সম্পাদক সমীপেষু,
বাগ্ দেবী নাকি এখন প্রেমের দেবী ভেনাস !
সরস্বতী পুজো মানে আবেগ । শৈশবকে নতুন করে ফিরে পাওয়া । শুভ্র দেবী সরস্বতী ,তার বাহন হাঁস থেকে শুরু করে বীণা (একটু খয়েরি রঙ থাকে) পর্যন্ত শ্বেত
রঙ কখন মনের সাদা রঙে মিশে যায় ! ভক্তি ,শ্রদ্ধা ,আবেগে দেবী আরাধনায় আমরাও চঞ্চল হয়ে উঠি ।
সরস্বতী পুজোর আগে কুল খাওয়া নিষেধ । কুল খেলেই ফেল । নির্ঘাত দেবী সরস্বতীর অভিশাপ নেমে আসে কপালে । যদিও পূজোর আগে পাড়ার কুল গাছের সব কুল সাবাড় হয়ে যায় । হবে না বা কেন ? টোপা টোপা পাকা কুল দেখে কতক্ষণ জিভে জল সামলানো যায় ! কুল গাছে মারো ঢিল । ঝ- ঝর ঝ -ঝর করে ঝরে পড়ে একরাশ কুল । কুড়িয়ে নিয়ে দে ছুট । আদম ,ইভের মতো শিশু মনে নিষেধের গণ্ডি ভাঙ্গার অদম্য ইচ্ছা । একে জন্মগত পাপ বলে ! সরস্বতী পূজোর কত আ্যডভেঞ্চার ,কত আনন্দের ! পুজো কদিন পড়াশোনা শিকেয় ওঠে । আমার পড়াশোনার বইগুলো জমা থাকে সরস্বতী দেবীর পায়ের নীচে । পুজোর পরেও বই এর মধ্যে থেকে পেতাম শুকনো গাঁদা ফুল ,কখনো ঝরা ছেঁড়া পাতা আর মৃদু গন্ধের শিহরণ । এক অপার্থিব ক্ষণিকের আনন্দ ।
আমাদের বিদ্যাদেবী কবে চুরি হয়ে গেছে ।
আমাদের বিদ্যাদেবী সরস্বতী নাকি এখন কাদের প্রেমের দেবী হয়ে গেছে । বাগ্ দেবী নাকি এখন প্রেমের দেবী ভেনাস !
তাই সরস্বতী দেবীকে আজকাল প্রেমের দেবী বানিয়ে প্রেম দিবস পালন করে তারা যৎপরোনাস্তি খুশি । পশ্চিমীদের অন্ধ অনুকরণ করে বিদ্যাদেবী সরস্বতী থেকে প্রেমদেবী ভেনাস বানিয়ে ছেড়েছে । ইংরেজরা তাদের কলোনি ভারতবর্ষ ছেড়ে চলে গেছে যেমন ঠিক ,তেমনি তাদের দেহজ সুখের কৃষ্টি কালচারের কলোনি ছেড়ে আমরা এখনো বাহির হতে পারি নি ,এ কথাও ঠিক । দাসত্ব চিন্তা কখনো মুক্ত চিন্তার জন্ম দিতে পারে ? এরকম অন্ধ অনুকরণ উত্তোরণ না অবতরণ আমি জানি নে । গ্ৰীক বিদ্যাদেবী আ্যথিনাকে কেউ কখনো প্রেমদেবী ভেনাস ( ইংরেজদের প্রেমের দেবী ) বানাতে পারে ? গ্ৰীক সুন্দরী হেলেনকে চুরি করে ট্রয় নগরী হাড়ে হাড়ে বুঝেছিল । ছোটোদের বা দোষ কী ? এখন দুর্গা পুজোকে আমরা কার্নিভাল বানিয়ে আনন্দ পাই । আনন্দের মত্ততা সহকারে রোমান ক্যাথলিকদের এক পর্ব বিশেষ পালন হচ্ছে কার্নিভাল । তার সঙ্গে আমাদের দুর্গা পুজোর কোথায় মিল পায় কে জানে । হয়তো ভক্তি ,শ্রদ্ধার ক্রাইসিস থেকে হবে ।
সরস্বতী দেবী আমাদের কাছে আনন্দময়ী, বিদ্যাদেবী । কটা দিন দারুণ আনন্দের মধ্যে দিয়ে কেটে যায় । উপোস করে, হুড়োহুড়ি করে দেবীর চরণে পুষ্পাঞ্জলি দারুণ উন্মাদনা ! মাথা নত করে ,চোখের পাতা বন্ধ করে পুরোহিতের সুরে গলা মিলিয়ে মন্ত্র পাঠ কেউ কখনো ভোলে ! চোখের জলে দেবীর বিসর্জন বড় দুঃখের ছিল ।
স্কুলে স্কুলে সরস্বতী পুজো হয় । এখনোও হয় । কোথাও কোথাও হয় না, নাকি ধর্ম নিরপেক্ষতায় আঘাত লাগে । ছেলে মেয়েদের মনে আঘাত লাগলে বা কী । কোভিডে কয়েক বছর ধরে স্কুল বন্ধ । সরস্বতী বন্দনা ও বন্ধ । দুঃখে দেবীর বীণা বাজে না । তার বিনিময়ে বাজে মাইকের সুতীব্র হর্ণ । পুজো বটে । কার্নিভালের মতোই ঢাকের তালে কোমর দোলে । এমন পুজো প্রেম দিবস হবে বৈকি ।
সুবল সরদার
মগরাহাট
দক্ষিণ ২৪ পরগণা
তাং ২৯ ০১ ২০২২