সম্প্রীতির গাজন বিউরে
ফকরুদ্দিন আলি আমেদ : বাঁকুড়ার পাত্রসায়েরের বিউর শিব তলায় সিদ্ধেশ্বর বাবার গাজন উৎসব সম্পন্ন হল। এ উপলক্ষ্যে বসেছিল মেলা। ভক্ত তথা সন্ন্যাসী এ বছর প্রায় পাঁচশত। গাজন কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা শান্তি গোপাল গাঙ্গুলী জানালেন – বিশুদ্ধ পঞ্জিকা ও শাস্ত্রমতে গামার গাছের ডাল কেটে গাজন উৎসব এর শুভ সূচনা হয়। গাজন শুরু হয় অক্ষয় তৃতীয়ার দিন, শেষ হয় বুদ্ধ পূর্ণিমায়। মূলত এই গাজন উৎসব বিউর সহ আশপাশের প্রায় বারো টি গ্রামের। বিভিন্ন গ্রাম থেকে শ’ য়ে শ’ য়ে মানুষ এই গাজনে ভক্ত তথা সন্ন্যাসী হন। অন্যতম আকর্ষণ বাবা সিদ্ধেশ্বর এর হোম। সেই হোম এর জন্য যে ঘিয়ের প্রয়োজন হয় সেটা মল্লিক পাড়ার এক মুসলিম পরিবার হতে আসে। এ এক চিরাচরিত প্রথা।
গাজন কমিটির অন্যতম দুই কর্মকর্তা বরুণ সেন ও বিকাশ যশ জানান – এখানে হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্ক বরাবরের মধুর ও মজবুত। গাজন উৎসব পরিচালনায় যে কমিটি তৈরি হয় সেখানেও অনেক মুসলিম আছেন। মুসলিম পরিবারের পাঠানো ফল খেয়ে সন্ন্যাসীরা তাদের উপবাস ভঙ্গ করেন। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ প্রথা।
প্রাচীন রীতি মেনে লোহার পেরেক মারা কাঠের পাটাতনের উপর শুয়ে থাকে এক ভক্ত আর এক শ্রেণীর ভক্ত তথা সন্ন্যাসীরা জীভে বান ফোঁড়ে। উল্লেখ্য সেই বান নিয়ে তেলুড় গ্রামের পীরের থানের পাশ দিয়েই আসতে হবে সন্ন্যাসী দের কে। এ ও এক চিরাচরিত প্রথা।
তেলুড় একটি মুসলিম অধ্যুষিত গ্রাম, যার ৯৭ শতাংশই মুসলিম। এমন কোন পরিবার নেই যে বাড়িতে কুটুম আত্মীয়রা আসে না, জানালেন তেলুড় গ্রামের সেখ সফিউর রহমান বল্টু শেখে রা। গোটা গ্রাম মেতে থাকে এই গাজনে।
ইতিহাস থেকে জানা যায় একসময় এই এলাকা ছিল বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজাদের অধীন। তখন ছিল ঘন জঙ্গলে ঢাকা। সেই সময়ে তৎকালীন বিষ্ণুপুরের রাজা এই সিদ্ধেশ্বর মন্দির প্রতিষ্ঠা করে গাজন উৎসবের সূচনা করেন। পরবর্তীতে সম্প্রীতি বজায় রাখতে মল্ল রাজা চৈতন্য সিংহ এক মুসলিম পরিবার কে জমি ও পুকুর দান করেন। সেই পরিবার থেকেই এখনো ঘি আসে সিদ্ধেশ্বর বাবার হোম যজ্ঞে। যে রেওয়াজ এখনও চলে আসছে।