‘মেয়েটি এতে কোনও অপরাধ দেখেনি’, পকসো মামলায় অভিযুক্ত কে খালাস দিয়ে জানালো সুপ্রিম কোর্ট

মোল্লা জসিমউদ্দিন, 

শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টের এক পকসো মামলার পরিপেক্ষিতে গুরত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ রাখলো।’মেয়েটি এতে কোনও অপরাধ দেখেনি। সমাজ ওর চরিত্র নিয়ে কথা বলেছে। পরিবার ওর পাশে ছিল না। বিচারব্যবস্থা ওকে হারিয়ে দিয়েছে।’ পকসো মামলার রায়ে ঐতিহাসিক পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের। নাবালিকার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে অভিযুক্ত যুবককে মুক্তি দিয়ে এই পর্যবেক্ষণ করল দেশের  শীর্ষ আদালত।সুপ্রিম কোর্ট  একটি যুগান্তকারী রায়ে নাবালিকা যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ আইন (পকসো) এর অধীনে দোষী সাব্যস্ত এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো শাস্তি আরোপ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই রায় ঘোষণা করেছেন বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভূঁইয়ার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ, ভারতীয় সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের অধীনে প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে।শুক্রবার বিশেষ ক্ষমতার প্রয়োগের মাধ্যমে পকসো মামলায় এক অভিযুক্তকে নির্দোষ ঘোষণা করে খালাস করল দেশের শীর্ষ আদালত। ঠিক এক বছর আগে এই অভিযুক্তকে মুক্তি দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই সময় রাজ্যের উচ্চ আদালতের রায়কে স্থগিত করে শীর্ষ আদালত। কিন্তু এক বছর কাটতেই সেই একই পথে হাঁটল সুপ্রিম কোর্ট।কিন্তু কেন এমন রায় দিল শীর্ষ আদালত? ঘটনা ২০১৮ সালের। হঠাৎ করেই বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যায় বছর ১৫-এর এক ‘নির্যাতিতা’। কিছুদিন পর জানা যায়, স্থানীয় এক বছর ২৫-এর যুবকের সঙ্গেই বিয়ে করেছে সে। মেয়ে তখনও নাবালিকা। ফলত, তাকে উদ্ধারের পর ওই যুবকের বিরুদ্ধে পকসো মামলা দায়ের করে পরিবার। স্থানীয় নিম্ন আদালতে ওঠে মামলা। সেখানে দোষী সাব্যস্ত হন অভিযুক্ত। ২০ বছরের কারাদণ্ডের সাজা শোনানো হয় তাকে।এরপর সেই নিম্ন আদালতের রায়কে চ্য়ালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে দ্বারস্থ হন অভিযুক্ত। সওয়াল-জবাব ও নানা যুক্তি-তর্কের পর অভিযুক্ত নির্দোষ তকমা পেলেও বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে কলকাতা হাইকোর্ট। মামলার রায়ে  কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জানিয়েছিলেন, -‘একজন নাবালিকাকে নিজের যৌন আকাঙ্খা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত কারণ সমাজ এই সকল ঘটনায় তাদেরই কাঠগড়ায় টানে’। হাইকোর্টের এই রায়ের জেরে নতুন করে বাঁধে বিতর্ক। যার জেরে বাধ্য হয়েই মামলায় হস্তক্ষেপ করতে হয় শীর্ষ আদালতকে।এরপর ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি অভয় ওকা ও বিচারপতি উজ্জ্বল ভূয়নের ডিভিশন বেঞ্চে ওঠে মামলাটি। সেখানেই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারকে একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি তৈরির নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। চলতি বছরের প্রথম দিকে নিজেদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে সেই বিশেষ কমিটি। যেখানে বলা হয়েছে, ‘নির্যাতিতা’ ওই অভিযুক্তকে ভালবাসেন এবং তার সঙ্গে ঘটা ঘটনাকে কোনও ভাবে তিনি নির্যাতন হিসাবে দেখেন না। মহিলার সেই বক্তব্যের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে নির্দোষ ঘোষণা করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

Leave a Reply