বেঙ্গল ক্রিয়েটিভ ক্লাবের প্রদর্শনী সার্থকতা লাভ করল
সংবাদদাতা: সৃষ্টিকর্তার সবথেকে বড় সৃষ্টি হলো মানুষ, তাই নারী এবং পুরুষের দেহের শৈল্পিক ঐশ্বর্য কে পরিপূর্ণরূপ দিয়ে সৃষ্টি করে সৃষ্টিকর্তা আজও শ্রেষ্ঠ শিল্পী ।। সৃষ্টিকর্তার এই মহান সৃষ্টির কৌতুহল নিয়ে আজও শিল্পীরা কাজ করে চলেছে বিভিন্ন মাধ্যমে।এই কথা কে মাথায় রেখে অভিনব ভাবনায় বিশিষ্ট অধ্যাপক এবং শিক্ষাবিদ সুরথ চক্রবর্তী “বেঙ্গল ক্রিয়েটিভ ক্লাবের” পক্ষ থেকে কলকাতা নিউ টাউনে ১০ ও ১১ ই ফেব্রুয়ারি দুদিন ধরে “নজরুল তীর্থে ” এক ঝাঁক নক্ষত্র শিল্পীদের নিয়ে চিত্র, আলোকচিত্র, এবং ভাস্কর্য র মাধ্যমে অনুষ্ঠিত করল একেবারেই ভিন্ন অভিনবত্বের দাবি রাখে এমনই এক প্রদর্শনী “দি শেডস অফ ন্যুড” ।। হাজার হাজার বছর আগে থেকে বিভিন্ন শৈল্পিক স্থাপত্য ও মন্দিরের গায়ে মানুষের আদিম শৈল্পিক সৌন্দর্য শিল্পীরা কখনো এঁকেছেন, কখনো বা পাথর ও প্রাকৃতিক সরঞ্জাম দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছে। আসলে শিল্পী মহলে নারী পুরুষের দৈহিক সৌন্দর্যের ভাবনা আজও ভাবিয়ে তুললেও আমাদের সমাজে তেমনভাবে মানুষকে ভাবায় না, আজও আমাদের সমাজে নারী পুরুষের দেহের শৈল্পিক ঐশ্বর্যকে লজ্জার মোড়কে ঢেকে রাখা হয়েছে। অভিনবত্বের বিষয় হল কলকাতা তিলোত্তমা খ্যাতি সম্পন্ন মডেল শর্মিষ্ঠা রায়চৌধুরীকে নিয়ে ৯৬ টি পেন্টিং, ফটোগ্রাফি ও স্কাল্পচার করেছেন এক ঝাঁক নক্ষত্র শিল্পী। একটিমাত্র ক্যারেক্টার (শর্মিষ্ঠা রায় চৌধুরী) নিয়ে এত জন নক্ষত্র চিত্রশিল্পী চিত্রগ্রাহক রা যে কাজ করেছেন তা প্রত্যেকে প্রশংসার দাবি রাখে। আগামী দিনে এর পরে হয়তো এই ধরনের প্রদর্শনী করার ইচ্ছে অনেকের হবে কিন্তু প্রথম কাজ হিসাবে শর্মিষ্ঠা রায়চৌধুরীকে এবং এইসব এক ঝাঁক শিল্পীদের ইতিহাস মনে রাখবে। প্রদর্শনীতে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে উদ্বোধন করলেন ইমেজক্রাফটের প্রেসিডেন্ট শংকর দাস, গায়ক সুরকার সুরজিৎ চ্যাটার্জি, পন্ডিত মল্লার ঘোষ, পন্ডিত সুভাষ সিংহ, পরিচালক আর ডি নাথ, রাশিয়ার বিমান ভট্টাচার্য, শিল্পী সুরথ চক্রবর্তী, চিত্রশিল্পী ও বিজ্ঞাপন ডিজাইনার দীপঙ্কর সমাদ্দার,মিস কোলকাতা তিলোত্তমা শর্মিষ্ঠা সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। এক্সিবিশন হলটি ছিল জন জোয়ারে প্লাবিত। গায়ক সুরজিৎ চ্যাটার্জি বলেন এই এক্সিবিশন শুধু ভারত নয়, বিশ্বের বুকে একটি শুভ বার্তা প্রেরণ করবে এবং ইতিহাস সৃষ্টি করবে। তিনি শিল্পী সুরথ চক্রবর্তীর এই ভাবনাকে কুর্নিশ জানান। ড: পার্থ সারথি মুখার্জি জোরালো কন্ঠে ভুয়সী প্রশংসা করে জানালেন বৈদেশিক আক্রমণে ভারতবর্ষের শিল্প সংস্কৃতির যে ক্ষতি হয়েছিল, সেই ক্ষতি এই এক্সিবিশন সমাজকে শুভ বার্তা দিয়ে তা পূরণ করবে।
বিশ্ব বিখ্যাত স্কাল্পচারিস্ট রামকুমার মান্না শর্মিষ্ঠার প্রায় ৬ ফুট উচ্চতার মূর্তি তৈরি করেন। এক্সিবিশনের প্রধান আকর্ষণ ছিল শিল্পী সনাতন দিন্দার বিশালাকৃতির পেইন্টিং, আর ডি নাথের ব্রহ্মাণ্ড এবং নারী নিয়ে কাজ, গোপাল নস্করের অনবদ্য প্রত্যেকটি পেন্টিং অসাধারণ এবং অন্য এক ঘরানায় আঁকা ।।অসাধারণ চিন্তাভাবনা মাথায় রেখে নতুনত্বের ছোঁয়ায় চিত্র গ্রাহক সুরথ চক্রবর্তীর র প্রত্যেকটা ফটোগ্রাফিকে পেইন্টিংয়ের রূপদান করেছেন , প্রশংসার দাবি রাখে।। সুদূর দিল্লি থেকে আসা দিল্লি আর্ট কলেজের অধ্যাপিকা ডঃ সবিতা নাগ জানালেন শুধু শিল্পীদের নয় প্রত্যেকটা মানুষের এই স্বাভাবিক শারীরিক শৈল্পিক সৌন্দর্য কে স্বাভাবিকভাবে দেখতে হবে এবং ভারতের প্রত্যেকটি রাজ্যে এই এক্সিবিশন পুনরায় হওয়া উচিত। উদ্বোধনের দিন ই এই এক্সিবিশন দেখার জন্য এত মানুষের ভিড় চোখে পড়ার মতো। ইন্দ্রনীল ঘোষ এর ভাস্কর্যটি দৃষ্টিনন্দন, চিত্রগ্রাহক দীনেশ খান, উৎপল দাস, শুভাশিস ভাঞ্জা, শ্রীতনাথ পাল, রানা রায়চৌধুরী, রূপকথার রুদ্র, প্রসেনজিৎ সান্যাল, ইন্দ্রনীল পাল এদের প্রত্যেকটি আলোকচিত্র হয়ে উঠেছিল এক একটা তৈলচিত্রের ক্যানভাস। সুমিত বোসের আলো-আঁধারির ফটোগ্রাফিটি একটি অন্য মাত্রা এনেছে। “বেঙ্গল ক্রিয়েটিভ ক্লাবের” নতুনত্বের ছোঁয়ায় সমগ্র প্রদর্শনী টি একটি অন্ন মাত্রা এনেছিল। এত সুন্দর একটি প্রদর্শনীতে আলোর ব্যবহার আরো একটু ভালো ও ছবিগুলি আরেকটু সুন্দরভাবে সাজানোর দাবি রাখে।।