স্যালাইন কান্ডে রাজ্যের রিপোর্ট চাইলো প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে বিষাক্ত স্যালাইন নিয়ে জোড়া জনস্বার্থ মামলার শুনানি চলে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে বেআইনি স্যালাইন কাণ্ডে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। ঘটনার জেরে মৃত্যু হয় এক প্রসূতিরও। ইতিমধ্যেই রাজ্যের নির্দেশে এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি।রাজ্যের তরফে কলেজ সুপার সহ ১২ জন চিকিৎসক কে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এবার স্যালাইন কাণ্ড নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট রিপোর্ট তলব করল রাজ্যের স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ দফতরের কাছে।শুধুমাত্র তাই নয় , রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের কাছেও। কলকাতা হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে চলছে এই মামলা। সেই বেঞ্চের পক্ষ থেকেই এবার নির্দেশ দেওয়া হল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে রাজ্যের তরফ থেকে দিতে হবে ক্ষতিপূরণ। পাশাপাশি, স্যালাইন প্রস্তুতকারক সংস্থার বিরুদ্ধে রাজ্য কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে?তা নিয়ে রাজ্যকে কলকাতা হাইকোর্টে জমা দিতে হবে ‘ অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট ‘। বৃহস্পতিবার বেআইনি স্যালাইন কান্ডের শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের বেঞ্চের পক্ষ থেকে রাজ্যকে নির্দেশ দেওয়া হয় দু সপ্তাহের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট জমা দিতে হবে আদালতে। বেঞ্চের তরফ থেকে আরও বলা হয়, -‘প্রথম রিপোর্ট জমা পরার পরই পরবর্তী নির্দেশ দেওয়া হবে আদালতের পক্ষ থেকে’। প্রসঙ্গত, গত সোমবার বেআইনি স্যালাইন কান্ডে জোড়া জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় হাইকোর্টে। আর তারপরেই হাইকোর্টের তরফ থেকে দেওয়া হল এই নির্দেশিকা।রিঙ্গার ল্যাকটেট স্যালাইন ব্যবহারে মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রককে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ। দফতরের তরফে রাজ্যের মুখ্য সচিব এই রিপোর্ট দেবে। একইসঙ্গে কেন্দ্রকেও রিপোর্ট দিয়ে জানাতে নির্দেশ তারা কি পদক্ষেপ নিয়েছে? এদিন এই মামলার শুনানি পর্বে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, -‘ ১৪ জানুয়ারি রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর নির্দেশিকা জারি করে জানায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাজ্য যেন ওষুধ না ব্যবহার করে। ঘটনার তদন্ত করছে সিআইডি’। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন করেন, -‘ প্রায় ১০ দিনের বেশি কেন দেরি করা হল এই ওষুধ প্রত্যাহার করতে?’ কেন্দ্রের তরফে আইনজীবী জানান, -‘ ইতিমধ্যেই ওই কোম্পানিকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং ওষুধ তৈরির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে’। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করে বলেন, -‘আমি সংবাদপত্রে দেখলাম ইতিমধ্যে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে’। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জানান-‘, হ্যাঁ। ১৩ জনের টিম গঠন করা হয়েছে’।ফের প্রধান বিচারপতি জিজ্ঞাসা করেন, -‘কিন্তু ফার্মা কোম্পানির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?’ প্রতুত্তরে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত আদালতে জানান,-‘ তিনটে ব্যাচে ওষুধ এসেছিল। ৩০ হাজার বোতল এসেছিল। যা প্রায় রাজ্যের সব হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেটা ব্যবহার করা বন্ধ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে রাজ্যের পাশাপাশি মুম্বাইয়ের ল্যাবেও পাঠানো হয়েছে টেস্টের জন্য। মোট পাঁচজন অসুস্থ হয়ে পড়েছিল মেদিনীপুর হাসপাতালে। তার মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়। বাকিরা চিকিৎসাধীন রয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালে’।মামলাকারীর আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি আদালতে জানান, -‘২০১৫ সালে গাইনোক্লোজিস্ট চিকিৎসক উদয়ন মিত্র এর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে সেই ডাক্তার পদত্যাগ করেন।২০২৪ সালের ২ মার্চ মাসে এই স্যালাইন কোম্পানিকে কর্নাটক সরকার ব্যান করে। পশ্চিমবঙ্গকেও সেটা জানান হয়। কর্নাটকে যখন এই স্যালাইনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছিল, সেই সময় কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টরর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছিল।এ রাজ্যে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হওয়ার পর স্যালাইন ব্যান করা হল কেন? গত ১০ ডিসেম্বর ড্রাগ কন্ট্রোলার বিজ্ঞাপ্তি জারি করে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল। তারপরও গোটা রাজ্যে কেন তা বন্ধ করার নির্দেশ দিল না স্বাস্থ্য সচিব?’প্রধান বিচারপতি বলেন, -‘বন্ধের নির্দেশের পরেও কেন আপনারা সরকারি হাসপাতালগুলো থেকে ওই স্যালাইন প্রত্যাহার করলেন না? ‘ অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত জানান, -‘রাতারাতি এই স্যাল্যাইন বন্ধ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি, গোটা রাজ্যের হাসপাতালগুলো থেকে। এটা করা উচিত ছিল’।স্যালাইন কোম্পানির তরফে আইনজীবী জানান, -‘কর্নাটক সরকার ব্যান করার পর মামলা দায়ের হয়েছিল আদালতে এবং সেই মামলা এখনও বিচারাধীন রয়েছে কর্নাটক হাইকোর্টে’।অপর মামলাকারী আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি জানান, -‘এই স্যালাইনের দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে’।অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত জানান, -‘রিঙ্গার ল্যাকটেট স্যালাইন বহুল ব্যবহৃত একটি ওষুধ। এমন কি তিনি নিজেও নিয়েছেন এই ওষুধ। রাজ্য এই ওষুধ মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরে ব্যবহার করেনি। এই একই কোম্পানি অসম, বিহার, ত্রিপুরা, তামিলনাড়ুতে ও ব্যবহার হচ্ছে। দূর্ভাগ্যবশত আমাদের রাজ্যে পাঁচজন ওষুধ ব্যবহারের ফলে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। একজনের মৃত্যু হয়েছে’।প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, -‘আপনারা এই ওষুধ বন্ধ করা বা টেস্ট করার ব্যাপারে আগেই ব্যবস্থা নিতে পারতেন? আপনারা কোনও ক্ষতিপুরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন? ক্ষতিপুরণ দিতে হবে’। অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, -‘অবশ্যই ক্ষতিপুরণ দেওয়া হবে’। আগামী ৩০ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।