সার্বিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য সমাজের সর্ব স্তরের মানুষের ঘুমের সমতার বার্তা ওয়ার্ল্ড স্লিপ সোসাইটি্র
৯ই মার্চ ২০২৪, কলকাতাঃ দৈনন্দিন জীবনের তাড়াহুড়োর মধ্যে প্রায়শই উপেক্ষা করা হয় ঘুম যা জীবনীশক্তির ভিত্তি হিসাবে কাজ করে ও মানব অস্তিত্বের প্রতিটি দিককে প্রভাবিত করে। তবে, আর্থ-সামাজিক কারণ, ভৌগলিক বৈচিত্র্য এবং সাংস্কৃতিক রীতিনীতির মধ্যে অন্তর্নিহিত বৈষম্যগুলির জন্য সমাজের সর্ব স্তরের মানুষের মধ্যে ঘুমের সমতা পাওয়া দুষ্কর। ২০২৪ সালের বিশ্ব ঘুম দিবস উপলক্ষে ক্যালকাটা স্লিপ সোসাইটি ও ওয়ার্ল্ড স্লিপ সোসাইটির উদ্যোগে কলকাতায় একটি বিশেষ অধিবেশন আয়োজিত হয়ে গেল। ‘স্লিপ ইক্যুইটি ফর গ্লোবাল হেলথ’- এই বার্তা জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিশ্ব ঘুম দিবসের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী, ওয়ার্ল্ড স্লিপ সোসাইটি ও ক্যালকাটা স্লিপ সোসাইটির সম্পাদক ডঃ সৌরভ দাস এবং ক্যালকাটা স্লিপ সোসাইটির প্রেসিডেণ্ট ডাঃ উত্তম আগরওয়াল এই বিশেষ অধিবেশনের আয়োজন করেছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে ঘুমের প্রয়োজনীয়তা ও ঘুমের অভাব জনিত অসুস্থতার বিষয় সচেতনতা বৃদ্ধিই এই মঞ্চের অন্যতম উদ্দেশ্য।
ঘুমের বৈষম্যের প্রভাবগুলি শারীরিক স্বাস্থ্যের বাইরেও মানসিক সুস্থতা এবং সামগ্রিক জীবনের মানের মধ্যেও প্রভাব বিস্তার করে। কনফারেন্সে উপস্থিতদের সম্বধোন করে অরেঞ্জ স্লিপ অ্যাপনিয়া ক্লিনিক ও বেল ভিউ ক্লিনিকের স্লিপ অ্যাপনিয়া ও ইএনটি সার্জন, ডাঃ উত্তম আগরওয়াল জানান, ‘যেমন উপযুক্ত ডায়েট ও নিয়মিত এক্সারসাইজ করা সুস্থ থাকার জন্য আবশ্যক তেমনি পর্যাপ্ত ঘুমও মানুষের সুস্থ থাকার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্ত, আমরা এই ঘুমের বিষয়টা খুবই অবহেলা করি। আমরা মনে করি ঘুমের পরিমাণ একটু কম করে সেই সময়টাতে অন্য কোন কাজ সম্পন্ন করতে পারি। কিন্তু, বর্তমানে বিভিন্ন রিসার্চে দেখা গেছে যে পর্যাপ্ত ও পরিমাণমত ঘুম না হলে নানা ধরণের শারীরিক অসুস্থতা দেখা যায়। এর মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য হল অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া বা OSA – ঘুমের সময় বারবার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং আবার শুরু হওয়ার একটি রোগ। এটি একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা যা দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। OSA-এর জন্য দিনের বেলায় ক্লান্তি ও তন্দ্রা অনুভব করা, মাথাব্যথা, মনোযোগের অভাব, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি, ডায়াবেটিসের সমস্যাও দেখা যায়। এমনকি, ছোট বাচ্ছাদেরও অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে পারে। মা বা বাড়ির সবাই ভাবেন বাচ্ছা নাক ডাকছে মানে ভালো ঘুমোচ্ছে তা কিন্তু নয়। এই সব ক্ষেত্রে বাচ্ছাকে নিয়ে কোন অভিজ্ঞ ইএনটি চিকিৎসকের কাছন্নিয়ে গেলে তিনি সমস্যার কারণ বুঝে তা উপসমের ব্যবস্থা করেন। এ ক্ষেত্রে বাড়ির লোকের সচেতনটা সব থেকে বেশি দরকার; আর সেই উদ্দ্যেশেই বেশ কয়েক বছর ধরে ওয়ার্ল্ড স্লিপ সোসাইটির পক্ষ থেকে এই সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করে চলেছেন’।
‘দীর্ঘ দিন ধরে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ক্যানসার সহ বেশ কিছু রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। বর্তমানে, সমীক্ষাতে দেখা গেছে যে, দীর্ঘমেয়াদি অপর্যাপ্ত ঘুমের ফলে শরীরে ইমিউনিটিও কমে যায় এবং ক্যানসার, ডায়াবেটিস এমনকি হৃদ রোগের মত অসুখে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। সম্প্রতি, ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাতে দেখা যায় যে নিয়মিত ৬ ঘণ্টার কম ঘুম হলে সব ধরণের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৩০ – ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়’ যোগ করেন ডাঃ সৌরভ দাস, সোমনোস স্লিপ ক্লিনিক ও মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, ওয়ার্ল্ড স্লিপ সোসাইটির বিশ্ব ঘুম দিবসের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী, এবং ক্যালকাটা স্লিপ সোসাইটির সম্পাদক।
এই কারণেই ওয়ার্ল্ড স্লিপ সোসাইটি, ক্যালকাটা স্লিপ সোসাইটি এক যোগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঘুমের প্রয়োজনীয়তার বার্তা জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দিতে উদ্যোগী।