সোমনাথ ভট্টাচার্য, ২৫ মার্চ,
অবশেষে বীরভূমের বগটুই কান্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। শুধু তাই নয়, পুরো তদন্ত প্রক্রিয়া চলবে আদালতের ঘেরাটোপেই তাও জানিয়ে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। শুক্রবার দুপুরে বীরভূমের রামপুরহাটের বগটুই ঘটনায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই কে অতিরিক্ত ক্ষমতা দিল কলকাতা হাইকোর্ট এর প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ । এদিন কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, -‘ শুধু অভিযুক্ত নন, এই ঘটনায় কাউকে সন্দেহ হলে তাঁকেও গ্রেফতার এবং নিজেদের হেফাজতে নিতে পারবে সিবিআই’। এই নির্দেশ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে বলে এই মামলায় বলে অভিমত ওয়াকিবহাল মহলের।বগটুই-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশেই শুধু নয়, এই ঘটনায় তদন্তের জন্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে বিশেষ ক্ষমতা তুলে দিল কলকাতা হাইকোর্ট ।শুক্রবার এই মামলার শুনানি পর্বে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এজলাসে জানান , – ‘আমরা এই ঘটনার সবিস্তার পর্যবেক্ষণ করেছি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে আদালত মনে করছে এই মামলা সিবিআইকে দেওয়া আবশ্যিক’ ।কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি আরও জানান ,- ‘বিচারব্যবস্থা এবং সমাজের প্রতি ন্যায়-বিচারের জন্য স্বচ্ছ তদন্ত করে সত্য সামনে আনা জরুরি। সেই প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে এই মামলাটি সিবিআই-এর হাতে তুলে দিতে চায় আদালত।’এরপরই কলকাতা হাইকোর্টের তরফে রাজ্য সরকার কে নির্দেশ জারি করা হয় , -‘ যত দ্রুত সম্ভব মামলাটি সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিতে হবে’।পাশাপাশি হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, -‘ সিবিআইকে সব রকম সহযোগিতা করতে হবে রাজ্যকে। এই মামলায় রাজ্যের গঠিত সিট কোনও তদন্ত করতে পারবে না’। সিবিআইয়ের প্রতি নির্দেশ – শুধুমাত্র ‘কেস পেপার’ তৈরি করেই থেমে থাকবে না সিবিআই। অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা এবং তদন্তের প্রয়োজনে গ্রেফতার করতে হবে। তদন্ত কত দূর এগলো তার প্রাথমিক রিপোর্ট পরবর্তী শুনানির মধ্যে জানাতে হবে সিবিআইকে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ৭ এপ্রিল রয়েছে বলে জানা গেছে ।এদিন কলকাতা হাইকোর্টের তরফে আদেশনামায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, – ‘আইনের উপর যাতে মানুষের ভরসা থাকে, তাই সিট-এর পরিবর্তে সিবিআই-এর হাতে এই তদন্ত হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, সিবিআই শুধু তদন্তই করবে না, দোষীদের গ্রেফতারও করতে হবে’ । এই মামলার পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে যে, ‘রামপুরহাটে যে ঘটনা ঘটেছে তার অত্যন্ত গভীর সামাজিক প্রভাব রয়েছে । রাজ্য সরকার যে কেস ডায়েরি আদালতে গত বৃহস্পতিবার পেশ করেছে, তা আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খুঁটিয়ে দেখেছি । এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় যে ধরনের তদন্ত প্রয়োজন, এখনও পর্যন্ত তার কিছুই করা হয়নি । সেই কারণেই আমরা অবিলম্বে সিবিআই-এর হাতে এই ঘটনার তদন্তভার দিচ্ছি । রাজ্য যেন সিবিআই-এর সঙ্গে সমস্ত ধরনের সহযোগিতা করে । এই ঘটনার তদন্তে রাজ্য যে সিট গঠন করেছিল তার আর দরকার নেই’ ।গত সোমবার রাতে বীরভূমের রামপুরহাটে বগটুই গ্রামে বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় তদন্ত করবে সিবিআই। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর তরফে একাধিক আইনজীবী উল্লেখ করেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ঘটনাস্থলে গিয়ে আর্থিক সাহায্য, চাকরির লোভ দেখিয়ে তদন্তকে প্রভাবিত করতে চাইছেন । নিরপেক্ষ তদন্ত যাতে না হয়, সত্য সামনে না আসে সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি । তাছাড়া এই ঘটনার তদন্তে গঠিত বিশেষ টিমের মাথায় রয়েছেন রাজ্য পুলিশের কর্তা জ্ঞানবন্ত সিং । যাঁর নামে একাধিক অভিযোগ রয়েছে । তাই রামপুরহাট বগটুই হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া কোনওভাবেই সম্ভব নয়। এদিন আদালত কার্যত সেই যুক্তিকেই মান্যতা দিল । আগামী ৭ এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে।