হাইকোর্টের নির্দেশে কাঁথির হিন্দু মহাসম্মেলন মামলায় সই জালিয়াতি দেখতে সিএফএসএল

মোল্লা জসিমউদ্দিন, 

শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে সই জালিয়াতি বিষয়ক এক মামলায় কেন্দ্রীয় সংস্থা সিএফএসএলে কাগজপত্র পরীক্ষা করার নির্দেশ জারি করা হয়। দীঘায় জগন্নাথ মন্দির  উদ্বোধনের দিনেই কাঁথিতে হিন্দু ধর্মসভা করতে চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে  যে মামলা হয়েছিল, তাতে নাকি সভাপতির হয়ে অন্য কেউ সই করেছেন। এই অভিযোগে কাঁথিতে হিন্দু মহাসম্মেলন সংঘঠনের সভাপতি রামেশ্বর বেরা সই করা ওকালত নামা-সহ সমস্ত কাগজপত্র দিল্লি সিএফএসএল-এ পাঠানোর নির্দেশ দিলেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ ।জানা গিয়েছে, মিছিলের অনুমতি চেয়ে ডিএম, পুলিশ সুপারকে চিঠি পাঠান হিন্দু সংঘঠনের সভাপতি রামেশ্বর বেরা। সেই সভার অনুমতি না পাওয়ায় রামেশ্বর বেরা-সহ পাঁচজন হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। মামলা চলাকালীন তিনি দাবি করেন ওয়াকালত নামাতে তাঁর হয়ে অন্য কেউ সই করেছে। এই মামলা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।তাই এই ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সমস্ত কাগজপত্র দিল্লির সিএফএসএলে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। সেখান থেকে রিপোর্ট এলেই পরিবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান বিচারপতি।আসন্ন ৩০ এপ্রিল দিঘার জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । ওই দিনই কাঁথিতে সনাতনী হিন্দুদের নিয়ে সভা করতে চান শুভেন্দু অধিকারী । কিন্তু পুলিশের অনুমোদন মিলছে না বলে হাইকোর্টের  দ্বারস্থ হন বিরোধী দলনেতা।অক্ষয় তৃতীয়ার দিন উদ্বোধন হবে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে দিঘায় তৈরি জগন্নাথ মন্দিরের। উদ্বোধনের কর্মসূচিকে রাজ্য তো বটেই, জাতীয় এমনকি, আন্তর্জাতিক স্তরেও ‘মেগা ইভেন্ট’-এর রূপ দিতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।রাজ্যের প্রশ্ন, -‘কারা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে? কারা দিচ্ছে টাকা? ধর্মীয় অনুষ্ঠান আদৌ বন্ধ করা সম্ভব কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। , শুক্রবার শেষ হল সেই মামলার শুনানি। আগামী সোমবার বিকেলে হবে রায়দান।মামলাকারীর আইনজীবী জানান , “কোন ধর্মীয় রীতি কবে হবে, কোন পদ্ধতিতে পালন করা হবে, তা ঠিক করার অধিকার পুলিশের নেই। অক্ষয় তৃতীয়ার দিন কেন ওই অনুষ্ঠান করতে হবে সেটা জানার অধিকারও পুলিশের নেই।” ওই আইনজীবী আরও জানান, দিঘার জগন্নাথ মন্দির থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে এই ধর্মীয় কর্মসূচি পালন করার আবেদন জানানো হয়েছে। রাজ্যের কাছে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ জানতে চান, -‘জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে কত মানুষ যাবেন?’ রাজ্য জানায়, -‘এক লক্ষ মানুষের যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে’। রাজ্যের প্রশ্ন, ‘মামলাকারীরা এই পুজো তাদের বাড়িতে করতে পারেন না?’ বিচারপতি জানতে চান, ‘২০০০ মানুষ নিয়ে করলে কী অসুবিধা?’ কিন্তু ‘কে মানুষ গুণে রাখবেন?’ প্রশ্ন রাজ্যের। রাজ্য জানায়, -‘জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে মোতায়েন থাকবে বড় সংখ্যার পুলিশও। বিচারপতি ঘোষ বলেন, ‘ধর্মীয় কোনও অনুষ্ঠানে আমরা কী করে না করতে পারি?’ রাজ্যের দাবি, এটা রাজনৈতিক কারণে করা হচ্ছে।কারা এই অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাজ্য। তাদের সওয়াল, “৪-৫ জন গ্রামবাসী এই ব্যবস্থা করছেন এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? তারা কোথা থেকে এই টাকা পাবেন? তাদের টাকার উৎস কী? বিরোধী দলনেতার নাম নিয়ে রাজ্য বলে, এর পিছনে শুভেন্দু অধিকারী আছেন। তিনি পিছনে আছেন কেন? তাঁকে সামনে আসতে বলুন।”রাজ্যের স্পষ্ট দাবি, ইচ্ছাকৃত প্রশাসনকে অসুবিধায় ফেলার জন্য এই কর্মসূচি করার চেষ্টা হচ্ছে। মামলাকারীর আবেদন, অন্তত পাঁচ হাজার লোক নিয়ে ধর্ম সম্মেলন করার অনুমতি দেওয়া হোক।আগামী সোমবার এই মামলার রায়দান হবে। তার মধ্যে পুলিশকে বিষয়টি দেখতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্যের উচ্চ আদালত।

Leave a Reply