Spread the love

ব্রিটিশ বিরোধী বীর বিপ্লবী শহীদ তিতুমীরের জন্মদিন আজ

কাজী নূর।

। তিতুমীরের প্রকৃত নাম সৈয়দ মীর নিসার আলী তিতুমীর। তিতুমীরের জন্ম ১৭৮২ সালের ২৭ জানুয়ারি উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার বাদুড়িয়া থানার চাঁদপুর গ্রামে। তার পিতার নাম সৈয়দ মীর হাসান আলী এবং মাতার নাম আবিদা রুকাইয়া খাতুন। তিতুমীর গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে স্থানীয় মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি পবিত্র কোরআনে হাফেজ হন এবং ইসলামী ধর্মশাস্ত্র, আইনশাস্ত্র, দর্শন, হাদিসসহ বিভিন্ন বিষয়ে অগাধ পাণ্ডিত্য লাভ করেন। মাদ্রাসায় পড়ার সময় একজন দক্ষ কুস্তিগির হিসেবেও পরিচিতি পান তিতুমীর। তিতুমীর ১৮২২ সালে পবিত্র হজ্ব পালনের জন্য মক্কায় যান। সেখানে বিখ্যাত ইসলামী ধর্মসংস্কারক ও বিপ্লবী নেতা সাইয়িদ আহমদ শহীদের সান্নিধ্যে আসেন। ১৮২৭ সালে মক্কা থেকে দেশে ফিরে চব্বিশ পরগনা, নদীয়া ও ফরিদপুর জেলায় মুসলমানদের মধ্যে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার প্রচার শুরু করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কার ছিল তার আন্দোলনের বিষয়বস্তু। পরবর্তীতে অবশ্য তা অন্য দিকে রুপ নেয়।

ভারতীয় উপমহাদেশে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তিতুমীর নামটি আজও উজ্জ্বল হয়ে আছে। তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে শুধু লড়াই-ই করেননি, বাংলার অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে কৃষকদের সংগঠিত করে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। ইতিহাসবিদরা মনে করেন ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে আরব থেকে বাংলায় আসেন তিতুমীরের পূর্বপুরুষগণ। তিতুমীর ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলীর (রাঃ) এর বংশধর বলে দাবি করা হয়। বাংলার প্রজাদের উপর স্থানীয় জমিদার এবং ইউরোপীয় নীলকরদের অত্যাচার প্রতিরোধ এবং ব্রিটিশ শাসন- শোষন থেকে বাংলাকে মুক্ত করার লক্ষ্যে পরিচালিত গণআন্দোলনের নায়ক তিতুমীর।

তিতুমীর জমিদার ও ব্রিটিশদের বিরূদ্ধে সংগ্রাম ও তার বিখ্যাত ‘বাঁশের কেল্লা’র জন্য ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন। ১৮৩১ সালের ২৩ অক্টোবর বারাসাতের কাছে বাদুড়িয়ার ১০ কিলোমিটার দূরে নারিকেলবাড়িয়ায় বাঁশের কেল্লা তৈরি করেন তিনি। বাঁশ এবং কাঁদা দিয়ে দ্বি- স্তর বিশিষ্ট এই কেল্লা নির্মাণ করা হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্নেল স্টুয়ার্টের নেতৃত্বে পদাতিক, অশ্বারোহী ও বন্দুকধারী সৈন্যদের একটি বিশাল বাহিনী ১৮৩১ সালের ১৪ নভেম্বর বাঁশের কেল্লায় আক্রমণ চালায়। সাধারণ, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আধুনিক অস্ত্রসজ্জিত ব্রিটিশ বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে না পেরে বাঁশের কেল্লায় আশ্রয় নেন তিতুমীর ও তার বাহিনী। ব্রিটিশ বাহিনী কামানের গোলা ছুঁড়ে বাঁশের কেল্লা সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত করে দেয়। যুদ্ধরত অবস্থায় এই বাঁশের কেল্লাতেই ১৮৩১ সালের ১৯ নভেম্বর শহীদ হন তিতুমীর। তথ্যসূত্র- সংগৃহীত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *