সাইবার ক্রাইম নিয়ে ডিজির রিপোর্টে অসন্তুষ্ট হাইকোর্ট, ফের বিস্তারিত তথ্য তলব ডিভিশন বেঞ্চের
মোল্লা জসিমউদ্দিন ,
সাইবার ক্রাইম নিয়ে উদ্বিগ্ন কলকাতা হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার পর্নোগ্রাফি ছড়ানোর মামলায় কড়া অবস্থান নিল কলকাতা হাইকোর্ট । এই মামলায় রাজ্য পুলিশের গাইড লাইন কি? তা জানতে চাইল আদালত। ফের রাজ্য পুলিশের ডিজির কাছে রিপোর্ট তলব করেছে ডিভিশন বেঞ্চ ।রাজ্য পুলিশের সাইবার অপরাধ দমন ব্যবস্থা এবং পরিকাঠামো নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের উদ্বেগ বাড়ছে। সম্প্রতি, পর্নোগ্রাফি ছড়ানোর অভিযোগে একটি মামলা নিয়েই কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য পুলিশের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং তদন্তের গতি সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করেছে।বিশেষ করে, নদিয়ার একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত রাজ্য পুলিশের সাইবার অপরাধ দমন থানা ও কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে। আদালত গত সপ্তাহে বৃহস্পতিবার রাজ্য পুলিশের ডিজির কাছে একটি রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়, যেখানে সাইবার অপরাধ দমনের জন্য ব্যবহৃত থানা ও কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।এদিন সেই রিপোর্ট জমা পড়েছে। তবে তাতে সন্তুষ্ট নয় আদালত। আদালত সুত্রে প্রকাশ, নদীয়ার এক মহিলার নগ্ন ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মামলাকারীর অভিযোগ – ‘কৃষ্ণনগর সাইবার অপরাধ দমন থানা তদন্ত করতে গিয়ে সাইবার অপরাধের কোনও ধারা প্রয়োগ করেনি, যদিও অন্য একাধিক ধারা প্রয়োগ করা হয়েছিল। এমনকি গ্রেপ্তারের পর অভিযুক্ত জামিন পেয়ে যায়’। যা সাইবার অপরাধ দমনে পুলিশের কার্যক্রমের ব্যর্থতা হিসেবে দেখানো হয়েছে।এই মামলা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট জান্য যে,-‘ কৃষ্ণনগর সাইবার অপরাধ দমন থানার অফিসারদের দুর্বল তদন্ত এবং অনভিজ্ঞতার কারণে রাজ্য পুলিশের সাইবার অপরাধ দমন কাঠামোর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে’। আদালত স্পষ্টভাবে বলেছে, ‘কৃষ্ণনগর সাইবার থানার কার্যক্রম আর পাঁচটা সাধারণ থানার মতোই রয়েছে । সাইবার অপরাধ দমন করতে বিশেষ পরিকাঠামো ও দক্ষ কর্মকর্তাদের প্রয়োজন, যা এই থানার ক্ষেত্রে ছিল না।’ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্থের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে , “রাজ্য পুলিশের সাইবার থানা নাম হলেও কার্যক্রম সেই অনুযায়ী নয়। ‘সাইবার’ শব্দটি ব্যবহার করা হলেও, কাজের ক্ষেত্রে এই থানাগুলির কোনও আধুনিকীকরণ দেখা যাচ্ছে না।” ডিভিশন বেঞ্চ আরও জানিয়েছে , “যুগের পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। আজকের দিনেও যদি পুলিশ লাঠির মাধ্যমে কাজ করতে চায়, তবে সাইবার অপরাধ দমন সম্ভব নয়।” বিচারপতির মন্তব্যে উঠে আসে রাজ্য পুলিশের আধুনিকীকরণের প্রয়োজনীয়তা, বিশেষ করে সাইবার অপরাধ দমন বিষয় ।এছাড়া, আদালত সাইবার অপরাধ দমন কার্যক্রমের পরিপূর্ণ আধুনিকীকরণের দিকে সরকারের মনোযোগ আকর্ষণ করে বলেছে, “সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গেলে কেবল সাইবার থানার নাম বদলানো যথেষ্ট নয়। সঠিক পরিকাঠামো, আধুনিক প্রযুক্তি এবং প্রশিক্ষিত অফিসারদের প্রয়োজন।” এর পরেই রাজ্য পুলিশের ডিজির কাছে সাইবার অপরাধ দমনে ব্যবহৃত প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া, থানার অবস্থা এবং পরিকাঠামো সংক্রান্ত রিপোর্ট তলব করা হয়।