নজিরবিহীন নির্দেশ ব্যাঙ্কশাল আদালতের

বড়তলা শিশুকন্যা যৌন নির্যাতনে আসামি কে ফাঁসির নির্দেশ

মোল্লা জসিমউদ্দিন,

বহু চর্চিত আরজিকর কান্ডে আসামির আমৃত্যু কারাবাস রায়দান পরবর্তীতে ব্যাঙ্কশাল আদালত এক গুরত্বপূর্ণ রায় ঘোষণা করলো। মঙ্গলবার বড়তলার শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় দোষীর মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিল আদালত।এদিন বিকেলে রায় শোনাল কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্ট। আদালতের এই নির্দেশ নজিরবিহীন। কারণ, নির্যাতিতার মৃত্যু হয়নি। যদিও আদালতের পর্যবেক্ষণ, -‘যে ভাবে সাত মাসের একটি শিশুকন্যাকে অত্যাচার করা হয়েছে, তা বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ’। বড়তলা কাণ্ডে ফাঁসির সাজার নির্দেশ দিল আদালত। বড়তলা ৭ মাসের শিশুকে ধর্ষণ মামলায় দোষীকে ফাঁসির সাজা দিলেন বিচারক। বিচারক ঐন্দ্রিলা মুখোপাধ্যায় মিত্র রায়ে জানান, -‘এই ঘটনা বিরল থেকে বিরলতম অপরাধ’।চার্জশিট জমার ২৬ দিনের মাথায় অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা ঘোষণা করল আদালত ।আসামির আইনজীবী আদালতে যুক্তি দিয়েছেন, -‘ছেলেটির বয়স কম। বাড়িতে বৃদ্ধ মা-বাবা রয়েছে’। সেই যুক্তিকে খণ্ডন করতে সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায়ের কথা উল্লেখ করেছেন সরকারি আইনজীবী ।ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে , কলকাতা পুলিশ ইতিহাস গড়ল। বাংলার বিচার বিচার ব্যবস্থা ইতিহাসের অংশ হল। কারণ, এই ধরনের মামলায় এখনও পর্যন্ত ফাঁসির সাজা দিতে দেখা যায়নি। এখানে মেয়েটি বেঁচে গিয়েছে। আর বিপক্ষের আইনজীবী বারবার বলেছেন, এখানে মেয়েটি বেঁচে আছেন, তবে কি আমরা ফাঁসি চাইতে পারি? তবে আদালতের আইনে কোথাও বলা নেই ফাঁসির সাজা পেতে শোনাতে গেলে নির্যাতিতার মৃত্যু হতে হবে। সরকারি আইনজীবী বারবার আদালতে বলেছেন, -“মেয়েটি যদি সুস্থ হয়ে বাড়িও ফেরে, ওকে সারাজীবন এই ঘটনা মানসিক যন্ত্রণা দেবে।আদালত এটাকে বিরল থেকে বিরলতম কেস বলেছে।”এদিন, আদালত জানায়, “এই ধরনের মানুষের সমাজে বেঁচে থাকার কোনও অধিকার নেই। মেয়েটির দেহ নিয়ে খেলা করা হয়েছে। তাই মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কোনও শাস্তি দেওয়ার নেই।” এর পাশাপাশি দশ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।” কলকাতা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “সাত মাস বয়সের ফুটপাথবাসী বাচ্চা কিছুই বোঝে না। তার সঙ্গে এই ধর্ষণের ঘটনা। বিষয়টি নজরে আসার পরই আমরা কলকাতা পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়ে তদন্ত শুরু করি। সমস্ত প্রচুর সিসিটিভি ফুটেজ দুদিন ধরে খতিয়ে দেখি। দোষীর হাঁটাচলা ম্যাচ করাতে পেরেছি। দোষীর ডিএনএ পরীক্ষা হয়। বাচ্চাটির ডিএনএ প্রোফাইল দোষী যুবকের জামায় যে রক্ত লেগেছিল তার সঙ্গে মিল পাওয়া গিয়েছে। আদলতকে বোঝাতে পেরেছি এটা বিরল থেকে বিরলতম ঘটনা।” উল্লেখ্য, গত ৩০ নভেম্বর বড়তলা থানায় এক শিশুকন্যা নিখোঁজ হয়ে যায়। বাবা-মায়ের অভিযোগ ছিল, রাতে রাস্তার পাশে ঝুপড়িতে তাঁরা ঘুমোচ্ছিলেন। ঘুমন্ত শিশুকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ওই ফুটপাত থেকেই শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। এরপর বড়তলা থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। গত ৪ ডিসেম্বর ঝাড়গ্রাম থেকে অভিযুক্ত রাজীব ঘোষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২৬ দিনের মাথায় আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। রাস্তার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে যুবককে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৩৭(২), ৬৫(২) এবং শিশু সুরক্ষা আইনের (পকসো) ৬ নম্বর ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় তাকে। এরপরেই তাকে শিশুকন্যাকে যৌন নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির সাজা ঘোষণা করে ব্যাঙ্কশাল আদালত।উল্লেখ্য, বড়তলার ফুটপাথের যেখানে শিশুটিকে পাওয়া যায়, সেখান থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরেই তার বাবা-মায়ের বাসস্থান। যৌনাঙ্গ ছাড়াও শিশুটির শরীরের একাধিক জায়গায় ক্ষতচিহ্ন ছিল বলে পুলিশি তদন্তে জানা যায় । এরপরেই ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৩৭(২), ৬৫(২) এবং শিশু সুরক্ষা আইন (পকসো)-এর ৬ নম্বর ধারায় একাধিক মামলা দায়ের হয়েছিল । এই আবহে মঙ্গলবার শিশুকন্যা কে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় সঙ্গে জড়িত আসামির মৃত্যুদণ্ড সাজা ঘোষণা করে আদালত।

Leave a Reply