সিবিআইয়ের গরু পাচার মামলায় অনুব্রতের জামিন খারিজ ডিভিশন বেঞ্চের
বৈদূর্য ঘোষাল ,
চলতি সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চে সিবিআইয়ের গরু পাচার মামলায় অনুব্রতের জামিন বিষয়ক মামলার শুনানি পর্বে দুপক্ষের সওয়াল-জবাবে অনুব্রতের জামিন নিয়ে আশার আলো দেখা গিয়েছিল। তবে বুধবার ডিভিশন বেঞ্চ সেই আশার আলো তে জলাঞ্জলি দিয়ে জানিয়ে দিল – ‘ এই মুহূর্তে অনুব্রত মন্ডল কে জামিন দেওয়া সম্ভব নয় ‘। গত মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি অজয় কুমার গুপ্তর ডিভিশন বেঞ্চে অনুব্রত মামলার জামিন মামলার শুনানি ছিল। সেই মামলায় সিবিআইয়ের উদ্দেশে ডিভিশন বেঞ্চ প্রশ্ন করেছিল, -‘ গরু পাচার মামলায় বিএসএফ কর্তা সতীশ কুমার জামিন পেয়েছেন। মূলচক্রী এনামুল হকও জামিনে মুক্ত। তাহলে অনুব্রতকে আটকে রাখার কী প্রয়োজন?’ তবে সিবিআইয়ের যুক্তি ছিল, -‘ অনুব্রত মণ্ডল জামিন পেলে এই মামলায় সাক্ষীদের উপর প্রভাব তৈরি করতে পারেন’।এদিন দুই বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে, -‘ তদন্তের এই পর্যায়ে অনুব্রত মণ্ডলকে জামিন দেওয়া সম্ভব নয়। এখন যদি এহেন অভিযুক্তকে জামিন দেওয়া হয় তাহলে তদন্তে প্রভাব ফেলবে’। বুধবার নিয়ে ১৪৬ দিন জেলে রয়েছেন বীরভূমের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডল। কেষ্ট মণ্ডলের হয়ে সওয়াল করেছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা জাঁদরেল আইনজীবী কপিল সিব্বল। তিনি তাঁর সওয়ালে এনামুল ও সতীশ কুমারের উদাহরণ দিয়ে অনুব্রতর জামিনের আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু লাভ হল না। জামিনের আর্জি খারিজই হয়ে গেল হাইকোর্টে।তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করে দিল আদালত। এই মামলা ছাড়াও বগটুই মামলা এবং প্রভাবশালী তত্ত্ব নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে সাঁড়াশি চাপ বাড়িয়েছিল সিবিআই।। তাই আপাতত তাঁকে থাকতে হবে জেলেই। গত মঙ্গলবার অবশ্য সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে আবারও প্রশ্ন তুলেছিল আদালত। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে ছিল -‘ অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে গরু পাচারে সাহায্য করেছিলেন, কিন্তু সিবিআই এখন পর্যন্ত এমন কোনও তথ্য দিতেই পারছে না যাতে প্রমাণ করা যায় তিনি অভিযুক্ত’। এর পাশাপাশি সিবিআইকে বিচারপতির প্রশ্ন ছিল, -‘ অনুব্রত মণ্ডলের জামিনের বিরোধিতা কেন করছে তারা’। রাজনৈতিক কারণ কিনা জানতে চাওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ সেই সওয়াল-জবাবের পর অবশেষে সিবিআইয়ের পক্ষেই রায় গেল আদালতের। বলা হয়েছে, -‘তদন্ত যে পর্যায়ে রয়েছে তাতে এখনই অনুব্রত মণ্ডলকে জামিন দেওয়া যায় না’।সিবিআই অবশ্য বরাবর দাবি করে এসেছে যে অনুব্রত মণ্ডল প্রভাবশালী। তিনি জামিন পেলে তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে। গত মঙ্গলবার সিবিআই আদালতে স্পষ্ট দাবি করে যে, -‘ বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ‘রাজনৈতিক দৈত্য’।’ রাজ্যের অবশ্য যুক্তি ছিল, -‘ দুবরাজপুরের ঘটনা ছাড়া অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। সিবিআই কোনও প্রমাণ ছাড়াই তাঁর জামিনের বিরোধিতা করছে’। কিন্তু সেই দাবিতে আদতে কোনও লাভ হল না। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআইয়ের গরু পাচার মামলায় অনুব্রতের জামিন খারিজ করে দিল।আগামী ৯ জানুয়ারি দিল্লি হাইকোর্টে অনুব্রত কে দিল্লিতে জেরা করা হবে কিনা? তা নিয়ে ওইদিন শুনানি রয়েছে।