লালনের মৃত্যুতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তদন্ত শুরু করেছে, হাইকোর্ট কে জানালো কেন্দ্র
মুকুল বিশ্বাস ,
সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে বীরভূমের বগটুই কান্ডে মূল অভিযুক্ত লালন সেখের রহস্য মৃত্যু সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলে। এদিন ডিভিশন বেঞ্চ রায়দান স্থগিত রেখেছে।
আত্মহত্যা? না খুন? নাকি অন্য কোনও ভাবে মৃত্যু? সিবিআই হেফাজতে বগটুই কাণ্ডের অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত লালন সেখের মৃত্যু নিয়ে এই সব প্রশ্ন ঘুরছে বিভিন্ন মহলে । রাজ্য রাজনীতিতে এই রহস্যমৃত্যু নিয়ে চলছে তীব্র চাপানউতোর । বেশ কয়েক টি মামলাও হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে।লালনের মৃত্যুর তদন্ত করুক ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন’, এমন দাবি আগেই উঠেছিল। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে লালন মামলার শুনানি চলার সময় কেন্দ্রের আইনজীবী এজলাসে জানালেন,-‘ রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত শুরু করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন’। তাইই সিআইডির তদন্তের আর দরকার নেই বলেই দাবি করেছেন তিনি।এদিন কলকাতা হাইকোর্টে লালন সেখের মৃত্যু নিয়ে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলার শুনানি চলে। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানি চলে । শুনানি চলাকালীন কেন্দ্রের আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদী জানান, -‘ সিবিআই হেফাজতে কীভাবে লালন সেখের মৃত্যু হল সে নিয়ে তদন্ত করছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি মহেশ কুমার মিত্তালের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। কাজেই সিআইডির তদন্ত প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার দরকার নেই’।তিনি আরও জানান -‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী, হেফাজতে থাকা বন্দির অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে তার বিচারবিভাগীয় তদন্তের প্রয়োজন। সেই জন্য ময়নাতদন্তের ভিডিওগ্রাফিও দরকার হয়। হেফাজতে থাকা বন্দিকে পিটিয়ে মারা হয়েছে, নাকি অন্য উপায় মারা হয়েছে না তিনি নিজেই আত্মহত্যা করেছেন, তা জানার জন্যই তদন্ত প্রক্রিয়া চালানোর নির্দেশিকা রয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের। বগটুই কাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত লালনের মৃত্যুর পরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশ মেনেই তদন্ত করার দাবি উঠেছিল’।অপরদিকে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশ অনুযায়ী লালনের মৃত্যুর তদন্ত করছে সিআইডি। সেখানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নাক গলাক, সেটা চাইছেনা রাজ্য। এদিন ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্যের দাবি, -‘ হাইকোর্টের নজরদারিতে তদন্ত হলে কোনও আপত্তি নেই। সেক্ষেত্রে নতুন করে বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি তৈরি করার কোনও প্রয়োজন নেই। ডিভিশন বেঞ্চ চাইলে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে রিপোর্ট পেশ করা হবে’।জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অতি সক্রিয়তা নিয়ে আপত্তিও তোলা হয়েছে রাজ্যের তরফে।কেন্দ্রের আইনজীবীর দাবি, -‘ রাজ্য সরকার বা সিআইডির একটাই উদ্দেশ্য, লালনের মৃত্যুকে আত্মহত্যা না বলে অন্য কিছু প্রমাণ করা। কারণ যাদের বিরুদ্ধে সরকারি তরফে এফআইআর করা হয়েছে, তারা আদৌ লালনের মামলায় জড়িত ছিল না। তাই এই ঘটনার সঙ্গে তাদের সরাসরি কোনও সম্পর্কই নেই। যেদিন ঘটনা ঘটেছিল সেই চিকিত্সক এবং জেলা বিচারকের উপস্থিতিতে সমস্ত প্রক্রিয়া করা হয়েছিল। আদালত চাইলেই রিপোর্ট দেওয়া হবে। সিবিআইয়ের এসপি, ডিআইজি পদমর্যাদার আধিকারিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে, অথচ তাঁরা লালন সেখের তদন্তে জড়িতই ছিলেন না’।এদিন শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রেখেছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।