রুম এসির ১৫০টি মডেলের সার্বিক সম্ভার লঞ্চ করল ব্লু স্টার; স্মার্ট ওয়াই ফাই আর হেভি-ডিউটি এসি বিভাগে নিজেদের পোজিশনিং সুদৃঢ় করার পরিকল্পনাও রয়েছে

ব্লু স্টার লিমিটেড আজ রুম এসির ১৫০টি মডেলের সার্বিক সম্ভার লঞ্চ করল, সঙ্গে আসন্ন গ্রীষ্মের মরশুমের জন্য একটি ‘ফ্ল্যাগশিপ প্রিমিয়াম’ সম্ভার। এই সম্ভারে আছে ইনভার্টার এসি, ফিক্সড স্পিড এসি আর উইন্ডো এসি, যা সবরকম দামের প্রত্যেক ক্রেতার প্রয়োজন মেটাবে।

রুম এসির চাহিদায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে, কারণ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গ্রীষ্মকালে গরম প্রচণ্ড বেড়ে যাচ্ছে আর ভারতের ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির খরচ করার মত আয় ক্রমশ বাড়ছে। উপরন্তু এই বৃদ্ধির জ্বালানি হিসাবে কাজ করছে টিয়ার ৩, ৪ আর ৫ শহরগুলির বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা। সঙ্গে আছেন পুরনো এসি এক্সচেঞ্জ করার ক্রেতারা এবং সেইসব ক্রেতারা যাঁরা নিজের বাড়ির অন্য ঘরের জন্যও এসি কিনছেন। হিসাব বলছে, ভারতের এসি শিল্প ২০৩০ আর্থিক বর্ষের মধ্যে দ্বিগুণ হয়ে যাবে।

এই ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করতে ব্লু স্টার নিজের নির্মাণ, গবেষণা ও উন্নয়ন এবং উদ্ভাবন ক্ষমতা ব্যবহার করে একগুচ্ছ প্রোডাক্ট লঞ্চ করেছে। এগুলি নতুন, স্বতন্ত্র এবং শ্রেণির সেরা এসি।

২০২৫ সালের জন্য নতুন এয়ার কন্ডিশনারের সম্ভার
কোম্পানি ৩-স্টার ও ৫-স্টার বিভাগে মডেলগুলির এক সার্বিক সম্ভার লঞ্চ করেছে, যার চরম আবহাওয়ায় ঠান্ডা করার উচ্চমানের কর্মদক্ষতা রয়েছে। এই মডেলগুলি পাওয়া যাচ্ছে ০.৮ TR থেকে ৪ TR পর্যন্ত নানারকম ঠান্ডা করার ক্ষমতায়। দামও আকর্ষণীয় – ২৮,৯৯০/-।

এর মধ্যে আছে প্রায় ৪০টি মডেলের স্মার্ট ওয়াইফাই এসির বিস্তৃত সম্ভার, যাতে আছে ‘কাস্টমাইজড স্লিপ’ জাতীয় অনন্য ও স্মার্ট ফিচার। এর দ্বারা তাপমাত্রা, ফ্যানের গতি, কুল/ফ্যান মোড প্রিসেট করা যায় এবং ১২ ঘন্টার জন্য প্রত্যেক ঘন্টায় এসি সুইচ অন/অফ করার ব্যবস্থা থাকে; যাতে নিশ্চিন্তে ঘুমনো যায়। ভয়েস কমান্ড টেকনোলজির মাধ্যমে ক্রেতারা অ্যামাজন অ্যালেক্সা বা গুগল হোমের মত স্মার্ট ডিভাইস দিয়ে নিজেদের এসি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন ইংরিজি অথবা হিন্দি ভয়েস কমান্ডে। উপরন্তু এর এনার্জি ম্যানেজমেন্ট ফিচার এসির বিদ্যুৎ ব্যবহারে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ জোগায়। এর দ্বারা এসির ব্যবহারের উপর নজর রাখা, নিয়ন্ত্রণ করা এবং ব্যবহার সীমিত রাখার কাজ করা যায়। ফলে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার আটকানো সম্ভব হয়।

এই নতুন লঞ্চ হওয়া এসিগুলি বিভিন্ন শক্তিশালী ফিচারে সমৃদ্ধ। এর মধ্যে আছে এক উদ্ভাবনীমূলক ফিচার, যার নাম ‘AI Pro+’। এ এক জটিল ও ইনটুইটিভ অ্যালগোরিদম যা বিভিন্ন প্যারামিটার ধরে নেয়, সেই অনুযায়ী এদিক ওদিক করে, খেয়াল করে এবং সর্বোচ্চ স্বাচ্ছন্দ্য দেয়। আরেকটি আলাদা করে বলার মত ফিচার হল ‘ডিফ্রস্ট ক্লিন টেকনোলজি’। এটি একটি তিন ধাপের প্রক্রিয়া, যা ডিজাইন করা হয়েছে এসির ইন্ডোর ইউনিট পরিষ্কার করতে এবং সর্বোচ্চ কর্মদক্ষতা বজায় রাখতে। এই প্রক্রিয়া শুরু হয় কয়েল ফ্রস্টিং করে, তারপর আসে মেল্টিং ও ড্রাইং, যা তাৎপর্যপূর্ণভাবে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে এবং এসির আয়ু বাড়ায়। উপরন্তু সমস্ত ব্লু স্টার ইনভার্টার এসিই স্মার্ট রেডি এবং একটি আলাদা স্মার্ট মডিউল যুক্ত করলেই স্মার্ট এসিতে পরিণত করা যায়।

এছাড়াও এই এসিগুলোতে দ্রুত ঠান্ডা করার জন্যে ‘টার্বো কুল’-এর মত ফিচার আছে; ‘কনভার্টিবল ৬-ইন-১ কুলিং’ ফিচার আছে, যা ক্রেতাদের ঠান্ডা করার ক্ষমতা বাড়ানোর বা কমানোর সুযোগ দেয়। আর আছে ন্যানো ব্লুপ্রোটেক্ট টেকনোলজি আর IDU, ODU – দুয়ের জন্যই হাইড্রোফিলিক ‘ব্লু ফিন’ কোটিং, যাতে যথাক্রমে কয়েল ক্ষয়ে যাওয়া আর লিকেজ আটকানো যায়, এসির আয়ু বাড়ানো যায়। অন্য অনন্য ফিচারগুলির মধ্যে আছে DigiQ Octa সেন্সর, যা অতুলনীয় যাথার্থ্য আর নির্ভরযোগ্যতা জোগায়; একটি ৪-ওয়ে সুইং আর ওয়াইড অ্যাঙ্গল ল্যুভর মুভমেন্ট। এতে ঘরের সমস্ত এলাকা একরকম ঠান্ডা হয়, আর যথার্থ কুলিং প্রযুক্তির কারণে তাপমাত্রা প্রতি ০.৫ ডিগ্রিতে সেট করা যায়। উপরন্তু এই সম্ভার HEPA ফিল্টার, PM2.5 ফিল্টার আর সক্রিয় কার্বন সমেত অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়ালের মত ফিল্ট্রেশন বিকল্পের বর্ধিত সম্ভার জোগায়। এতে নিশ্চিত করা যায় যে ঘরের হাওয়া শুধু ঠান্ডাই নয়, বিশুদ্ধ আর পরিষ্কারও বটে। ব্লু স্টার ইনভার্টার এসির আরেকটা প্রধান দিক হল ভোল্টেজের বিস্তৃত অপারেটিং রেঞ্জ। এর ফলে এক্সটার্নাল ভোল্টেজ স্টেবিলাইজারের দরকার পড়বে না।

ফ্ল্যাগশিপ সম্ভার
কোম্পানি লঞ্চ করেছে ফ্ল্যাগশিপ মডেলের এক জোরালো সম্ভার, যার মধ্যে আছে ‘সুপার এনার্জি এফিশিয়েন্ট এসি’, ‘হেভি-ডিউটি এসি’, ‘হট অ্যান্ড কোল্ড এসি’ আর ‘এসিজ উইথ অ্যান্টি-ভাইরাস টেকনোলজি’।
ব্লু স্টারের ‘সুপার এনার্জি এফিশিয়েন্ট এসি’-তে আছে এক অনন্য ডায়নামিক ড্রাইভ টেকনোলজি। এই প্রযুক্তি উচ্চ এয়ারফ্লো ভলিউমে জোগানোর মাধ্যমে বর্ধিত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সাহায্য করে। ফলে ১ TR ইনভার্টার স্প্লিট এসি অর্জন করে ৬.২৫ ISEER, যা একটি ৩-স্টার ইনভার্টার এসির থেকে ৬৪% বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়কারী।

প্রত্যেক বছর গ্রীষ্মের মরশুম যখন চরমে ওঠে তখন সারা ভারতে তাপমাত্রা চড়ে যায়। তাই কোম্পানি এনেছে ‘হেভি-ডিউটি এসি’। উন্নততর স্পেসিফিকেশনে তৈরি এই এসিগুলি ব্যতিক্রমী ঠান্ডা করার শক্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য জোগায় এমনকি ৫৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও। এতে ৫৫ ফুটের এক শক্তিশালী এয়ার থ্রো আছে, যা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও সম্পূর্ণ ঠান্ডা করার ক্ষমতা বজায় রাখতে পারে। ফলে চরম গরমেও সর্বোচ্চ কর্মদক্ষতা নিশ্চিত।

‘হট অ্যান্ড কোল্ড এসি’ ডিজাইন করা হয়েছে সারাবছর স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়ার জন্য। ব্লু স্টার এমন একটি মডেল তৈরি করেছে যা বাইরের তাপমাত্রা -১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলেও কাজ করতে পারে। এটি নির্দিষ্টভাবে শ্রীনগরের মত বাজারের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। অন্য আরেকটি সম্ভার ডিজাইন করা হয়েছে -২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাইরের তাপমাত্রায় কাজ করার জন্য, যাতে বাকি দেশের যেখানেই চরম শীত পড়ে সেখানে কাজ করতে পারে।

শেষত আছে কোম্পানির সেই সম্ভার, যা স্বাচ্ছন্দ্য আর স্বাস্থ্যের মেলবন্ধন ঘটায়। অর্থাৎ ‘এসি উইথ অ্যান্টি-ভাইরাস টেকনোলজি’, যা কার্যকরীভাবে ক্ষতিকর মাইক্রোব আর পার্টিকুলেট ম্যাটার ফিল্টার করে। ক্রেতারা এই এসিগুলোকে এয়ার পিউরিফায়ার হিসাবেও ব্যবহার করতে পারেন, বিশেষ করে শীতকালে।

ব্লু স্টারের এয়ার কন্ডিশনার ক্রেতাদের সাধ্যমত দামে ব্যতিক্রমী কুলিং জোগানো ছাড়াও তার গুণমান, নির্ভরযোগ্যতা আর দীর্ঘ আয়ুর জন্য সুপরিচিত। এই কোম্পানি তাদের ইনভার্টার কম্প্রেসরে সারাজীবনের ওয়ারেন্টি দেয়, PCB-তে ৫ বছরের ওয়ারেন্টি দেয় আর প্রোডাক্টগুলোর জন্য সহজ ফাইন্যান্সিং বিকল্প জোগায়।

২০১১ সালে রেসিডেনশিয়াল এসি বিভাগে কোম্পানি প্রবেশ করার পর থেকে ব্লু স্টার ধারাবাহিকভাবে এই বিভাগে বৃদ্ধি পেয়েছে, প্রতিবছর এই শিল্পক্ষেত্রের সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। কোম্পানির লক্ষ্য হল রুম এসি বিভাগে ২০২৬ আর্থিক বর্ষের মধ্যে বাজারের ১৪.৩% দখল করা।

নির্মাণ পদচিহ্ন আরও ছড়িয়ে দেওয়া
সম্পূর্ণ মালিকানাধীন ব্লু স্টার ক্লাইম্যাটেক লিমিটেডের মাধ্যমে ব্লু স্টার অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রী সিটিতে এক অত্যাধুনিক উৎপাদন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। সেখানে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়েছে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে। এছাড়া এই কোম্পানির হিমাচল প্রদেশে দুটি প্ল্যান্ট আছে শুধুমাত্র রুম এয়ার কন্ডিশনার তৈরি করার জন্য। এই কেন্দ্রগুলিতে উন্নত স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি আছে, যার মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক অ্যাসেম্বলি লাইন এবং মেটিরিয়াল হ্যান্ডলিং সিস্টেম। সঙ্গে আছে IoT ইন্টিগ্রেশন আর ডিজিটালাইজেশনের উপর জোর দেওয়া সার্বিক উদ্যোগ। এই প্ল্যান্টগুলিকে নিয়ে ব্লু স্টারের উৎপাদন ক্ষমতা এই মুহূর্তে প্রায় ১.৪ মিলিয়ন ইউনিট রুম এসি। অদূর ভবিষ্যতে ক্রমশ এই ক্ষমতা বাড়িয়ে ১.৮ মিলিয়ন ইউনিট করার পরিকল্পনা রয়েছে।

