Spread the love

মামলার পাহাড় কমাতে কর্মদিবস বাড়াতে চায় হাইকোর্টের বিশেষ কমিটি 

মোল্লা জসিমউদ্দিন, 

রাজনৈতিক মামলার ভীড়ে হারিয়ে যায় বেশিরভাগ সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের বিচার।এমনও মামলা রয়েছে দাখিল হওয়ার এক – দুই বছর পরেও হয়নি কোন শুনানি।ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে কলকাতা হাইকোর্টের বিশেষ কমিটি এক গুরত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা জমা দিল।এবার ‘ছুটির ট্র্যাডিশন’ ভাঙতে চায় কলকাতা  হাইকোর্ট। ২০২৫ সালে ৭ দিন ছুটি বাতিলের প্রস্তাবনা রয়েছে । লক্ষ্মী পুজো থেকে কালী পুজোর মধ্যেকার ৭ দিন অর্থাৎ ৯,১০,১৩,১৪,১৫,১৬,১৭ অক্টোবর ছুটি বাতিলের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।বছরে ২২২ দিনের কর্মদিবস লক্ষ্য, এই নতুন সিদ্ধান্ত জানাল হাইকোর্টের ছুটি সংক্রান্ত চারজনের বিচারপতির বিশেষ কমিটি। এই কমিটিতে রয়েছেন বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন, বিচারপতি সৌমেন সেন, বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি এবং বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী।২০২৫ সালে হাইকোর্টের কর্মদিবস  রয়েছে ২১২ দিন, তা আরও ৭ দিন বাড়ানোর প্রস্তাব দিল কমিটি।হাইকোর্টের আইনজীবীদের এক সংগঠন পক্ষে মতামত দিলেও আপত্তি জানিয়েছে দুটি  সংগঠন।কেন্দ্রীয় আইন ও বিচার মন্ত্রক নির্দেশিকা জারি করে জানায়,-‘ দেশে ঝুলে থাকা মামলার সংখ্যা কমাতে হাইকোর্টগুলি বছরে নূন্যতম ২২২ দিন কর্মদিবস রাখবে’। অর্থাৎ ২২২ দিন হাইকোর্টে সম্পূর্ণ সচল থাকবে বিচারের কাজ।কলকাতা হাইকোর্টের জন্মলগ্ন থেকে এখনও পর্যন্ত লক্ষ্মী পুজো থেকে কালী পুজোর মধ্যে হাইকোর্ট সম্পূর্ণ সচল থাকার রেওয়াজ নেই। জরুরি মামলার জন্য পুজো অবকাশ কিছু বেঞ্চ তৈরি করা হয়।একইরকম ভাবে গরমের ছুটি এবং শীতের ছুটির সময়ও অবকাশ বেঞ্চ তৈরি হয় হাইকোর্টে। তবে সেগুলি সবই জরুরি মামলার জন্য কয়েকটি বেঞ্চ।রাজ্যের ছুটির ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, কলকাতা হাইকোর্টের কর্মদিবস হয় ২১০ থেকে ১২ দিন। ২০২৫ সালের ছুটির নিরিখে কর্মদিবস হচ্ছে ২১২ দিন। কেন্দ্রীয় নির্দেশিকাকে মাথায় রেখে এবং কলকাতা হাইকোর্টের বিচারাধীন মামলার সংখ্যা কমাতে বৈঠকে বসে ছুটি সংক্রান্ত হাইকোর্টের বিশেষ কমিটি এবং তিন আইনজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন, বার লাইব্রেরি পুজোর ছুটির মধ্যে ছুটি বাতিল করায় আপত্তি জানায়। এইসব সংগঠনের  যুক্তি, -‘কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতির সংখ্যা বাড়ানো গেলেই সমস্যার সমাধান করা যায়। ৭২ জন বিচারপতি থাকার কথা হাইকোর্টে। তা দীর্ঘদিন ধরেই নেই। আর এক সংগঠন ‘ইনকরপোরেট ল সোসাইটি’ সহমত পোষণ করেন ৭ দিন কর্ম দিবস বাড়ানোয়।হাইকোর্ট-এর বিশেষ কমিটির প্রস্তাব ছিল, -‘প্রতি মাসের প্রথম এবং তৃতীয় শনিবার হাইকোর্ট খোলা রাখার। আর তা না হলে ছুটির সংখ্যা কমিয়ে কর্ম দিবস বাড়ানো। তবে হাইকোর্টের বিশেষ কমিটি পুজোর ছুটি বাতিল করে কর্ম দিবস বাড়ানোয় সায় দিয়েছে।এখন দেখার হাইকোর্টের দুই সংগঠন যারা আপত্তি জানিয়েছে তারা এই সিদ্ধান্তের মোকাবিলা কীভাবে করে। নিয়ম অনুযায়ী হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ ক্যালেন্ডার তৈরি হয় হাইকোর্ট ফুল বেঞ্চের দ্বারা গৃহীত সিদ্ধান্ত মেনে।  প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, আগামী বছর (‌২০২৫)‌ থেকে আর টানা একমাস ছুটি থাকবে না কলকাতা হাইকোর্ট। ষষ্ঠীর আগে বন্ধ হবে আদালত। আর লক্ষ্মী পুজোর ঠিক পরদিনই খুলে যাবে কলকাতা হাইকোর্ট। আবার কালীপুজোর সময় দু’‌দিন ছুটি থাকবে। তার ফলে অন্তত সাতদিনের কর্মদিবস বাড়বে।এই নিয়ে এখন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। আর এই বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টের এক বর্ষীয়ান আইনজীবী  বলেন, ‘সরকারের আইনজীবীদের কোনও ছুটি নেই। পিএল বা সিএল সবটাই বিচারপতিরা পান। তাই ছুটি কেটে নেওয়া হলে সেটা মেনে নেওয়া হবে না। বরং বৃহত্তর আন্দোলন হবে। সুপ্রিম কোর্টেই তো বছরে ১৯০ দিন কাজ হয়। তাহলে হাইকোর্টের উপরে কোপ কেন?’।  কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী বৈদূর্য ঘোষাল জানান -” আদালতে কর্মদিবস বৃদ্ধি হলে সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের কিছুটা সুরাহা হবেই’।  কলকাতা‌ হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে , ‘শুধু কাজের দিন বাড়ালে মামলার পাহাড় কমবে না। কলকাতা হাইকোর্টে ৭২ জন বিচারপতি থাকার কথা থাকলে সেখানে ২২টি পদ ফাঁকা। শুধু ছুটি বন্ধ করে কাজের দিন বাড়ালেই হবে না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *