প্রাথমিকে ৩ কোটির বই চুরি, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের রিপোর্ট তলব হাইকোর্টের
মোল্লা জসিমউদ্দিন ,
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে উঠে প্রাথমিকে প্রায় ৩ কোটি টাকা মূল্যে সরকারি বই চুরি সংক্রান্ত মামলা।সরকারি গোডাউন থেকে চুরি হয়ে গিয়েছিল প্রাথমিকের ২ লক্ষ বই। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা।২০২২ সালের ওই ঘটনায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের রিপোর্ট তলব করল কলকাতা হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ এই রিপোর্ট তলব করেছে।চুরি যাওয়া কত পাঠ্যবই উদ্ধার হয়েছে? রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চাইল কলকাতা হাই কোর্ট। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে এদিন এই মামলাটির শুনানি হয়। ডিভিশন বেঞ্চ তখন রাজ্য সরকারকে প্রশ্ন করে, -‘ চুরি যাওয়া কত বই উদ্ধার সম্ভব হয়েছে? কত ছাত্রছাত্রী বই পায়নি?তাদের পড়াশোনার জন্য কী পদক্ষেপ করা হয়েছে?’ এর পরই জেলা প্রাথমিক স্কুল কাউন্সিলকে তিন সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আদালত সুত্রে প্রকাশ, গত ২০২২ সালে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর স্কুল এসআইয়ের অফিস থেকে ২ লক্ষ পাঠ্যবই চুরির অভিযোগ ওঠে। ওই বই চুরির তদন্ত পুলিশ সