‘স্যালাইনের গুণগত মানের দায় রাজ্য এড়াতে পারেনা’, মেদিনীপুর কান্ডে প্রধান বিচারপতি

মোল্লা জসিমউদ্দিন

বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্যালাইন নিয়ে মামলার শুনানি চলে। এদিন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাকে ক্লিনচিট দিল রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট পেশ করে রাজ্যের দাবি, -‘মেদিনীপুর মেডিক্যালে ব্যবহৃত রিঙ্গার ল্যাকটেট স্যালাইনে কোনও সমস্যা ছিল না। অন্য কারণে রোগী মৃত্যু হয়েছে। তার তদন্ত করছে রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি’। প্রসঙ্গত, গত ৯ জানুয়ারি মেদিনীপুর মেডিক্যালে সংক্রমিত স্যালাইন ব্যবহারের জন্য ১ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়। অসুস্থ  হন আরও ৪ জন। সেই ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হয়েছিল জোড়া জনস্বার্থ মামলা। সেই মামলায় রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব করেছিল প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ । বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে  সেই স্যালাইনের ল্যাব টেস্টের রিপোর্ট পেশ করে রাজ্য। জানা গেছে , তাতে জানানো হয়েছে, মেদিনীপুর মেডিক্যালে ব্যবহৃত রিঙ্গার ল্যাকটেট স্যালাইনে কোনও সংক্রমণ ছিল না। তাই স্যালাইন প্রস্তুতকারী সংস্থার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। একই দাবি করে ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাও। রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছে, সেদিন এক সঙ্গে ৫ জন রোগীর চিকিৎসা চলছিল হাসপাতালে। সেখানে অন্য কারণে রোগী মৃত্যু হয়েছে। তার তদন্ত করছে সিআইডি। যদিও রোগীমৃত্যুর ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তের পর রিঙ্গার ল্যাকটেট স্যালাইনে সংক্রমণ থাকাতেই দায়ী করেছিল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির দাবি, রাজ্যে ওষুধ ও মেডিক্যাল সরঞ্জাম সরবরাহের নামে যে বিপুল দুর্নীতি চলছে তাকে ধামাচাপা দিতে ভুয়ো রিপোর্ট জমা দিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকারি ল্যাবের এই রিপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছে তারা।এই ঘটনায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেদের ৬ জন সিনিয়র ও ৭ জন জুনিয়র ডাক্তারকে সাসপেন্ড করেছে রাজ্য সরকার। তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের হয়  মামলা। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলায় রাজ্যের দাবি, -‘প্রসূতি মৃত্যুতে স্যালাইনের নমুনায় কোনও সমস্যা দেখা যায়নি’। রিপোর্টে রাজ্য আরও জানায়, -‘মৃত প্রসূতির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। চাকরি দেওয়া হয়েছে স্যালাইনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকেও’।মামলার শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতি স্যালাইন প্রস্তুতকারী সংস্থার কাছে জানতে চান, “কীভাবে এই ঘটনা ঘটল?” ওই সংস্থা তখন জানায়, রাজ্যের স্যালাইন কেন্দ্রীয় ল্যাবে পাঠানোর পরেও ক্লিনচিট এসেছে। স্যালাইন প্রস্তুতকারক সংস্থার দাবি, স্যালাইন রাজ্যে পৌঁছে যাওয়ার পর তাদের আর কিছু করার থাকে না। এরপর রাজ্যকে কিছু গাইডলাইন মানতে হয়।তখন রাজ্যের তরফে এজি কিশোর দত্ত বলেন, “রিপোর্টে রাজ্যও একই কথা উল্লেখ করেছে। স্যালাইনে সমস্যা ছিল না।” প্রধান বিচারপতি রাজ্যের কাছে জানতে চান, “আপনারা কি নিজেদের স্যালাইন ব্যবহার করতে পারেন না? এমন ইন্ডাস্ট্রি করতে গেলে কত খরচ হতে পারে? আদৌ কি কোন ওষুধ কোম্পানি আছে এ রাজ্যে?” এজি জানান, এ বিষয় জেনে বলতে পারবেন। প্রধান বিচারপতি এদিন এই মামলার শুনানি পর্বে জানান – ‘ স্যালাইনের গুণগত মানের দায় রাজ্য এড়াতে পারেনা’। রিপোর্টে রাজ্য জানিয়েছে, ৯ জানুয়ারি রাতে, অর্থাৎ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, সেই রাতে কোনও সিনিয়র ফ্যাকাল্টি ছিলেন না। আর এমও ছিলেন না। পাঁচ জন প্রসূতির সি-সেকশনে সব জায়গায় সমান নজরদারি করা সম্ভব হয়নি। এই নিয়ে রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি তদন্ত করছে। দশদিন পর এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। 

Leave a Reply

You missed