চিটফান্ড মামলায় ডিজিপি কে নোডাল অফিসার নিয়োগের নির্দেশ হাইকোর্টের
মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু ,
মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডালের এজলাসে উঠে চিটফান্ড সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি মামলায়।এই মামলায় এদিন ব্যক্তিগত হাজিরা দেন রাজ্যের নুতন ডিজিপি মনোজ মালব্য। তিনি আদালতের কাছে এই মামলায় গড়িমসির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডালের বেঞ্চ এদিন রাজ্যের ডিজিপি কে চিটফান্ড মামলায় দ্রুত নিস্পত্তির জন্য পুলিশের নোডাল অফিসার নিয়োগের নির্দেশ দেয়। এই নোডাল অফিসার আদালত ও পুলিশের যোগসূত্র হিসাবে কাজ করবে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে আগামী ২১ ডিসেম্বর। গত ২০১৬ সাল থেকে চিটফান্ড মামলা গুলি কলকাতা হাইকোর্টে চলছে।আগের শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডালের এজলাসে উঠেছিল চিটফান্ড সংক্রান্ত এই মামলা। সেখানে আদালতের নির্দেশিকা থাকা সত্বেও কেন পুলিশ চিটফান্ড কর্তাদের আদালতে হাজির করেনি তা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছিল হাইকোর্ট। যার ফলস্বরূপ নুতন ভারপ্রাপ্ত ডিজিপি মনোজ মালব্য কে ২১ সেপ্টেম্বর তলব করেছিল হাইকোর্ট। যদিও রাজ্যের তৎকালীন এডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত আদালত কে জানিয়েছিলেন – ‘ নুতন ডিজিপি হিসাবে সবে দায়িত্ব নিয়েছেন মনোজ মালব্য।তাই একটু সময় দেওয়া হোক’।পাশাপাশি এই নির্দেশ পুনবিবেচনা করার জন্য আবেদন রেখেছিলেন তিনি। তবে দুটি আবেদনই খারিজ করে থাকে আদালত।আগের শুনানিতে চিটফান্ড মামলায় দুজন চিটফান্ড ডিরেক্টর গড়হাজির থাকায় এই নির্দেশ বলে জানা গেছে।চলতি বছরের গত জুলাই মাসে হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডাল এবং বিচারপতি অরিজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে উঠেছিল চিটফান্ড সংক্রান্ত মামলা।সেখানে আদালত কলকাতা পুলিশ কমিশনার এবং রাজ্যের এডিজি ( সিআইডি) কে আগামী শুনানিতে হাজির করাতে নির্দেশ দেয়। এমপিএস কর্তাদের অনেকেই এখন জেলে।বাকি তিন চিটফান্ড সংস্থা গুলশান গ্রুপ অফ কোম্পানিজ, আইনোভা প্রিমিয়ার এগ্রো, ফিডেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ দের মালিকদের আগামী শুনানিতে হাজির করাতে হবে পুলিশ কে বলে নির্দেশ দিয়েছিল ।কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ – ‘ চিটফান্ড মামলায় মালিকদের গড়হাজিরতায় আমানতকারীদের অর্থ ফেরতের প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হচ্ছে, তাই মালিকদের উপস্থিতি দ্রুত বিচারের ক্ষেত্রে কাম্য’। গত জুন মাসে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডালের এজলাসে চলেছিল সারদায় আর্থিক প্রতারণা সংক্রান্ত মামলাগুলির শুনানি।ওইদিন কলকাতা হাইকোর্ট এক সদস্যের কমিটি গড়ে সারদায় আমানতকারীদের টাকা ফেরানোর ইংগিত দিয়েছিল। তবে কবে কিভাবে এবং কার নেতৃত্বে এই কমিটি গঠন হবে তার চুড়ান্ত কোন নির্দেশিকা জারি করা হয়নি হাইকোর্টের তরফে।ওইদিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডাল প্রশ্ন তুলেছিলেন সারদায় শ্যামল সেন কমিশনের রিপোর্ট কেন হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিসে পড়ে রয়েছে তা নিয়ে।