সিবিআইয়ের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে সংশয়ে খোদ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়!,
মোল্লা জসিমউদ্দিন, ১৪ জুন
শিক্ষা সংক্রান্ত মামলায় গত এক – দেড় বছরে যেভাবে একের পর এক নজিরবিহীন নির্দেশ দিয়েছেন বা দিচ্ছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।তা নিয়ে সরগরম সারা বাংলা।যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের কাছে তিনি যেন ‘দেবদূত’। এই বিচারপতির বেশিরভাগ মামলাতেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের উপর আস্থা রেখেছেন। এমনকি ঘন্টা খানেকের ব্যবধানে রাজ্যের হেভিওয়েট নেতা – মন্ত্রীদের প্রয়োজনে নিজেদের হেফাজতে রেখে জেরা করার ছাড়পত্র পর্যন্ত দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে সিবিআই তদন্তে ‘গতি’ দেখে হতাশা ব্যক্ত করলেন এদিন এজলাসে এক মামলার শুনানি পর্বে। তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এদিন এজলাসে কথোপকথনে এমনই হতাশা ব্যক্ত করেন বিচারপতি। বিচারপতি নাকি বলেছেন, -‘ সিবিআইয়ের থেকে এসআইটি বা সিট অনেক ভালো! এদিন এজলাসে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, -‘ সিবিআই তদন্ত করছে অনেক মামলা। তবে আজ পর্যন্ত সিবিআইয়ের তদন্তে অভিযুক্তের সাজা হয়েছে এমন কোন উদাহরণ নেই সাড়া দেশে। তাই চলতি মামলায় সিবিআই কতটা সফল হবে তা নিয়ে মতান্তর থাকবে’। এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে একের পর এক সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এই বিচারপতি । কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ই এ দিন এজলাসে বসে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান , -‘ সিবিআই-এর তদন্তের গতি দেখে তিনি ক্লান্ত। এমন কি, সিবিআই-এর বদলে বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করে তদন্তভার দিলে তা বেশি কার্যকরী হত কি না, এ নিয়ে সংশয় রয়েছে ‘। জানা গেছে, এসএসসি এবং প্রাইমারি টেট-এর নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে এখনও অবধি নয় থেকে দশটি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। এদের মধ্যে সিংহভাগ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্তে, একাংশ প্রাইমারি টেট-এ। গত সোমবার প্রাইমারি টেট-এর একটি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।যেখানে ২৬৯ জন কে বরখাস্ত করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। এসএসসি দুর্নীতি মামলায় সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এই মামলারও নির্দেশ দেন এই বিচারপতি । প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হয়ে এই মামলায় হাইকোর্টে সওয়াল করছেন বর্ষীয়ান আইনজীবী ও তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।মঙ্গলবার অন্য একটি মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে গিয়েছিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনই এজলাসে কল্যাণবাবুর সাথে কথোপকথন শুরু হয় বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এই কথোপকথনের মধ্যেই সিবিআই তদন্ত নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন বিচারপতি।আক্ষেপের সূরে বিচারপতি জানান , – ‘সিবিআই কিছুই করছে না। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে প্রথম এসএসসি দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলাম। ৬ মাস কেটে গেলেও সিবিআই এখনও দুর্নীতির রহস্যভেদ করতে পারেনি। আমি সিবিআই-এর কাজ দেখে ক্লান্ত হতাশ’। বিচারপতি আরও বলেন -‘ প্রায় ৭ মাস কেটে গেলেও সিবিআই কিছুই করতে পারেনি। এটা কী ধরনের তদন্ত? এই তদন্তে কোন উদ্দেশ্য সফল হবে? আমি সিবিআই নিয়ে বিশেষ নোট তৈরি করবো। । মনে করছি এর থেকে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা সিট কি ভালো ছিল? নিজেকেই প্রশ্ন করছি। সিবিআই-এর কোনও কর্মী নেই। কর্মী সঙ্কটে ভুগছে সিবিআই।’কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের প্রতি বিচারপতির এহেন অবস্থানে সহমত পোষণ করেন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও।