সুপ্রিম কোর্টে জোড়ালো শুনানি হলেও, চাকরি বাতিল মামলায় রায়দান ২৭ জানুয়ারি? 

মোল্লা জসিমউদ্দিন   , 

বুধবার প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলার শুনানি হয় সুপ্রিম কোর্টে। আদালতে সওয়াল করেছেন চাকরিচ্যুতদের আইনজীবীরা। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না, বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ গত ৭ জানুয়ারি এই মামলার শুনানি পিছিয়ে দিয়েছিল। শেষ বার গত ১৯ ডিসেম্বর চাকরি বাতিল মামলার শুনানি হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। ১৫ জানুয়ারির মধ্যে মামলার সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষকে হলফনামা জমা দিতে বলেছিল দেশের শীর্ষ আদালত।বুধবার আদালতে নবম-দশম এবং গ্রুপ ডি চাকরিচ্যুতদের আইনজীবী  জানান, -‘ আসল উত্তরপত্র বা ওএমআর শিট পাওয়া যায়নি এখনও। আসল ওএমআর শিট এখনও পাওয়া যায়নি। যে ওএমআর শিটগুলি উদ্ধার করা হয়েছিল, তা ফরেন্সিকের জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু তার রিপোর্ট আসার আগেই রায় ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত ওই রিপোর্ট আসেনি।” যোগ্যদের তরফে আইনজীবী বলেন, ”আসল ওএমআর শিট যদি না-ই থাকে, তবে কত ওএমআর শিটে কারচুপি করা হয়েছে, তা কী ভাবে ধরা হল?” এরপর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি  জানান, -‘আইটি আইন অনুযায়ী সিবিআইয়ের উদ্ধার করা ওএমআর নিয়ে সন্দেহ থাকার কথা নয়’। চাকরিচ্যুতদের আইনজীবী  আরও বলেন, ”হাইকোর্টে চাকরি বাতিলের আবেদন করেনি কেউ। মামলা করা হয়েছিল চাকরি পাওয়ার জন্য। ওয়েটিং প্যানেল নিয়ে মামলা করা হয়েছিল। কিন্তু আমার মক্কেলদের কেউ ওয়েটিং প্যানেলে ছিলেন না। ওই প্যানেলের মেয়াদ ২০১৯ সালে শেষ হয়েছে।”গ্রুপ সি চাকরিচ্যুতদের আইনজীবী বলেন , ”দুর্নীতি হয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে সঠিক ভাবে কোনও অনুসন্ধান হয়নি। কী ভাবে দুর্নীতি?কত জন তার সঙ্গে যুক্ত? তার অনুসন্ধান হয়নি। সঠিক তদন্ত হলে যোগ্য এবং অযোগ্য নিয়ে এত বিতর্ক হত না। সিবিআই হাইকোর্টের বিচারপতির নির্দেশে সাধারণ ভাবে তদন্ত করেছে। ‘ক্যাজ়ুয়াল’ তদন্ত হয়েছে। তদন্তে ত্রুটি রয়েছে।” আরেক আইনজীবী  বলেন, ”অনুসন্ধান ছাড়া আমাদের চাকরি বাতিল হয়ে গেল! আমাদের পরিবারের কী হবে? চার বছর ধরে আমরা চাকরি করছি। সিবিআই কী বলেছে, হাইকোর্ট তা বুঝতে পারেনি।” ওএমআর শিট আইন মেনে বাজেয়াপ্ত করা হয়নি বলেও দাবি করেছেন ওই আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জানান, -‘হাইকোর্ট বলেছে ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নানা ধরনের অনিয়ম করা হয়েছে। ফলে কারা যোগ্য, তা বাছাই করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। কত জনের উত্তরপত্রে কারচুপি করা হয়েছে, তা-ও বোঝা সম্ভব নয়’।গত শুনানিতে শীর্ষ আদালতের একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়ে রাজ্য, এসএসসি। সেদিন শীর্ষ আদালত মূলত যোগ্য এবং অযোগ্য চাকরিপ্রাপকদের বাছাই করার উপরে জোর দিয়েছিল। যোগ্য-অযোগ্য বাছাই করা না-গেলে পুরো প্যানেল বাতিল করতে হবে বলে জানিয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।এসএসসি  মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেছিল গতবছর  ২২ এপ্রিল। হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়াই বাতিল করে দেয়।এর ফলে চাকরি যায় ২৫,৭৫৩ জনের। যাঁরা মেয়াদ-উত্তীর্ণ প্যানেলে চাকরি পেয়েছিলেন, যাঁরা সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের বেতন ফেরত দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়। চার সপ্তাহের মধ্যে ১২ শতাংশ হারে সুদ-সহ বেতন ফেরত দিতে বলা হয় ওই চাকরিপ্রাপকদের। হাইকোর্টের সেই নির্দেশকেই চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য সরকার। শিক্ষা দফতর, এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পৃথক ভাবে মামলা করেছে। কি হবে এসএসসি-র প্রায় ২৬ হাজার চাকরিজীবীর ভবিষ্যৎ? পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল হবে? নাকি চিহ্নিতকরণ হবে বৈধ-অবৈধ চাকরী?  আগামী ২৭ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। 

Leave a Reply