মুখ্যমন্ত্রীর বার্তার চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই আরজিকর কান্ডে ফাঁসি চেয়ে হাইকোর্টে রাজ্য

মোল্লা জসিমউদ্দিন ,

নিম্ন আদালতে রায় ঘোষণার চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই আরজি কর-কাণ্ডে দোষী সিভিক সঞ্জয় রায়ের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করল রাজ্য। মঙ্গলবার মামলা দায়ের করার অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।আরজি কর কাণ্ডে সন্তুষ্ট নয় নির্যাতিতার পরিবার সহ রাজ্য সরকারও। তাই দোষী সঞ্জয় রায়ের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করল রাজ্য। রাজ্য যে সর্বোচ্চ শাস্তি চাইবে, তা আগেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে এদিন মামলা দায়ের করার অনুমতি চান রাজ্যের আইনজীবী জেনারেল কিশোর দত্ত। অনুমতিও দিয়েছেও ডিভিশন বেঞ্চ। গত সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘আদালতের রায় দেখে স্তম্ভিত। এই ঘটনাকে বিরলতম ঘটনা মনে করা হচ্ছে না। আমি মনে করি, এই ঘটনাটি অবশ্যই বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা, যেখানে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত ছিল। কী ভাবে এই ঘটনাকে বিরলতম নয় বলে ঠিক করা হল ? আমরা ফাঁসির সাজা চাইছি।’ এই ঘটনাকে জঘন্য অপরাধ বলে উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী । গত সোমবার শিয়ালদহ আদালতে বিচারক অনির্বাণ দাস আরজি করের তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়কে আমৃত্য কারাদন্ডের সাজা শুনিয়েছেন। সঞ্জয়ের সাজা নিয়ে ওই দিনই অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।মালদায় দাঁড়িয়ে এই নিয়ে তিনি বলেন, ‘ফাঁসি হলে মনকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম।’ তারপরেই কলকাতা হাইকোর্টে যাওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি।জয়নগর থেকে গুড়াপ সহ গত কয়েক মাসে কয়েকটি ধর্ষণ মামলায় দোষীর ফাঁসির সাজা হয়েছে। ওই ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গত কয়েক মাসে আমরা এই ধরনের অপরাধে সর্বোচ্চ মৃত্যদন্ড দিতে পেরেছি। তবে এক্ষেত্রে হল না কেন ? আমি মনে করি এই অপরাধ অত্যন্ত জঘন্যতম। তাই দোষীর সর্বোচ্চ সাজা হওয়া উচিত।’ দোষী সঞ্জয় রায়ের সাজা দেবার বিষয়ে ১৭২ পৃষ্ঠার রায়ে শিয়ালদহ আদালতে বিচারক অনির্বাণ দাস নানা প্রসঙ্গ এনেছেন। এনেছেন হসপিটালের নিরাপত্তার ঘাটতির কথা। তারপরেই সেই সুদীর্ঘ রিপোর্টে তিনি লেখেন,”একটা ঘটনা যে সভ্য সমাজে দাঁতের বদলে দাঁত, নখের বদলে নখ, মৃত্যুর বদলে মৃত্যু নিয়ম নয়। কিন্তু, এটাও সমান সত্য যে যখন কোনও মানুষ জন্তু হয়ে যায়, সমাজের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে, তখন আইন বলছে সে জীবন থেকে বঞ্চিত হতে পারে।” এছাড়াও তিনি লেখেন বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে এখনও অজানা অনেক তথ্য আছে।মূল প্রশ্ন ছিল, কোনো খুনের পিছনে তার মোটিভ। তিলোত্তমা ও সঞ্জয়ের মধ্যে আগে থেকে কোনও যোগসূত্র ছিল না। খুনের উদ্দেশ্যে ওই সিভিক ভলান্টিয়ার যে হাসপাতালে ঢোকেননি, সেকথা উল্লেখ করেছেন। রায়ে বিচারক লিখেছেন, -‘অভিযুক্ত জানিয়েছেন যে মদ্যপ অবস্থায় ওইদিন আরজি করের চারতলায় গিয়েছিলেন। কিন্তু, তিনি যে সেমিনার হলে যাননি, তার কোনও প্রমাণ দিতে পারেননি। অন্যদিকে, তদন্তকারীদের হাতে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে ওইদিন অভিযুক্ত সেমিনার রুমে গিয়েছিলেন। সেক্ষেত্রে একটাই বিকল্প যে, ওইদিন অভিযুক্ত সেমিনার রুমে গিয়েছিলেন। এবং আকস্মিক লালসা থেকে নির্যাতিতাকে আক্রমণ করেন। তবে এটা পূর্বপরিকল্পিত অপরাধ নয়। নির্যাতিতা যে ওই রুমে রয়েছেন, তা জানতেন না অভিযুক্ত। প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষার ব্যর্থতার কথাও রায়ে উল্লেখ করেন বিচারক। শেষে লেখে, “যাবজ্জীবন হল নিয়ম, আর মৃত্যুদণ্ড ব্যতিক্রম।” এখন দেখার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলার পরবর্তী শুনানিতে কি নির্দেশ দেয়?

Leave a Reply