স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প বাতিল চেয়ে জনস্বার্থ মামলা খারিজ করলো কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
জনস্বার্থেই স্বাস্থ্যসাথী।বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকারের ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পের বিরুদ্ধে দায়ের করা জনস্বার্থ মামলাটি খারিজ করে দিয়েছে । মামলাকারী দাবি করেছিলেন যে, ‘এই প্রকল্পের সুবিধা সাধারণ মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই পাচ্ছেন না, এবং এটি মূলত ভোটে ফায়দা তোলার উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছে। প্রকল্পটি কার্যকর নয় এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে এর কোনো প্রভাব নেই’।তবে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ মামলাটি খারিজ করে সাফ জানিয়েছে যে, ‘রাজ্য সরকার জনহিতেই এমন প্রকল্প চালু করতে পারে এবং আদালত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না’। গত ২০২১ সালে একটি সংস্থা কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলাটি দায়ের করেছিল, যেখানে চিকিৎসক কুণাল সাহা তাদের হয়ে সওয়াল করেন। মামলাকারী অভিযোগ করেন যে, ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পের মাধ্যমে পরিবার প্রতি ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বিমা দেওয়ার কথা বলা হলেও, বেশিরভাগ মানুষই এই সুবিধা পান না। বেসরকারি হাসপাতালগুলি রোগীদের ফিরিয়ে দিচ্ছে, এবং প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বাধা রয়েছে’।এদিন, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি শুনানি হয়। আদালত জানায়, ‘রাজ্য সরকার যে কোনও প্রকল্প জনগণের কল্যাণে চালু করতে পারে এবং ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্প সরকারি সিদ্ধান্তের অংশ’। প্রধান বিচারপতি জানান, “ধরুন, এই প্রকল্প নেই, তাহলে কী বলবেন? আদালত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। প্রয়োজনে বিধায়ক এবং সাংসদদের সঙ্গে কথা বলুন।” ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পটি ২০১৬ সালে চালু হয় এবং এর আওতায় পরিবারগুলির মহিলাদের নামে একটি করে কার্ড তৈরি করা হয়। এই কার্ডের মাধ্যমে সরকারী এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিমা সুবিধা পাওয়ার কথা রয়েছে । তবে প্রকল্প চালুর পর থেকেই বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে যে, বহু বেসরকারি হাসপাতাল এই কার্ড ফিরিয়ে দিয়েছে এবং এর সুবিধা পাওয়া যায় না। মুখ্যমন্ত্রীর একাধিক হুঁশিয়ারির পরেও পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্প অনেক মানুষের উপকার করেছে এবং তাদের চিকিৎসা খরচে বড় ধরনের সহায়তা প্রদান করেছে। রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্প চালু করা হয়েছিল এবং এর লক্ষ্য ছিল দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া। তবে প্রকল্পের বাস্তবায়ন এবং তার কার্যকারিতা নিয়ে অভিযোগ থাকলেও, আদালত এই বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করতে চায়নি।রাজ্যবাসীর উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প চালু করেছে রাজ্য সরকার। ওই প্রকল্পের বিরোধিতায় করে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন এক চিকিৎসক। বৃহস্পতিবার ওই মামলা খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট।প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ , যেহেতু স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প সম্পূর্ণ সরকারি সিদ্ধান্ত সরকারের নির্দিষ্ট পলিসি মেনে এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে। তার জন্য আদালত এই বিষয়ে কোনও হস্তক্ষেপ করবে না।উল্লেখ্য , স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প নিয়ে সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে। তারপরই এই প্রকল্পের যোক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন ওই চিকিৎসক।,উল্লেখ্য, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে গরমিল এবং বেনিয়ম ঠেকাতে ইতিমধ্যে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নিচ্ছে রাজ্য। স্বাস্থ্য দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, স্বাস্থ্যসাথী অ্যাপে ব্যবহার করা হবে ‘বিশেষ ট্যাগিং’ এবং এআই। কোনও রোগীর জন্য পরিষেবা কখন শুরু বা শেষ হচ্ছে সেই তথ্য যুক্ত হবে স্বাস্থ্যসাথীর মোবাইল অ্যাপে।এর জন্য ব্যবহার হবে ‘বিশেষ ট্যাগিং’। তারপর সেই তথ্য খতিয়ে দেখা হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে। তবে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে রোগী বা তার পরিবারের সরাসরি কোনও সংযোগ থাকবে না। রোগী পরিষেবার পর বেসরকারি হাসপাতালগুলি যখন সরকারের থেকে টাকা দাবি করবে তখন এই তথ্যগুলি খতিয়ে দেখা হবে।এতে দুর্নীতি অনেকটাই কমবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।