বাঘের হানায় নিহত তিনটি পরিবার কে আর্থিক ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দিতে বললো হাইকোর্ট 

মোল্লা জসিমউদ্দিন  

সম্প্রতি  কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ বাঘের হানায় ৩ টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার কে দ্রুত আর্থিক ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দিতে বললো ।  আদালত সুত্রে জানা গেছে,  তিনটি পৃথক ঘটনা ঘটেছিল যথাক্রমে ১৪ বছর, ১১ বছর এবং ৬ বছর আগে। তিনটি ক্ষেত্রেই বাঘের হানার গিয়েছিল তিন ব্যক্তির প্রাণ। যাঁরা প্রাণ হারিয়েছিলেন, ভেসে গিয়েছিল তাঁদের পরিবার। এবার সেই তিনটি পরিবারকেই ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।আদালত সূত্রে আরও জানা গিয়েছে – নিহত তিন পরিবারের বক্তব্য এবং অন্যান্য পক্ষের কথা শোনার পর বিচারপতি রায় দেন – বাঘের হামলায় মৃত তিন ব্যক্তির পরিবারকেই ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অর্থাৎ – সব মিলিয়ে মোট ১৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ। রাজ্যের উচ্চ আদালত জানিয়েছে – -‘রায় ঘোষণার পরবর্তী আট সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য সরকারের তরফে বন দফতর ভুক্তভোগী পরিবারগুলির সদস্যদের হাতে এই টাকা তুলে দেবে’। এই আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলিকে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়েছে। লড়তে হয়েছে মামলা। যাঁরা বাঘের হামলায় নিহত হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম – নিরাপদ মণ্ডল। তিনি গোসাবার বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর মৃত্যু হয় প্রায় ১৪ বছর আগে।ভুক্তভোগী দ্বিতীয় পরিবারটি হল প্রয়াত বিশ্বজিৎ মণ্ডলের। তিনি ছিলেন সুন্দরবন কোস্টাল থানা এলাকার বাসিন্দা। প্রায় ১১ বছর আগে তাঁকে বাঘের হামলায় প্রাণ হারাতে হয়েছিল। এত দিনে সেই ঘটনার জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেতে চলেছে মণ্ডল পরিবার।এছাড়াও, ৬ বছর আগে বাঘের কবলে পড়ে জীবন খোয়াতে হয়েছিল অর্জুন মণ্ডলকে। সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি  নির্দেশে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাবেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।প্রসঙ্গত, বাঘের হামলায় মৃত্যুর ঘটনায় নিয়ম অনুসারে – ৫ লক্ষ টাকা করেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। কিন্তু, আগে তাতে বেশ কিছু জটিলতা ছিল। অভিযোগ ছিল – নানা নিয়মের দোহাই দিয়ে বেশ কিছু ক্ষেত্রে বন দফতর ক্ষতিপূরণ দিত না। কিন্তু, ২০২৩ সালে এই সংক্রান্ত একটি মামলায় সেই জটিলতা বহুলাংশেই দূর করে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।আদালত জানিয়ে দেয়, বাঘের হামলায় কারও মৃত্যু হয়েছে বলে প্রমাণিত হলেই নিহতের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সেক্ষেত্রে হামলার ঘটনাটি জঙ্গলের গভীরে (কোর এলাকা) ঘটেছে, নাকি বসত অঞ্চলের কাছে (বাফার জোন) ঘটেছে – সেইসব বাছবিচার করলে হবে না। রুজির টানে কোনও মানুষ যদি জঙ্গলে ঢুকতে বাধ্য হন, আর তারপর যদি তাঁর বাঘের হানায় মৃত্যু হয়, তাহলে শুধু গভীর জঙ্গলে ঢোকার কারণে তাঁর পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।এতে স্বস্তি পেল ওই অসহায় তিনটি পরিবার। 

Leave a Reply