খায়রুল আনাম,

বীরভূম :   বেশ কিছুদিন ধরেই বীরভূমের সিউড়ী-২ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে গোষ্ঠী  বিভাজন যে ভাবে বাড়ছিলো, তাতে দু’টি গোষ্ঠীর  মধ্যে যে কোনও সময় বড় ধরনের সংঘর্ষ  বাধতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। সিউড়ী-২ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়টি রয়েছে সিউড়ী সংলগ্ন পুরন্দরপুরে। পুরন্দরপুরের  উপর দিয়ে গিয়েছে বোলপুর-সিউড়ী, লাভপুর-কীর্ণাহার সড়ক। অন্য জেলার সঙ্গেও এইসব সড়কের সরাসরি সংযোগ থাকায়, পুরন্দরপুরকে একটা ব্যস্ততম এলাকা হিসেবে দেখা হয়। এখানেই রয়েছে বিরাট মাপের দ্বিতল সিউড়ী-২ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয় বাসুদেব রায় ভবন। এখানেই নিয়মিত বসে দলীয় কাজকর্ম  দেখাশোনা করতেন  ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি নুরুল  ইসলাম। এই দলীয় কার্যালয়ের তালার একটি চাবি থাকতো নুরুল ইসলামের কাছে আর অপর একটি চাবি থাকতো দলেরই এক কর্মীর কাছে। কিছুদিন আগে হঠাৎই  দেখা যায়, সিউড়ী-২ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়ে নতুন তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। যারফলে নুরুল ইসলাম আর দলীয় কার্যালয়ে ঢুকতে পারছিলেন না।  নুরুল ইসলাম আগে জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু অনুব্রত মণ্ডল গোরুপাচার মামলায় সিবিআইয়ের  হাতে গ্রেপ্তার হয়ে দিল্লির তিহাড়  জেলে যাওয়ার পর  থেকেই দুই নেতার মধ্যে দূরত্ব তৈরী হয়ে যায়। অনুব্রত মণ্ডল জামিনে তিহাড় জেল থেকে মুক্তি পেয়ে  জেলায় এসে রাজনৈতিক কাজকর্ম  শুরু করলে,  এই দুই নেতাকে একসঙ্গে দেখা গেলেও, নিজেদের ভিতরের দূরত্ব আর না কমে তা বেড়ে যায় বলে বলা হয়। আর তারই জেরে পুরন্দরপুরে দলীয় কার্যালয়ে তালা পড়ে বলে মনে করা হয়। নুরুল ইসলাম কারও নাম উচ্চারণ না করেও, বোলপুরের বাসিন্দা অনুব্রত মণ্ডলের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলে জানিয়ে দেন যে, বোলপুরের  এক নেতার মদতেই পুরন্দরপুরে দলীয় কার্যালয়ে  তালা বুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি সময় মতোই এ নিয়ে প্রয়োজনীয়  সিদ্ধান্ত  নেবেন।

    আর তারপরই দেখা যায়, শনিবার  ২৬ এপ্রিল সকালের দিকে নুরুল ইসলাম পুরন্দরপুরে দলীয় কার্যালয়ের তালা খুলতে গেলে তাঁর অনুগামীদের সাথে অনুব্রত মণ্ডল গোষ্ঠীর ব্লক কার্যকরী সভাপতি অশ্বিনী মণ্ডল গোষ্ঠীর লোকজনদের  সংঘর্য বেধে যায়। তৃণমূল কংগ্রেসের  এক গোষ্ঠীর লোকজনেরা অপর গোষ্ঠীর লোকজনদের উপরে লাঠি, ইঁট-পাটকেল, বাঁশ নিয়ে  আক্রমণ শুরু করলে গোটা এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। খবর পেয়ে সিউড়ী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে সংঘর্ষ  থামাতে গেলে সংঘর্ষ  আরও জোরালো রূপ নেয়। পরে সিউড়ী  থানার আইসি সঞ্চয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়  বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সংঘর্ষ  থামাতে গেলে  তিনিও বাধার মুখে পড়েন।  পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ  করে উভয় গোষ্ঠীর  লোকজনদেরই এলাকা ছাড়া করে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে  আনতে পারলেও, গোটা এলাকা উত্তপ্ত হয়ে থাকায় এলাকায় পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুই পক্ষের ব্যাপক এই সংঘর্ষে  আহতদের  চিকিৎসার জন্য  নিয়ে যাওয়া  হয় হাসপাতালে। এক ব্যক্তির কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র  উদ্ধার হওয়ায় ওই দুষ্কৃতিকে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ  আটক করেছে পুলিশ। মোট আটজনকে এই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকায় গোটা এলাকায় পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।  এলাকার পরিস্থিতি  যাতে কোনওভাবেই  নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়, সে জন্য বিভিন্ন মোড়ে সশস্ত্র  পুলিশবাহিনি  মোতায়েন করা হয়েছে।

Leave a Reply