রেড রোডে হনুমান জয়ন্তী পালন! আবেদন খারিজ সিঙ্গেল বেঞ্চ থেকে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে

মোল্লা জসিমউদ্দিন, 

শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট রেড রোডে হনুমান জয়ন্তীর  অনুষ্ঠান করতে না দেওয়ার ব্যাপারে অনড় মনোভাব বজায় রাখল। রাজ্যের আপত্তিকে মান্যতা দিল রাজ্যের উচ্চ আদালত। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ নিজেই ওই জায়গায় প্রতিবছর ঈদের  অনুষ্ঠান হওয়ার পক্ষে তাদের শতবর্ষ প্রাচীন অধিকারের সওয়াল করলেন।রেড রোডে শনিবারের হনুমান জয়ন্তীর কর্মসূচিতে অনুমতি দিল না কলকাতা হাইকোর্ট।শুধু সিঙ্গেল বেঞ্চ নয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চও অনড় অবস্থান নিল। কর্মসূচি করার অনুমতি এই মুহূর্তে আদালত দিচ্ছে না বলে জানিয়ে দিলেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ।  হিন্দু সেবাদলের হনুমান জয়ন্তীর মিছিলে অনুমতি দেয়নি লালবাজার।তাই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল হিন্দুত্ববাদী সংগঠনটি।এদিন বিচারপতি জানান, -‘এই মামলায় হলফনামা আদান প্রদানের প্রয়োজন রয়েছে। রাজ্যকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দিতে হবে। তার দু সপ্তাহের মধ্যে উত্তর দেবেন মামলাকারী। আগামী জুলাই মাসে পরবর্তী শুনানি হবে। রেড রোডেই এই কর্মসূচি কেন করতে হবে? অন্য সম্প্রদায় করে বলেই অনুমতি দিতে হবে?’  এদিন মামলাকারীর আইনজীবীকে এমনই প্রশ্ন করেন বিচারপতি। উল্লেখ্য,  ১২ এপ্রিল শনিবার রেড রোডে হনুমান জয়ন্তী উপলক্ষ্যে কর্মসূচি করতে চায় হিন্দু সেবা দল। ভোর ৫ টা থেকে সকাল ১১ টা পর্যন্ত হনুমান চালিশা পাঠ করতে চায় হিন্দু সেবা দল। ৩০০০ ব্যক্তিকে নিয়ে কর্মসূচি করতে চান তারা। মামলাকারীর দাবি, ইতিমধ্যেই সেনা অনুমতি দিয়েছে। যদিও বিচারপতির প্রশ্ন, “কবে থেকে রেড রোডে এই অনুষ্ঠান হয়?”  এর জবাবে মামলাকারীর আইনজীবী জানান, “এবারই প্রথম হচ্ছে। অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষেরাও রেড রোডে ধর্মীয় কর্মসূচি পালন করেন।”রেড রোডের ইদের অনুষ্ঠান নিয়ে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ মামলাকারীর উদ্দেশ্যে জানান, “আপনি কি ঐ অনুষ্ঠানের ইতিহাস জানেন? ১৯১৯ খিলাফত আন্দোলনের সময় থেকে ওই অঞ্চলে ওই অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। আগে ওই অনুষ্ঠান শহিদ মিনারে হতো। জল জমার সমস্যার কারণে সেটা রেড রোডে পরিবর্তন করা হয়, সম্ভবত ১৯৯৮ বা ১৯৯৯ সালে। ১০০ বছর ধরে এই কর্মসূচি হয়ে আসছে।”মামলাকারীর আইনজীবী বলেন, “যানজট হতে পারে বলে পুলিশের তরফে জানানো হচ্ছে। সেইজন্য অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। অথচ জমি যাদের নিয়ন্ত্রণে আছে সেই সেনাবাহিনী আমাদের অনুমতি দিয়েছে। শনিবার, রাজ্যের ছুটি আছে, আদালত বন্ধ আছে। কী ধরনের যানজট হবে?” পাল্টা বিচারপতি বলেন, “অন্য সম্প্রদায় করে বলেই কি আপনাদের অনুমতি দিতে হবে? আপনাদেরও ওখানে কর্মসূচি করার অধিকার আছে, রেড রোডেই এই কর্মসূচি করতে হবে এর পক্ষে কি যুক্তি আছে আপনাদের?”উত্তরে মামলাকারীর আইনজীবী জানান, “এটা জনসাধারণের জায়গা। সবার সুবিধা হবে। আর এটা হনুমান জয়ন্তীর অনুষ্ঠান।” সরকারি আইনজীবী পাল্টা বলেন, “যদি সাধারণ মানুষের অসুবিধা হয়, তাহলে আমি এটা বলতে পারিনা যে আমি হিন্দু বলে আমাকে কালীঘাট মন্দিরে ঢুকতে দিতেই হবে এবং কেউ আমাকে আটকাতে পারবে না। রেড রোডে এই কর্মসূচি করার ক্ষেত্রে কী ধর্মীয় তাৎপর্য আছে সেটা মামলাকারীরা বলতে পারছেন না।”এরপরই মামলাকারীর আইনজীবী বলেন, “দুর্গাপূজা কার্নিভাল কবে থেকে হচ্ছে?” রাজ্য জানায়, “দুর্গাপূজার ইউনেস্কো হেরিটেজ তকমা আছে।আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আছে।” পাল্টা মামলাকারীর আইনজীবী বলেন, “বিজয়া দশমীর দুদিন পরে কার্নিভাল হয়। সেটাও মানুষের অসুবিধা হয়।” শেষে বিচারপতি ঘোষ বলেন, “আপনারা অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন। আমার কিছু বলার নেই।” সবার সমানাধিকার থাকা প্রয়োজন বলে পাল্টা সওয়াল করেন মামলাকারীর আইনজীবী।সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় হিন্দু সেবা দল। যদিও সিঙ্গেল বেঞ্চের পর ডিভিশন বেঞ্চেও ধাক্কা হিন্দু সেবা দলের। রেড রোডে কর্মসূচির অনুমতি দিল না প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতির নির্দেশ, -‘হিন্দু সেবা দল চাইলে রাজ্যের প্রস্তাবিত দুটি বিকল্প জায়গায় তাদের কর্মসূচি করতে পারে’।

Leave a Reply