Spread the love

বৃহত্তর লিভার সিস্টের সফল অপারেশন বর্ধমানে 

 মোল্লা জসিমউদ্দিন , 

সফল অপারেশনের ফের নজির বর্ধমান শহরে। ১৪/১২ সেমি আকারে ৬৫০ মিলিলিটার জল থাকা এক বৃহত্তর লিভার সিস্টের সফল অপারেশন হলো বর্ধমান শহরে এক বেসরকারি নার্সিংহোমে।শল্যবিদ চিকিৎসক ডক্টর প্রণয় ঘোষের নেতৃত্বে এক মেডিকেল টিম গত ৩০ নভেম্বর টানা তিন ঘন্টার এই অপারেশন টি চালায়।লিভার সিস্টে থাকা জমা জল ফেটে গেলে রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনাও ছিল।যদিও রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছেন।রবিবার দুপুর ওই বেসরকারি নার্সিংহোম থেকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, বর্ধমান শহরের শ্রীপল্লির বাসিন্দা পূর্ণিমা ক্ষেত্রপাল (৬৮) পেটের ব্যাথা এবং কোন কিছু খেলেই বমি হওয়া রোগে ভুগতেন।এমতাবস্থায় ওই বেসরকারি নার্সিংহোমে অভিজ্ঞ চিকিৎসক শল্যবিদ প্রণয় ঘোষ এর নির্দেশমাফিক সিটি স্কান করা হয়। দেখা যায় পেটের ডানদিকে বলের মত অবস্থান করছে লিভার সিস্ট টি।১৪/১২ সেমি ব্যাসার্ধের ওই লিভার সিস্টে ৬৫০ মিলিলিটার মত জল ছিল। আরও দেখা যায় লিভারের আট ভাগের মধ্যে তিনভাগে অবস্থান করছে এই সিস্টটি।যা রীতিমতো ঝুঁকিপূর্ণ।তবে শল্যবিদ চিকিৎসক প্রণয় ঘোষের নেতৃত্বে মেডিকেল টিম গত ৩০ নভেম্বর টানা তিন ঘন্টার অপারেশন এই শারীরিক সমস্যার অবসান ঘটায়।কয়েকদিন নজরদারি চালানোর পর রবিবার দুপুর সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় পূর্নিমা কে তার বাড়ির লোকজন নিয়ে যায় বলে জানা গেছে।এর আগে স্বাস্থ্য সাথীর কার্ডে বিরল রোগের অপারেশন হয়েছিল  এক বেসরকারি নার্সিংহোমে।বিশ্বের ০.১৩% থেকে ০.৩%  ব্যক্তি এই রোগের আক্রান্ত হন।এই রোগটির নাম এসএমএ সিন্ড্রোম। এই রোগের রোগীদের খাবার খেলেই শতকরা ৯০ ভাগ বমি হয়ে যায়, বাকিটা পাকস্থলীতে যায় খাবার পাচনের জন্য।মূলত খাদ্যনালীর বিরল রোগ এটি।একটি মানুষের গড়ে খাদ্যনালীর ৪৫ ডিগ্রি থেকে ৬০ ডিগ্রির মধ্যে থাকে।এই খাদ্যনালীর ডিগ্রির হেরফের হলে তখনই এই সমস্যা দেখা যায়। ক্ষুদ্রান্ত্র – বৃহদান্ত্র সমস্যায় মূল সমস্যা হিসাবে উঠে আসে। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া শহর সংলগ্ন শ্রীখন্ডের চন্দ্রকোঠা গ্রামের ফতেমা বিবির মেয়ে রিয়া খাতুন এই রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন বর্ধমান শহরের নবাবহাট এলাকার  এক বেসরকারি নার্সিংহোমে। গরিব এই পরিবারের চিকিৎসার জন্য সম্বল মানবিক মুখ্যমন্ত্রীর ‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ড।যেখানে সরকারি হাসপাতালেই অনেক সময় রোগীর চিকিৎসায় হয়রানির অভিযোগ তোলেন রোগীর আত্মীয়রা। সেখানে এক বেসরকারি নার্সিংহোম এগিয়ে এলো স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সার্থক রূপায়ন করতে। এই বিরল রোগের অপারেশন করতে নার্সিংহোম কিংবা বেসরকারি হাসপাতালে লক্ষাধিক টাকার খরচ ঘটে।সেখানে বিনামূল্যে অপারেশন এবং সু চিকিৎসার যাবতীয় সুবিধা দিল এই নার্সিংহোম। গত ২২ অক্টোবর বিশিষ্ট শল্যচিকিৎসক প্রণয় ঘোষের নেতৃত্বে এক মেডিকেল টিম টানা তিন ঘন্টা অপারেশন করে থাকেন।খাদ্যনালী গুলি চাপ পেয়ে একপ্রকার পেচিয়ে গিয়েছিল।সেখানে সেলাই না করে ‘স্টেপলার’ পদ্ধতিতে এই বিরল রোগ থেকে মুক্তি দিল এই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। ১১ বছরের রিয়া খাতুনের ওজন মাত্র ১৬ কেজি। খাবার ঠিকঠাক হজম না হওয়ার জন্য এই অল্প ওজন বয়স অনুপাতে দেখা যায় এই ধরনের রোগীদের। ডক্টর প্রণয় ঘোষ জানিয়েছেন – ” আমরা এখনও কয়েকদিন পর্যবেক্ষণে রাখছি, খাদ্যনালীর মূল সমস্যা মিটে গেছে অনেকটাই”।  রিয়ার মা ফতেমা বিবি বলেচ্ছেন – ” আমরা অনেক জায়গায় গিয়েছি রোগের চিকিৎসা করাতে,বেশিরভাগ জায়গা হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। তবে প্রণয় ডাক্তারবাবু আমাদের কাছে দেবদূতদের মতো”। কাটোয়া বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টপাধ্যায় জানান -” আমাদের মুখ্যমন্ত্রী কতটা মানবিক তা স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে অসংখ্য মানুষ উপকার পাচ্ছেন। শ্রীখন্ডের রিয়ার পরিবার তারই নবতম সংযোজন “।  এরেই মধ্যে ওই চিকিৎসক ডক্টর প্রণয় ঘোষের নেতৃত্বে বৃহত্তর লিভার সিস্টের সফল অপারেশন হলো বর্ধমানে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *