Spread the love

মৃতদেহ লোপাট সহ আর্থিক দুর্নীতিতে ইডি তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে আরজিকরের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার 

মোল্লা জসিমউদ্দিন, 

কলকাতা হাইকোর্ট থেকে দিল্লির সুপ্রিম কোর্ট অবধি চলছে আরজিকর কান্ড নিয়ে বিভিন্ন মামলা। এর মধ্যে নবতম সংযোজন আরজিকর হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলির মামলা। প্রাক্তন অধ্যক্ষ  সন্দীপ ঘোষ এর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় আর্থিক তদন্তকারী সংস্থা ইডির তদন্তের আবেদন করার পাশাপাশি নিরাপত্তার আবেদন রেখেছেন তিনি।আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এর  বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি, দেহ লোপাট সহ একাধিক অভিযোগে ইডির তদন্ত চেয়ে মামলার দায়ের করলেন আরজিকরের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি। আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি হবে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের এজলাসে।মামলা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছে আদালত।আরজি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি অভিযোগ করেছিলেন, -‘প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ নিয়ে টালা থানায় গেলে পুলিশ এফআইআর নেয়নি। শুধুমাত্র লিখিত অভিযোগ দিয়ে এসেছিলেন তিনি। তারপরেও অবশ্য কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ’। এরপর থেকেই তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানান। তিনি বলেন, “আদালতের শরণাপন্ন হয়ে বিচার চাইছি।”প্রাক্তন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে টালা থানাতে অভিযোগকারী প্রাক্তন ডেপুটি সুপার নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। তাই তাকে নিরাপত্তা দেওয়ারও আবেদন জানিয়েছেন এই মামলায়। তিনি জানান, তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক ছাত্রীকে খুন ও ধর্ষণের ঘটনার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে যাওয়ার পরেই প্রাক্তন অধ্যক্ষ ডাক্তার সন্দীপ ঘোষকে লাগাতার জেরা শুরু করেন কেন্দ্রীয়  গোয়েন্দারা। তারপরেই সামনে আসে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ। আর্থিক তছরুপ, ওষুধ, মেডিক্যাল সরঞ্জামের কালোবাজারির মতো গুরুতর অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। এইসমস্ত অভিযোগের তদন্তে সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে সিট গঠন করেছে রাজ্য সরকার।আরজি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার বলেন, ‘প্রথমদিন থেকে ওঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। একসময় ছাত্ররা ওঁর বিরুদ্ধে ভুক হরতালও করেছিল। টাকা নিয়ে উনি পাশ করাতেন। টাকা না দিলে খারাপ কেসে ফাঁসিয়ে দিতেন। হুমকি দিতেন। ওঁকে ( প্রাক্তন অধ্যক্ষ) সাসপেন্ড করে দ্রুত হেফাজতে নেওয়া দরকার।’দেহ পাচারেও জড়িত সন্দীপ, অভিযোগ আখতার আলির। জানা গেছে, গত ২০২৩ সালের জুলাই মাসে সন্দীপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিলেন আর জি করের তদানীন্তন ডেপুটি সুপার এবং অধুনা মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের ডেপুটি সুপার আখতার আলি। তাঁর দাবি, -‘আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে তিনটি প্রধান দুর্নীতি ছিল: বায়ো মেডিক্যাল দুর্নীতি, ছাত্র-ছাত্রীদের ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে অর্থ নেওয়া এবং অ্যাকাডেমিক ফান্ডের টাকার নয়ছয়। এই সমস্ত দুর্নীতি পরিচালিত হতো সন্দীপ ঘোষের নেতৃত্বে’।আখতার আলি এদিন হাইকোর্টে বলেন, -‘সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে অ্যান্টি কোরাপশনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলাম। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল কেস করার জন্য লিখিত অভিযোগ  করেছি। বায়োমেডিক্যাল স্ক্যাম করেছেন, মৃতদেহ নিয়ে দুর্নীতি করেছেন । ছাত্রদের পাশ করানোর জন্য টাকা নিতেন। ডেডবডি ওয়ার্কশপের জন্য দিয়ে দিতেন। একাধিক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত করা হয়নি।’আখতার আলি আরও বলেন, ‘আমিও ওর দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলাম। ছাত্রদের ফেল করোনা থেকে শুরু করে টেন্ডারে ২০ পার্সেন্ট কমিশন খাওয়া, পছন্দের সাপ্লায়ার-ভেন্ডারদের টেন্ডার দিত। সরকারি সম্পত্তি বেআইনিভাবে দিয়ে দিত। আমি এর আগে আর্থিক দুর্নীতি দমন শাখাকে জানিয়েছিলাম। পরে মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে নালিশ জানাই।’ উল্লেখ্য,  আরজি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার জানান, -‘বায়োমেডিক্যাল ওয়েস্ট, ইল্লিগাল ট্রাফিকিং, বিরুদ্ধে, ছাত্রদের ফেল করানো থেকে গেস্ট হাউসে ছাত্রদের মদ্যপান করা, টেন্ডারের ২০ শতাংশ কমিশন খাওয়া, নিজের লোকেদের টেন্ডার ছাড়াই বরাত দেওয়া এবং ক্যান্টিন, স্টল, সুলভ শৌচালয়ের মতো সরকারি সম্পত্তিগুলিকে বেআইনিভাবে টাকার বিনিময়ে অন্যের হাতে তুলে দেওয়া নিয়ে দুর্নীতি বিরোধী ব্যুরো, ভিজিল্যান্স কমিশন এবং স্বাস্থ্যভবনকেও জানিয়েছি’। আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি রয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে।এর পাশাপাশি আরজিকর কান্ডে সুপ্রিম কোর্টেও সিবিআই কে অগ্রগতি রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *