বিচারপতি বসু কে অবমাননা এবং বিকাশদের নিগ্রহের মামলায় কুণালদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চ বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু এবং আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ঘটনায় আদালত অবমাননার রুল জারি করল । কলকাতা হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চের বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য এবং রাজর্ষি ভরদ্বাজ জানান, -‘সব অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করা হল’। বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর অবমাননা, আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও ফিরদৌস শামিমকে হেনস্থার অভিযোগ নিয়ে এই মামলা। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধে রুল জারি করল কলকাতা হাইকোর্ট। কুণাল ঘোষ-সহ বাকি ৭ জনের বিরুদ্ধেও রুল জারি করেছে আদালত। এই মামলায় বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, ‘এটা খুব সিরিয়াস বিষয়।আদালত নির্দেশের পরেও কেউ মানছে না।” আইনজীবীদের হেনস্থার ঘটনায় তিন বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চ গঠন করা হয় আলাদত।এদিন কুণাল-সহ ৮ জনের বিরুদ্ধে রুল জারির নির্দেশ দেয় বিশেষ বেঞ্চ।সুপার নিউমারারি পোস্ট সংক্রান্ত মামলার নির্দেশে প্রশ্ন তুলে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও আইনজীবী ফিরদৌস শামিমকে হেনস্থার অভিযোগ ওঠে চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, বিকাশের দুই জুনিয়র আইনজীবীদের জুতো দেখান তাঁরা। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য এবং স্লোগান দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর এই ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে অভিযোগ জানানো মাত্রই তিনি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মামলা গ্রহণ করেন। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন বার অ্যাসোসিয়েশনের কয়েক জন আইনজীবী। তিন বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হবে বলে স্থির করে দেন প্রধান বিচারপতি। এই বেঞ্চের সদস্যেরা হলেন বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ। আগের শুনানিতে বিচারপতি এই ঘটনায় অভিযুক্তদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়ে রিপোর্ট তলব করা হয়েছিল। কিন্তু কারোর তরফেই কোনও উত্তর না মেলায় ক্ষুব্ধ হন বিচারপতিরা।সোমবারের শুনানিতে আদালতে হাজির ছিলেন কুণাল ঘোষ। ফৌজদারি আদালত অবমাননা হয়েছে বলে উত্তর চায় আদালত। সেই উত্তর অভিযুক্তরা কেউ দেয়নি। বিরক্ত হয়ে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রুল জারি করে বিশেষ বেঞ্চ।বিচারপতি এদিন প্রশ্ন করেন, ” ২ মে নির্দেশ দেওয়া হয়, তারপরেও অভিযুক্তরা কেন কেউ মানেননি?” কুণাল ঘোষের আইনজীবী বিশ্বরূপ ভট্টাচার্য বলেন, “আমার বিচারব্যবস্থার উপর আস্থা আছে। হলফনামা তৈরি করেছি। আমাদের কিছু সমস্যা থাকায় হয়নি।” কুণালের আইনজীবী জানান , সেদিন ঘটনাস্থলে কুণাল ঘোষ উপস্থিত ছিলেন না। তিনি একটি বৈদ্যুতিন চ্যানেলের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন।তখন বিচারপতি কুণালের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, “যাই বলুন না কেন, কেন দেরি হল তা আদালত জানতে চায়।” তখন হেনস্থা হওয়া আইনজীবীদের তরফে এক আইনজীবী বলেন, “রুল ইস্যু করলেই দেখবেন সবাই আসছে। নাহলে কেউ গুরুত্ব দেয় না।” এরপরই বিচারপতি নির্দেশ দেন, “আমরা সবার বিরুদ্ধে রুল ইস্যু করছি। কারণ নির্দেশ কেউ মানেননি।” নিগৃহীত আইনজীবীদের আরেক আইনজীবী বলেন , “সেদিনের ঘটনার সঙ্গে কুণাল ঘোষের লিঙ্ক রয়েছে।”কুণাল ঘোষের তরফ থেকে আরও একটু সময় চাওয়া হয়। কুণাল ঘোষ বলেন, “আমার কিছু বলার রয়েছে।” তখন বিচারপতি বলেন, “না, আর সময় দেওয়া নয়। আজ এ পর্যন্তই থাক। আপনাকে তো জেলে পাঠাচ্ছি না, আমরা রুলের উত্তর চাই। বাকিদের বিরুদ্ধে আমরা রিপোর্ট দেখে সিদ্ধান্ত নেব।” আগামী ১৬ জুন এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।