গোরু পাচার মামলায় আজও তিহাড়ে জেলবন্দি  অনুব্রত

সাংকেতিক  চিহ্নে গোরু ও মোষ পাচার চলছে অবাধে

       খায়রুল  আনাম

বহু চর্চিত গোরু পাচার মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের  হাতে গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন  আসানসোল জেলে বন্দি ছিলেন বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্ট মণ্ডল ও তাঁর সরকারি দেহরক্ষী  সেহগাল হোসেন। পরে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আর্থিক দুর্নীতির মামলা দায়ের হয় এবং এইসব মামলার তদন্তের সাথে যুক্ত হয় অপর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি।  পরবর্তীতে সেহগাল হোসেন ও অনুব্রত মণ্ডলকে স্থানান্তরিত করা হয় তিহাড় জেলে। এই তিহাড় জেলেই বন্দি রয়েছেন অনুব্রত মণ্ডলের কন্যা সুকন্যা মণ্ডল।  তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্য মঞ্চেই জানিয়ে দিয়েছেন, কেষ্ট চোর আমি বিশ্বাস করি না।  দলীয় কর্মীদের  উদ্দেশ্যে তিনি জানিয়েও দিয়েছেন যে, কেষ্ট যে দিন জেল থেকে বেরিয়ে  আসবে সেদিন আপনারা তাঁকে বীরের সম্মান দিয়ে বরণ করবেন। আবার দেখা গিয়েছে,  জেলায় বেশ কয়েকটি জায়গায় তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় কার্যালয়ের দেওয়ালে থাকা অনুব্রত মণ্ডলের ছবি মুছে ফেলা হয়েছে। কিন্তু এবার মকরসংক্রান্তিতে দেখা গেল, জেলার জয়দেব-কেন্দুলি মেলা উপলক্ষ্যে যে সব দলীয় তোরণ করা হয়েছে তার প্রতিটিতে এবং জয়দেব-কেন্দুলির মেলায় অনুব্রত মণ্ডলের ছবিতে ছয়লাপ করে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই গুঞ্জন ছড়িয়েছে যে, আসন্ন লোকসভা ভোটের আগেই অনুব্রত মণ্ডল মুক্ত আকাশের নীচে ফিরে আসছেন। কিন্তু যে প্রশ্নটি বড় হয়ে হয়ে উঠেছে তা হলো,  গোরু পাচার মামলায় অনুব্রত  মণ্ডল জেলবন্দি থাকার পরে কী গোরু পাচার  বন্ধ হয়েছে ? 

     এখন দেখা যাচ্ছে,  উত্তরপ্রদেশ  ও হরিয়ানা  থেকে চোরাপথে  গোরু এনে জড়ো করা হচ্ছে  ঝাড়খণ্ডের হিরণপুর পশুহাটে। সেখান থেকে গোরুগুলিকে আনা হচ্ছে  বীরভূমের মুরারই ও পাইকর হাটে। গোরুর সাথে সাথে এখন মোষও পাচার হয়ে আসছে একই পথে।  এই এলাকার এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি ও এক পাথর ব্যবসায়ী এখন গোরু ও মোষ পাচারের কারবারে জড়িয়ে ‘পুলিশের একাংশকেও হাতে করেছে’ বলে অভিযোগ উঠেছে। এদের প্রভাব ও যোগসূত্রেই মুর্শিদাবাদ হয়ে গোরু-মোষ বাংলাদেশে পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।  গত ৯ জানুয়ারি রাত্রে কন্টেনার বোঝাই  করে  মোষ  পাচারের সময় মুরারই পুলিশ একটি কন্টেনার আটক  করে মোষ উদ্ধার করেছে।  আর এরপরই  গোরু ও মোষ পাচার করার জন্য কোনও গাড়ি ব্যবহার না করে বিভিন্ন এলাকার ভিতর দিয়ে হাঁটাপথে এই পাচার শুরু হয়েছে।  গোরু ও মোষের মালিক কে তা চিহ্নিত করার জন্য তাদের গায়ে  ইংরেজিতে  ‘আর’ ও  ‘ক্রশ’ চিহ্ন এঁকে দেওয়া হচ্ছে। যে সব এলাকার উপর দিয়ে নির্দিষ্ট  পথে গোরু ও মোষ হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সেইসব এলাকাতে টাকার বিনিময়ে পাচারকারীর মাথারা প্রভাবশালী লোকও নিয়োগ করছে।

      পাচারের এই হাঁটাপথে এবার  মুরারই থানার পুলিশ  ২০ টি গোরু-সহ আব্দুল্লাপুর মোড়ে কামাল হোসেন ও  শেখ গাউসকে আটক করে।  কামাল হোসেনের বাড়ি আব্দুল্লাপুরে ও শেখ গাউসের বাড়ি স্থানীয় গোপালপুরে। তাঁরা স্বীকার করেন যে, মালিকের গোরুগুলিকে তাঁরা ঝাড়খণ্ড থেকে সীমান্ত পেরিয়ে  মুরারই হয়ে হাঁটিয়ে নির্দিষ্ট পথে মুর্শিদাবাদের বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছে  দিতেন। সেখান থেকে গোরুগুলিকে সীমান্ত পেরিয়ে  বাংলাদেশে পাচারের জন্য অন্য লোক রয়েছে। এর কয়েকদিন আগেই  পাচারের আগে ১৪ টি গোরু আটক করার পাশাপাশি চারজন পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছিল মুরারই থানার পুলিশ। এই চারজনেরই বাড়ি এলাকার পাইকর ও বলরামপুরে। সেই গোরুগুলির গায়েও  ‘আর’ ও ‘ক্রশ’ চিহ্ন থাকায় পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে যে, ওই দুই প্রভাবশালী ব্যক্তিই এই পাচারের মাথা এবং তাঁরা তাঁদের প্রভাবও বিস্তার করে ফেলেছে ।। 

ছবি  :  গোরুর হাট।

Leave a Reply