‘সুপার নিউমেরারি’ পদ কেন তৈরি হলো?  রাজ্যের লিখিত বক্তব্য চাইলেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু

মোল্লা জসিমউদ্দিন , 

শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর এজলাসে উঠে সুপার নিউমেরারি পোস্ট  মামলা। ‘এই পদ তৈরি নিয়ে আদালত যে স্থগিতাদেশ দিয়েছে, তা তুলে নিতে হবে’। এমন দাবি জানানো হল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর বেঞ্চে। তবে কোনও মৌখিক প্রতিশ্রুতি বা হলফনামা চান না বিচারপতি। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন -‘লিখিত আবেদন করতে হবে রাজ্যকে’। রাজ্যের নেওয়া সিদ্ধান্তের উপর স্থগিতাদেশ দেয় হাইকোর্ট। ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পরে মামলা যায় সুপ্রিম কোর্টে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। এবার হাইকোর্টে রাজ্যের আর্জি, সুপার নিউমেরারি পোস্ট তৈরি করতে দিতে হবে। এদিন বিচারপতি বসুর বেঞ্চে রাজ্য জানায়, -‘সুপার নিউমেরারি পোস্ট নিয়ে মামলায় অন্তর্বতী স্থগিতাদেশ থাকায় নিয়োগ সম্ভব নয়। ২০২৩-এর ১৮ এপ্রিল হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা প্রত্যাহার করা হলে রাজ্য এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে’।বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু জানতে চান, -‘সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের কী বক্তব্য ছিল। আপনারা কি আজ এই মুহূর্তে চাকরি দিতে প্রস্তুত?কোনও মৌখিক আর্জি নয়। আপনারা আবেদন করুন। আমি এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব। শুধু জানতে চাইছি শীর্ষ আদালত কী কী ক্ষেত্রে বাধা দিয়েছে।”মূল মামলাকারীর আইনজীবী জানিয়েছেন, -‘সিবিআই তদন্তে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে’। দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে রাজ্যের কী বক্তব্য? সেটাও জানতে চান বিচারপতি। রাজ্য বলে, ‘আমরা হলফনামা জমা দিতে চাই।’ আগামী ৬ মে মামলার পরবর্তী শুনানি।শারীর শিক্ষা এবং কর্মশিক্ষার বিষয়ে অতিরিক্ত শূন্যপদ মামলায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজ্য সরকার। অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির কারণ ঠিক কী ছিল তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। কলকাতা হাইকোর্টও তাই এই ব্যাপারে পরিষ্কার উত্তর চায়। তাই রাজ্যের উদ্দেশে এমনই প্রশ্ন করেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। বিচারপতি জানান , -‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো সিবিআই তদন্ত হচ্ছে না, ঠিক আছে। কিন্তু অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির যে সিদ্ধান্ত, সেটা কাদের জন্য?’  তবে মৌখিক নয়, লিখিতভাবে জানাতে হবে বলেই নির্দেশ। এদিকে রাজ্য অবশ্য জানিয়েছে, শূন্যপদে নিয়োগের ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলে তাঁরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।প্রসঙ্গত, এসএসসি-র মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রায় ছ’হাজার অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্যের শিক্ষা দফতর। এই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় এবং রাজ্য মন্ত্রিসভারও অনুমোদন ছিল ওই সিদ্ধান্তে। তবে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, -‘ওই অতিরিক্ত শূন্যপদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত আইনসঙ্গত নয়। এমনকি প্রয়োজনে সেই সিদ্ধান্তে যুক্ত মন্ত্রিসভার সদস্যদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে সিবিআই’—এমন নির্দেশও দেয় আদালত।তবে সুপ্রিম কোর্টে এই মামলা গেলে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ কলকাতা হাইকোর্টের সিবিআই তদন্তের নির্দেশ খারিজ করে দেয়। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, -‘রাজ্য মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত নিয়ে সিবিআই তদন্ত চালানো যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত হানে। পাশাপাশি, অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি বেআইনি নয়। রাজ্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন সাপেক্ষে শিক্ষা দফতর বা এসএসসি এই ধরনের পদ সৃষ্টি করতেই পারে’।পাশাপাশি, এই অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করতে প্রয়োজনীয় পরামর্শও নেওয়া হয়েছিল। রাজ্যপালের অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল। এই মন্তব্যের ভিত্তিতে আদালত জানিয়ে দেয়, এই বিষয়ে তদন্তের কোনও প্রয়োজন নেই এবং মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করবে না শীর্ষ আদালত। 

Leave a Reply