রাজ্য পুলিশের ডিজিকে এই রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়ার পর, আদালত আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে-“সাইবার অপরাধ দমন থানা কিভাবে কাজ করে, কীভাবে অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, এবং সেখানে প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো কেমন?” এটি একটি অত্যন্ত জরুরি বিষয়, কারণ সাইবার অপরাধের জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত অফিসারদের প্রয়োজন। এই প্রশিক্ষণ সরবরাহ করার জন্য রাজ্য পুলিশকে আরও আধুনিক ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।রাজ্য পুলিশের ডিজি তাদের রিপোর্টে সাইবার অপরাধ দমন থানাগুলির কার্যক্রমের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন এবং জানিয়েছেন, থানাগুলির অফিসাররা সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। তবে, আদালত স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, প্রশিক্ষণের গতি আরও ত্বরান্বিত করা উচিত এবং থানাগুলির পরিকাঠামো আধুনিকীকরণ নিশ্চিত করতে হবে। কলকাতা হাইকোর্টের মন্তব্য এবং নির্দেশনায় একটি স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে–‘ রাজ্য পুলিশের সাইবার অপরাধ দমন কার্যক্রমে এখনও অনেক ক্ষেত্রেই দুর্বলতা রয়েছে। সাইবার অপরাধের মতো সুনির্দিষ্ট ও দ্রুত পরিবর্তনশীল অপরাধের মোকাবিলা করার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে আধুনিক প্রযুক্তি, সঠিক প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নিশ্চিত করতে হবে’।রাজ্য পুলিশের কাছে সাইবার অপরাধ দমন থানা ও তদন্তের ক্ষেত্রে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আরও সঠিক নির্দেশনা প্রয়োজন। পুলিশের কার্যক্রমের মান উন্নত করা না হলে, এই ধরনের অপরাধের বিস্তার রোধ করা সম্ভব হবে না। এর পাশাপাশি, আদালত রাজ্য সরকারের কাছে আরও স্পষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে, যাতে সাইবার অপরাধের সাথে যুক্ত সমস্ত কর্মকর্তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং সাইবার অপরাধ দমনের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি মজুদ করা হয়। বৃহস্পতিবার দাখিল রিপোর্টে সাইবার ক্রাইম থানা গুলির দায়িত্ব প্রাপ্ত অফিসারদের প্রশিক্ষণ কি ভাবে দেওয়া হচ্ছে সেই সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়। রিপোর্ট দেখলেও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ এবার নদিয়ার মুরুটিয়ার থানার যে মামলায় কৃষ্ণনগর সাইবার থানার তদন্তের ত্রুটিতে ডিজি র রিপোর্ট তলব, সেই মামলার প্রসঙ্গ তোলেন বিচারপতি।এই মামলার পর্যবেক্ষণে বিচারপতি বাগচী বলেন, -‘ সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হলে সেখানে তদন্তে কি কি তথ্য উঠে এসেছে আর সেই তথ্যের ভিত্তিতে তদন্তকারী কোন পথে এগিয়েছেন সেই তথ্য দেখতে চায় হাইকোর্ট’। একইসঙ্গে গোটা রাজ্যে এমন পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত কত মামলা আছে, আদালত তারও রিপোর্ট তলব করেছে। এক সপ্তাহ পরে ফের রিপোর্ট দিতে হবে রাজ্য পুলিশের ডিজি কে।