মরণোত্তর অঙ্গদানের প্রতিশ্রুতি রক্ষিত হলো নিউ-ব্যারাকপুরের মীরা দেবীর

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী

    গত ২ রা নভেম্বর না ফেরার দেশে চলে যান রাজ্য স্বাস্হ্য দপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী নিউ-ব্যারাকপুরের বাসিন্দা মীরা চক্রবর্তী। মৃত্যুকালে অবিবাহিতা মীরা দেবীর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। বর্তমানে তাঁর দুই ভাই আছেন। পার্থিব পৃথিবীতে জন্ম-মৃত্যু খুব স্বাভাবিক ঘটনা হলেও মীরা দেবীর বিষয়টি ছিল কিছুটা আলাদা।

  ২০২০ সালের ৮ ই আগস্ট ছিল মীরা দেবীর প্রতিবেশী প্রয়াত সুনীল কুমার দাসের পারলৌকিক কাজ। সেখানে অনেকের সঙ্গে  উপস্থিত ছিলেন মরণোত্তর অঙ্গদান সংক্রান্ত বিষয়ে দীর্ঘ সাঁইত্রিশ বছর ধরে প্রশংসনীয় কাজ করে চলা কলকাতার 'গণদর্পণ' সংস্থার সম্পাদক মণীশ সরকার। সেখানেই মীরা দেবী মরণোত্তর দেহদান করার বিষয়ে অঙ্গীকার করলে গণদর্পণের পক্ষ থেকে মণীশ বাবু সমস্ত কিছু ব্যবস্থা করে দেন। তাই মীরা দেবীর মৃত্যুর পর প্রতিবেশী

সমীর দাসের কাছে খবর পেয়ে মণীশ বাবু
নিউ-ব্যারাকপুরে মীরা দেবীর বাসভবনে উপস্থিত হন এবং নিউ-ব্যারাকপুর পুরসভার ফ্রিজে ফ্রিজিং করে রাখা উনার মরদেহ ৩ রা নভেম্বর চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার স্বার্থে আর জি কর মেডিকেল কলেজের এনাটমি বিভাগের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

  প্রসঙ্গত ২০০৮ সালে নিউ ব্যারাকপুরের অশ্বিনী দত্ত রোডের বাসিন্দা সুনীল কুমার  দাস ও তাঁর চার পুত্র সমীর, সলিল, সন্দীপ  ও সৌমেন এবং পুত্রবধূ শুক্লা মরণোত্তর অঙ্গদানের অঙ্গীকার করেন। সেই অঙ্গীকার  রক্ষার জন্যই সুনীল বাবুর শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে মণীশ বাবু উপস্থিত ছিলেন। 

  সমীর বাবুর স্ত্রী শুক্লা দেবী বললেন - মনের মধ্যে কুসংস্কার ও একটু ভয় থাকলেও শ্বশুর, স্বামী সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মরণোত্তর অঙ্গদানের অঙ্গীকার করতে দেখে সমস্ত ভয় ও দ্বিধা কাটিয়ে আমিও অঙ্গদানের অঙ্গীকার করি। আজ বুঝতে পারছি আমাদের এই অঙ্গীকারের ফলে বহু অসহায় মানুষ হয়তো পৃথিবীর রূপ, রস, গন্ধ উপভোগ করতে পারবেন এবং আমরাও মৃত্যুর পর তাদের মধ্যে বেঁচে থাকব। 

    অন্যদিকে মণীশ বাবু বললেন - মীরা দেবীর মত মানুষরা যত বেশি মরণোত্তর    অঙ্গদানের জন্য এগিয়ে আসবেন তত অসহায় মানুষদের উপকার হবে। সঙ্গে সঙ্গে তাদের দেখে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ উৎসাহিত হবে। একইসঙ্গে চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় অনেক সুবিধা হবে। সময়মত খবর দেওয়ার জন্য তিনি সমীর বাবুর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

Leave a Reply