আসানসোল পথ দূর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে রনক্ষেত্র, তেল ট্যাঙ্কারের সঙ্গে মোটরবাইকের সংঘর্ষ, মৃত ১,আহত ৩,
কাজল মিত্র :- ফের পথ দূর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার দুপুরে রনক্ষেত্র হয়ে উঠলো আসানসোল দক্ষিণ থানার কালিপাহাড়ি সংলগ্ন জাতীয় সড়ক।ঘটনার সম্পর্কে জানাজায় দূর্গাপুরের ভিড়িঙ্গির বাসিন্দা একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী প্রবীর বাদ্যকর বারাবনি মদনমোহনপুরে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে এসেছিলেন। মঙ্গলবার দুপুর দুটো থেকে প্রবীরবাবুর ডিউটিতে যাওয়ার কথা ছিলো। সেই কারণে তিনি এদিন দুপুর একটার সময় বৃষ্টির মধ্যেই মোটরবাইক করে তিনজনকে নিয়ে দূর্গাপুর ফিরছিলেন। আসানসোল দক্ষিণ থানার কালিপাহাড়ি মোড়ে ২নং জাতীয় সড়কের আসানসোল থেকে রানিগঞ্জের একটি তেলের ট্যাংকার তাদের বাইকে ধাক্কা মারে। সেই ধাক্কায় বাইকে সওয়ার ৪ জনই ছিটকে পড়ে। বাইকটিকে বেশ কিছুটা টেনে নিয়ে যায় তেল ট্যাঙ্কারটি। আহত হয় বাইকে থাকা আরোহীরা। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে কালিপাহাড়ি মোড় এলাকায়।ঘটনায় মৃত এক স্কুল পড়ুয়ার বাবা, মা ও ভাই আহত হয়েছে।তিনজনকেই আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।মৃত স্কুল পড়ুয়ার তৃষান বাদ্যকর (১৩)।আহত তিন জনের নাম হলো প্রবীর বাদ্যকর ( ৪৫), শান্তি বাদ্যকর (৪০) ও বিরাট বাদ্যকর (৪)।সকলেই দূর্গাপুরের ভিড়িঙ্গির স্কুল পাড়ার বাসিন্দা।মৃত তৃষান ভিড়িঙ্গির টিএন ইনস্টিটিউটশনে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।
এই দূর্ঘটনার পরে এলাকার বাসিন্দারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। তারা কালিপাহাড়ি মোড়ে ২ নং জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন। উন্মত্ত জনতারা কালিপাহাড়ি মোড়ে থাকা আসানসোল দক্ষিণ থানার ট্রাফিক গার্ডের উপরে চড়াও। ট্রাফিক পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট বৃষ্টি করা হয়। ভাঙ্গচুর করা হয় সেখানে থাকা একাধিক পুলিশের বাইক ও ট্রাফিক স্ট্যান্ডটি। ২ নং জাতীয় সড়কের এই ঘটনার জেরে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ট্রাফিক পুলিশরা এলাকা ছাড়া হন।
গন্ডগোলের খবর পেয়ে আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ এলে তাদেরকে ঘিরে এলাকার বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন। পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠে। একটা সময় পুলিশ রোষের মুখে পড়ে পিছু হঠে। আহতদের এলাকার বাসিন্দারা উদ্ধার করে জেলা হাসপাতালে পাঠায়। এরপর আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি (সদর) অংশুমান সাহা সহ অন্য পুলিশ আধিকারিকরা আরো পুলিশ বাহিনী নিয়ে এলাকায় আসেন। পুলিশ এলাকার বাসিন্দাদের দাবি মেনে নিলে দুপুর আড়াইটের পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
কালিপাহাড়ি মোড় এলাকায় বারবার পথ দূর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।তারা জানান এই মোড় আস্তে আস্তে ডেথ জোন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ থাকা সত্বেও বলতে গেলে প্রতিদিনই এই মোড়ে পথ দূর্ঘটনা ঘটছে। তারা অভিযোগ করে বলেন, ট্রাফিক পুলিশ এখানে যান নিয়ন্ত্রণে কোন কাজ করেনা। তাদের একটাই কাজ গাড়ি আটকে কাগজপত্র পরীক্ষার নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা ও তাদের কাছ থেকে টাকা তোলা। গত ৩০ আগষ্ট এই এলাকায় তেল ট্যাঙ্কারের সঙ্গে যাত্রীবাহী মিনিবাসের সংঘর্ষ হয়েছিলো। তার আগে একাধিক পথ দূর্ঘটনা ঘটেছে। তারপরেও পুলিশ এখানে দূর্ঘটনা আটকাতে কোন যে ব্যবস্থা নেয়নি, তারা প্রমান এদিনের পথ দূর্ঘটনা। এলাকার বাসিন্দারা দাবি করেন, পথ দূর্ঘটনা মৃত ও আহতদের ক্ষতিপূরনের পাশাপাশি এই এলাকায় পথ দূর্ঘটনা কমাতে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে হবে। আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ দীর্ঘক্ষন চেষ্টার পরে নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসে। দুপুর আড়াইটের পরে স্বাভাবিক হয় যান চলাচল।পুলিশ তেল ট্যাঙ্কারটিকে আটক করলেও, চালক ও খালাসি পালিয়ে যায়।