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘মুখ’ সামনে রেখেই দল সব রাজ্যে নির্বাচন লড়বে। তারপর থেকেই একপ্রকার উঠেপড়ে লেগেছেন যোগী।
দিল্লিতে নিজের ছবি-সহ বিজ্ঞাপন দিয়ে যোগী দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে বার্তা দিয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। তাতে বিজেপি খানিকটা ফাঁপরে পড়বে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের। উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতা ধরে রাখা বিজেপির কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবারের উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনকে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির ‘অ্যাসিড টেস্ট’ বলেই মনে করে রাজনৈতিক মহল। উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নয় বিজেপি। অথচ যোগীর মুখ সামনে রেখে সে রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে সেই জয়ের দাবিদার তিনিই হয়ে যাবেন। তাতে নরেন্দ্র মোদির পর তাঁর বিকল্প হিসাবে যোগীর নাম আরও জোরাল ভাবে সামনে উঠে আসতে পারে। সেই সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখছে বিজেপি শিবির। আবার যোগীকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে তুলে ধরা না হলে তিনি যে ক্ষুণ্ণ হবেন এবং তাতে ভোটে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, সেই আশঙ্কার কথাও মাথায় রাখছে বিজেপি নেতৃত্ব।