বেকসুর দাবি করে ডিভিশন বেঞ্চে আরজিকর কান্ডে আসামি সঞ্জয়, নির্ভয়ার পরিবারের আবেদন খারিজ শিয়ালদহ আদালতে 

মোল্লা জসিমউদ্দিন, 

একদিকে নিজেকে বেকসুর দাবি করে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আপিল দাখিল করলো আরজিকর কান্ডে আমৃত্যু কারাবাস প্রাপ্ত আসামি সঞ্জয় রায়। অপরদিকে বুধবার শিয়ালদহ আদালত নির্ভয়ার পরিবারের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার আবেদন খারিজ করলো।আরজি কর কাণ্ডের  পর বছর ঘুরতে চলল। মেডিক্যাল কলেজে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায় এবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ। শিয়ালদা কোর্ট ডাক্তারি পড়ুয়াকে ধর্ষণ ও খুন করার অপরাধে আজীবন কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছিল সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয়কে। এবার সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন জানাল সে।জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় সে নির্দোষ এবং এরফলে এই ঘটনায় তাকে মুক্তি দিক আদালত, এই আর্জি জানিয়েছে সঞ্জয়। কলকাতা হাইকোর্টের  বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে আবদেন করেছে সে। আগামী ১৬ জুলাই এই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে । অপরদিকে আরজি কর কাণ্ডের  নির্যাতিতার বাবা-মা ঘটনাস্থলে যাওয়ার আর্জি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সিবিআই তাঁদের আর্জিতে আপত্তি জানায়নি। বুধবার এই মামলার শুনানিতে শিয়ালদহ আদালত  নির্যাতিতার পরিবারের সেই আবেদন খারিজ তো করলেই, পাশাপাশি  ভর্ৎসনা করল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইকে। নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী দাবি করেছিলেন, ‘লাস্ট সিন থিওরি’  মেনে তদন্ত হয়নি। তাই ঘটনাস্থল বা ‘প্লেস অফ অকারেন্স’  পরিদর্শন করতে চান তাঁরা। একই সঙ্গে, নিজেদের বিশেষজ্ঞ টিমও সেখানে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। প্রথমে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেও পরে নির্দেশমতো শিয়ালদহ আদালতে এই মামলার শুনানি হয়। বুধবার নির্যাতিতার পরিবারের আর্জি খারিজ করে দিয়েছে  শিয়ালদহ কোর্ট। পাশাপাশি নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে।শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অরিজিৎ মণ্ডল কার্যত বিস্মিত হয়েছেন সিবিআই-এর ‘নো অবজেকশন’ নিয়ে। তিনি জানিয়েছেন , ‘পরিবারের আবেদনপত্র দেখে মনে হয়েছে তাঁদের আইনজীবীরা সমান্তরাল তদন্ত করতে চান। এতেই অবাক হচ্ছি, কেন সিবিআই কোনও নো অবজেকশন দিল না। সিবিআইয়ের অবস্থা শোচনীয়।’ এই প্রসঙ্গেই আদালতের প্রশ্ন – তাহলে কি সিবিআই মনে করছে তাঁদের তদন্তই ঠিক হয়নি? তাঁদের ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা কি ঠিক কাজ করেনি? এটাই যদি হয় তাহলে এতদিন বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের তদন্ত কীভাবে হল? তাৎপর্যপূর্ণভাবে, এদিন মামলার শুনানিতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তরফে কোনও আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না।সিবিআইয়ের প্রতি আদালতের ক্ষোভ এখানেই শেষ নয়। আরজি করের ধর্ষণ-খুন মামলা ছাড়াও আর্থিক দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ রায় এবং টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডল। কিন্তু একটি মামলায় তাঁরা জামিন পেয়ে যান। সিবিআইয়ের চার্জশিট জমা না দেওয়ার জন্যই দুজন জামিন পেয়েছেন। পরিশেষে, নির্যাতিতার পরিবারের আর্জি খারিজ করে আদালত সাফ জানিয়েছে – ‘আইনে কোথাও এরকম অনুমতি দেওয়া হয়নি’।নির্যাতিতার বাবা-মা শুরু থেকেই সিবিআই-এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এসেছেন। ক্ষোভের সুরে তাঁদের এও দাবি, -‘টাকা নিয়ে তদন্ত ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে! ‘পুরনো স্ট্যাটাস রিপোর্টের পয়েন্ট ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলার অভিযোগও তুলেছেন তাঁরা। যদিও সিবিআই জানিয়েছে , -‘তাঁরা এখনও তদন্ত করছে।’ কিন্তু বুধবার  শিয়ালদহ আদালত যে প্রশ্ন তুলেছে তাতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন স্তরে।

Leave a Reply