— ভাগ্যশ্রী তালুকদার–
মনুষ্যত্বের ছায়া-কাঠামোটা ক্রমশই ঝাপসা হয়ে আসছে।শৈশবের খেলনাগাড়িতে কদর্য তালিবানি উল্লাস দেখে সারা গা শিরশির করে উঠল।বন্দুক এবং শৈশব ওরা আলাদা করতে জানে না। নেটমাধ্যমে প্রাপ্ত প্রতিটি ভিডিওতে ওদের আরণ্যক বর্বরতায় একটা ঘৃণ্য আত্মবিশ্বাস রয়েছে। ওরা জানে রক্তবীজের মতন ওরা ক্রমশ ছেয়ে যাবে সভ্যতার জীর্ণ মুখোশের কোষে কোষে।
ওরা কি মাত্রাছাড়া রকমের কল্পনাবিলাসী? আমার কিন্তু তা মনে হয় না। সমাজের একদল শিক্ষিত মানুষের মৌন সমর্থন আমার আতঙ্ককের চারাকে ক্রমাগত সারে-জলে সাজিয়ে তুলছে। শীতের দুপুরে ছাদের রোদ্দুরে হয়ত তাদেরও মন চুপি চুপি আশেপাশের সমস্ত মেয়েগুলোকে কমলালেবুর মতন খোসাবন্দী করতে চেয়েছিল! অথচ সেইদিনও একটা সদ্য খোলস ঝরানো প্রজাপতি, প্রকৃতির থেকে তার প্রাপ্য রংটুকু ছিনিয়ে নিয়েছিল!
এত গুলি বারুদ বোঝাই করা এই পশুশক্তি তবু ভয় পায়। ভয় পায় নারীকে, ভয় পায় একটা খোলস বিহীন সম্পূর্ণ মানবিক চেহারাকে। তাই তো তাকে দাঁড়িতে ঢেকে, কাপড়ে মুড়ে ফেলতে চায় বারবার। সেখানে মেয়েদের নখবিহীন কমনীয় হাতদুটো দস্তানায় ঢেকে রাখাই দস্তুর। মেয়েলি জুতোর শব্দে ওরা চমকে উঠে বন্দুক হাতড়ায়। কী ভয়ানক এই মেয়ে জাতটা!
আজও শুনলাম সমস্ত ফতোয়া অগ্রাহ্য করে পথে নেমেছেন কিছু মহিলারা। এই দৃঢ়তার সামনে গুটিয়ে গেল আমার আপনার চেনা ওই লোকটাও, যে মনে মনে তালিবানি শাসনকে শক্তি জুগিয়েছে।
আমার ভাবতে ভালো লাগছে আফগানিস্তানের কোন এক অচেনা গাঁয়ের লাজুক মেয়েটা হঠাৎ ঝলসে উঠল বিদ্যুতের মতন। তারপর অজস্র নগ্ন পায়ের প্রচণ্ড গর্জনে স্তব্ধ হয়ে গেল সমস্ত বন্দুক-বিলাস।