সুন্দরবনের দুস্থদের পাশে মা-মেয়ে জুটি,
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী
প্রবল ঠান্ডায় একদল মানুষ যখন শীতের পোশাক পড়ে, গায়ে লেপ ঢাকা নিয়ে অথবা রুম হিটার জ্বালিয়ে নিজেদের উষ্ণ রাখার চেষ্টা করছে অপর একদল তখন খোলা বারান্দা বা আকাশের নীচে নামমাত্র পোশাক গায়ে দিয়ে প্রবল ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ ওদের শীতের পোশাক কেনার মত আর্থিক সামর্থ্য নাই। ওদের খাদ্য নাই, ঋতু উপযোগী পরনের পোশাক নাই, পানীয় জল নাই - নেই রাজ্যের বাসিন্দা হয়ে ওরা অবর্ণনীয় অবস্থায় দিন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতি শিশুদের। খাদ্য ও শীতের পোশাকের অভাবে তাদের মুখের অমলিন হাসিটা পর্যন্ত মলিন হয়ে গেছে। ওরা সুন্দরবনের কচুখালি এলাকার বাসিন্দা। যেটুকু ছিল সেটাও ঘন ঘন প্রাকৃতিক বিপর্যয় কেড়ে নিয়েছে। জীবিকা বলতে ডিঙি-নৌকা ঠেলে বিদ্যাধরী নদীতে চিংড়ি, চুনো প্রভৃতি মাছ ধরা এবং সন্ধ্যার সময় গ্লাসে করে 'হাঁড়িয়া' বিক্রি করা। যাদের কেউ নেই নিজেদের সীমিত সামর্থ্য নিয়ে বারবার তাদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে কলকাতার 'গ্রেস এণ্ড গ্লোরি অব গড' চ্যারিটেবল সোসাইটির রত্না-রেশমা জুটি। প্রচারের অন্তরালে থেকে সেবার জগতের মা-মেয়ের এই জুটি গত প্রায় ৩৫ বছর ধরে দুস্থ মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটলনা। শীতের কম্বল ও সোয়েটার নিয়ে প্রকৃত অর্থে কচুখালির সর্বহারা শতাধিক মানুষের পাশে এসে দাঁড়ালো এই জুটি ।
গত ১৮ ই ডিসেম্বর শতাধিক কম্বল ও সোয়েটার নিয়ে মাদার টেরিজার প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে আসা মা রত্না ‘মারিনা’ ঘোষ এবং মায়ের কাছে সেবামন্ত্রে দীক্ষিতা মেয়ে রেশমা ঘোষ হাজির হয়ে যান সুন্দরবনের কচুখালিতে। তারপর একে একে সেখানকার শতাধিক দুস্থ মানুষের হাতে তুলে দেন শীতের কম্বল ও সোয়েটার। শীতের এইসব সামগ্রী পেয়ে ওখানকার মানুষের মুখে ফুটে ওঠে হাসি।
এযুগের অত্যন্ত জনপ্রিয় চলচ্চিত্র, সিরিয়াল তথা যাত্রা শিল্পী এবং সুপরিচিত সঙ্গীত শিল্পী রেশমা দেবী তার আয়ের একটা বড় অংশ মানুষের সেবার কাজেই বিলিয়ে দেন। তিনি বললেন – 'মাদার' টেরিজার প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে না এলেও মায়ের কাছেই পেয়েছি সেবার মন্ত্র। আমাদের একটাই জীবন। সেটাই যদি মানুষের সেবায় কাজে লাগাতে না পারি তাহলে তো জীবনটাই বৃথা। সামান্য অর্থ নিয়ে সেবার কাজ শুরু করলেও যেভাবে সহৃদয় মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাতে আমরা সবার কাছে কৃতজ্ঞ।
রত্না দেবীর কণ্ঠেও শোনা গেল একই সুর। তিনি বললেন- আমাদের মূল লক্ষ্য সবার সহযোগিতায় আমাদের কর্মকাণ্ডকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া এবং যতটা সম্ভব বেশি সংখ্যক দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো। আমি বিশ্বাস করি সবার সহযোগিতায় একদিন আমাদের স্বপ্ন পূরণ হবে। এক্ষেত্রে আমার প্রেরণা বিশ্বজনীন মা ‘মাদার’ টেরিজা।