শুধু তাই নয় সারদায় বাজেয়াপ্ত ১৩৮ কোটি টাকা যেটি রাজ্য সরকার তার নিজের প্রয়োজনে খরচ করেছে। তা কেন ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীদের ফেরত দেওয়া যাবেনা, তা নিয়েও তুলেছেন প্রশ্নচিহ্ন। পাশাপাশি সিবিআই সারদায় যা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে তাও ফেরানোর দরকার বলে মনে করছে আদালত সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডাল এজলাসে জানিয়েছিলেন – ‘চিটফান্ডে প্রতারিত মামলা গুলি এবার থেকে ধারাবাহিকভাবে শুনবেন তিনি’।এহেন অবস্থানে কেন্দ্রের তরফে অতিরিক্ত সলিটর জেনারেল জনস্বার্থ মামলা সহ অন্যান্য মামলার সীমাহীন চাপের প্রসঙ্গ তুললেও তাতে আমল দেননি ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডাল।কলকাতা হাইকোর্টের এহেন স্বতঃস্ফূর্ত অবস্থানে খুশি বিভিন্ন বেআইনী আর্থিক লগ্নিকারী সংস্থায় প্রতারিতরা।সংবিধান আইন বিশেষজ্ঞ আইনজীবী বৈদূর্য ঘোষাল জানান – “চিটফান্ডে প্রতারিতদের টাকা ফেরানো, সম্পত্তি বিক্রি এবং সম্পত্তির হিসেবে নিকেশ করতে এইসব শুনানি খুবই আবশ্যিক ছিল”। জানা গেছে, ২০১৬ সালে তৎকালীন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেলুড়ের ডিভিশন বেঞ্চ এইসব চিটফান্ডে প্রতারিত মামলায় বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করেছিল।বিভিন্ন সময়ে তার শুনানি পর্ব একপ্রকার বন্ধ ছিল। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডাল এইসব মামলার স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধারাবাহিক শুনানির কথা জানালে তার বিরোধিতা করে থাকেন কেন্দ্রের আইনজীবী। তবে তাতে আমল দেননি ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। চিটফান্ডে প্রতারিতদের ক্ষতিপূরণ পাবার নুতন করে সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় বাংলার কোটির উপরে প্রতারিত ব্যক্তিরা তাদের একদা সঞ্চিত অর্থ পুনরায় ফেরত পাওয়াতে আশাবাদী। এরেই মধ্যে গত জুন মাসে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডালের এজলাসে প্রাক্তন বিচারপতি শ্যামল সেন কমিশনের চুড়ান্ত রিপোর্ট কেন পড়ে রয়েছে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিসে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। আবার ১৩৮ কোটি সারদায় বাজেয়াপ্ত অর্থ কেন ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীদের দেওয়া হবে না? তা নিয়ে বিস্তর প্রশ্নচিহ্ন দেখা যায় ওইদিন আদালতের সওয়াল-জবাব পর্বে।গত জুলাই কলকাতা হাইকোর্ট চার চিটফান্ড সংস্থার মালিকদের আদালতে হাজিরা সুনিশ্চিত করাতে নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা পুলিশকমিশনার এবং রাজ্যের এডিজি সিআইডি কে।সেসময় পুলিশের ডিজিপি ছিলেন সি বিরেন্দ্র।সম্প্রতি এই পদে এসেছেন মনোজ মালব্য। আগের শুনানি তে কলকাতা হাইকোর্ট নুতন ডিজিপি কে ২১ সেপ্টেম্বর তলব করেছিলো। কেন পুলিশ আদালতের নির্দেশ থাকা সত্বেও চিটফান্ড কর্তাদের আদালতে হাজির করেনি তা নিয়ে।এরপর আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার রাজ্যের নুতন ডিজিপি মনোজ মালব্য ব্যক্তিগত হাজিরা দেন। সেইসাথে আদালতের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি। এরপর আদালত রাজ্যের ডিজিপি মনোজ মালব্য কে চিটফান্ড মামলায় দ্রুত নিস্পত্তি ঘটাতে নোডাল অফিসার নিয়োগের নির্দেশ দেয়। আগামী ২১ ডিসেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে।