মৌরিফুলের প্রেম,
শম্পা মহান্তি নাথ,
মৌরি ফুল ভালোবেসে ছিল আকাশের চাঁদকে। ঝক ঝকে রোদ্দুরের মিষ্টি সৌরভে, হলুদ ফুলের ডালি নিয়ে সকাল সন্ধ্যা আকাশের দিকে চেয়ে থাকতো সে। এই পৃথিবীর বহু ব্যর্থ প্রেম যখন গভীর রাতে দিনের সূর্যকে খুঁজতো, তখন মৌরি ফুল প্রাণভরে আকাশের চাঁদকে দেখত। তার আলোর আভূষণে নিজেকে সাজাতো। ঠিক যেভাবে বিয়ের কনের গায়ে হলুদ লাগলে রাতে তার রূপ, সকলকে ছাপিয়ে যায়। ঠিক সে রূপেই; মৌরি ফুল যেন, তার চাঁদের জন্যেই দিনের আলোয় হলুদ মাখে আর রাতে প্রেয়সীর মতোই লজ্জা আবরণে প্রেমে রাঙা হয়ে ওঠে।
অথচ চাঁদের তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে তো কত কবির কলমের কালিতে বর্ণনাময়। এই বসুন্ধরার মহামূল্যবান অলংকার সে। আর সামান্য মৌরি ফুল কি না তার প্রেয়সী ? না না। এসব তো চাঁদের কাছে আকাশ কুসুম কল্পনা মাত্র। তার আভিজাত্যের কাছে মৌরি তো অতীব সামান্য।
মৌরি তা ও প্রতিনিয়ত চাঁদকেই ভালোবেসে, আপন করে পাওয়ার স্বপ্ন দেখে। মৌরির সাধারণ রূপের আকর্ষণে কত কীটপতঙ্গ তাঁর কাছে আসে কিন্তু তার অসীম ভালোবাসার কাহিনী শুনে তারও আপ্লুত হয়ে চলে যায়। চাঁদ এত দূরে যে মৌরি তার নাগাল পায় না। শুধুমাত্র দেখে আর হালকা বাতাসে হলুদ ফুল তার কাণ্ডতে ধরে, প্রেম নিবেদন করে। একেই বোধহয় বলে সত্যিকারের প্রেম ভালোবাসা। যা বিলোনো যায় না। অপ্রাপ্তির মধ্যেও বেঁচে রয়।
একদা কালবৈশাখীর ঝড় ওঠে। মৌরির নরম ডাল পালা ভেঙে যায়। পরদিন প্রভাতী কিরণে একটু একটু করে সে ফের মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। ভালোবাসার শক্তি। চাঁদকে দেখতে পাওয়া বা কাছে পাওয়ার বাসনায় ভগ্ন মৌরী ফের ধীরে ধীরে জীবন্ত হতে থাকে। তবুও চাঁদের অহংকার যায় না। ধীরে ধীরে মৌরি ফুলের পাঁপড়ি গুলো ঝরতে থাকে। ফুল ক্রমশঃ অভিজ্ঞতায় ফলে পরিণত হওয়ার দিকে অগ্রসর হবে; এমন সময়ে ধরিত্রী মায়ের বুক জুড়ে বৃষ্টি হতে শুরু করে। সেদিন বৃষ্টি ভেজা পূর্ণিমার রাতে মৌরি ফুলের শরীরজুড়ে ভালোবাসার প্রাপ্তির শিহরণ বয়ে যায়। চাঁদ মৌরির খুব কাছে এসে ধরা দেয়। একেবারেই ওর শরীরের কাছে। বৃষ্টির জলরাশিতে মগ্ন হয়ে চাঁদ ধরা দেয় মৌরি ফুলের ঠিক একেবারে পায়ের তলায়। এমন নৈসর্গিক প্রেমের জয়গানে মৌরি ফুলের খেত খিল খিল করে হাসতে থাকে।
চাঁদের সমস্ত অহংকার ধুয়ে মুছে মিশে যায় মাটির সাথে!