সাড়ে ১৪ মাস পর রেশন দুর্নীতি মামলায় জামিন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের

মোল্লা জসিমউদ্দিন , 

বুধবার সিটি সেশন কোর্টে রেশন দুর্নীতি মামলায় জামিন পেলেন  রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এদিন  বিশেষ ইডি এজলাস  ৫০ লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত বন্ড এবং ২৫ হাজার টাকার দুটি সিকিউরিটি বন্ডে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীকে শর্তাধীন জামিন দিল। প্রসঙ্গত , রেশন দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত  ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। প্রায় সাড়ে ১৪ মাস জেল হেফাজতে থাকার পর মুক্তি পেতে চলেছেন তিনি।ইডির দায়ের করা মামলা ছাড়া অন্য কোনও মামলা তাঁর বিরুদ্ধে না থাকায় জামিন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই প্রায় সাড়ে ১৪ মাস পর জেলমুক্তি হবে জ্যোতিপ্রিয়র।রেশন দুর্নীতি মামলায় একের পর এক অভিযুক্ত বাকিবুর রহমান, শঙ্কর আঢ্যরা আগেই জামিন পেয়েছেন। একা জ্যোতিপ্রিয়ই ছিলেন জেলে। আদালতে জ্যোতিপ্রিয়র আইনজীবী বাকিবুর-শঙ্করের জামিনকে হাতিয়ার করে তাঁর মক্কেলের মুক্তির পক্ষে সওয়াল করেছেন।  আইনজীবী সওয়াল-জবাবে বলেছেন, -‘জ্যোতিপ্রিয় অসুস্থ। জেলের বাইরে চিকিৎসার প্রয়োজন’। উলটোদিকে জামিন আটকাতে মরিয়া ইডির দাবি ছিল, -‘জ্যোতিপ্রিয় দুর্নীতির গঙ্গাসাগর। কিং মেকার। তিনি জেলের বাইরে বেরলে তদন্তকে প্রভাবিত করতে পারেন’। কিন্তু এদিন বিচারকের সামনে ইডির এই যুক্তি ধোপে টেকেনি।বিশেষ ইডি আদালতের বিচারকের পর্যবেক্ষণ, -‘তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু তার জন্য রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীকে হেফাজতে রাখার প্রয়োজন নেই। এখনই মামলার ট্রায়াল শুরুর সম্ভাবনাও নেই। তাই জ্যোতিপ্রিয়কে জামিন দিতে সমস্যা নেই। তবে এই জামিন শর্তসাপেক্ষ। জেলমুক্তির পরও কয়েকটি বিষয় তাঁকে মেনে চলতে হবে’। শর্তগুলো হলো -‘তদন্তকারী আধিকারিকদের সহযোগিতা করতে হবে।বিচারপ্রক্রিয়ায় নিয়মিত উপস্থিত থাকতে হবে।সাক্ষীদের প্রভাবিত করা চলবে না।পাসপোর্ট-ভিসা জমা রাখতে হবে।আদালতের অনুমতি ছাড়া রাজ্যের বাইরে যেতে পারবেন না’।এই মামলায় অন্য অভিযুক্তরা জামিন পেয়েছেন। তাই তাঁকেও জামিন দেওয়া হল।”রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের জামিন আটকাতে মরিয়া ছিল ইডি। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক যে রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে অন্যতম প্রধান চক্রী, তা বোঝাতে বিশেষ সিবিআই আদালতে প্রাক্তন মন্ত্রীকে দুর্নীতির গঙ্গাসাগর বলেও দাবি করেছিল কেন্দ্রীয় আর্থিক তদন্তকারী সংস্থা ইডি। রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে জ্যোতিপ্রিয়র ভূমিকা বোঝাতে গিয়ে ইডি-র আইনজীবী বলেছিলেন, ‘গঙ্গা, ভাগীরথী ও অন‍্য শাখা প্রশাখা যেমন গঙ্গাসাগরে এসে মিশেছে, এই দুর্নীতির সমস্ত এসে মিশেছে জ্যোতিপ্রিয়র কাছে। চাল বিক্রি থেকে গম বিক্রি, রেশন দুর্নীতির টাকা এসেছে তাঁর কাছে। টাকা এসেছে তাঁরই পরিচালিত তিন সংস্থায়। ওই তিন সংস্থায় তাঁরই লোক বসে। অ‍্যাকাউন্টও খোলা হয়েছে তাঁরই পরিচিত লোকেদের নিয়ে।”ইডি-র পক্ষ থেকে আরও অভিযোগ করা হয়েছিল, -‘জ্যোতিপ্রিয়ই এই গোটা দুর্নীতির রিংমাস্টার ছিলেন। আড়ালে থেকেই গোটাটা পরিচালনা করেছেন তিনি’। যে সময় এই রেশন দুর্নীতি হয়েছে, তখন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক নিজেও ক্ষমতাশালী ছিলেন বলে আদালতে সওয়াল করেন ইডি-র আইনজীবী।উল্লেখ্য,  রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে ইতিমধ্যেই অন্যতম মূল অভিযুক্ত বাকিবুর রহমান, বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য সহ বেশ কয়েকজন জামিন পেয়েছেন। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে অনেক দিন ধরেই আদালত থেকে জামিন পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও। যদিও দীর্ঘদিন প্রাক্তন মন্ত্রীর সেই চেষ্টা সফল হয়নি। কিন্তু বুধবার সিটি সেশন কোর্টে ইডি এজলাসে  অবশেষে সেই জামিন পেয়েই গেলেন জ্যোতিপ্রিয়। 

Leave a Reply