আওতা বৃদ্ধি করা
কোম্পানি ই-কমার্স আর আধুনিক ব্যবসায়িক চ্যানেলগুলিতে লম্বা লম্বা পা ফেলে এগিয়ে চলেছে, বিক্রি বাড়াতে ইন-স্টোর ডেমনস্ট্রেটর নিয়োগ করতে টাকা ঢালছে বাজারের সমস্ত বিভাগে অফটেক বাড়াতে সুনির্দিষ্ট অনলাইন ও অফলাইন প্রোমোশনকে ব্যবহার করছে। নিজেদের সরবরাহ নেটওয়ার্ককেও বড় করছে, বিশেষ করে উত্তরে। ‘গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড সার্ভিস’ আর টেকনিকাল পারদর্শিতার কারণে ব্লু স্টার ২,১০০-র বেশি পরিষেবা কেন্দ্র আর ১৫০-র বেশি পরিষেবা যানের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। ফলে সারা দেশে নাগালের মধ্যে এবং নির্ভরযোগ্য বিক্রয় পরবর্তী সহায়তা নিশ্চিত করা গেছে।

ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর বিরাট কোহলি
বিরাট কোহলি রুম এসির জন্যে ব্লু স্টারের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর রয়েছেন। তিনি কোম্পানির ব্র্যান্ড সম্পর্কে সচেতনতা ও ইকুইটি বাড়াতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করছেন। বিরাট কোহলিকে নিয়ে তৈরি হওয়া যে টিভি কমার্শিয়াল উষ্ণতার চরিত্রায়নের উপর নির্মিত, তা দর্শকদের মধ্যে ভাল সাড়া ফেলেছে। সম্প্রতি কোম্পানি একই থিমে নতুন TVC লঞ্চ করেছে সমস্ত টিভি ও ডিজিটাল চ্যানেলগুলো জুড়ে। সামগ্রিকভাবে ব্লু স্টারের পরিকল্পনা হল চলতি গ্রীষ্মে বিজ্ঞাপনে ৫০ কোটি টাকার বেশি খরচ করা।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
কলকাতায় হওয়া এক সাংবাদিক সম্মেলনে বি ত্যাগরাজন, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ব্লু স্টার লিমিটেড, বললেন, “২০৩০ সালের মধ্যে ভারতে আরও প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন মধ্যবিত্ত ক্রেতা তৈরি হতে চলেছে। ফলে রুম এসির বাজার এখন ঊর্ধ্বমুখী এবং আগামী কয়েক বছরে বিপুল হারে বৃদ্ধি পাবে। আবাসন সেক্টরের বৃদ্ধি, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার এবং গ্রামীণ অর্থনীতির বৃদ্ধির মত ইতিবাচক প্রবণতাও আমাদের শিল্পক্ষেত্রের ভবিষ্যৎকে রূপ দেবে। এটা আমাদের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। আমাদের কাছে আছে ৮০ বছর ধরে এয়ার কন্ডিশনিং বানিয়ে যাওয়ার পারদর্শিতা এবং বাজারে জোরালো অবস্থান। আমরা গবেষণা ও উন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণ লগ্নি করে চলেছি। উৎপাদন করার পাশাপাশি সরবরাহ শৃঙ্খলও সামলাচ্ছি, যাতে ক্রমবর্ধমান চাহিদাকে ব্যবহার করতে দক্ষতা ও ক্ষমতা বাড়ানো যায়। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে আমাদের রুম এসির বিস্তৃত সম্ভার, যা সব ধরনের দামের সবরকমের ক্রেতার কাজে লাগে, তা আমাদের বাকি বাজারের চেয়ে দ্রুত বাড়তে সাহায্য করবে।”

Leave a Reply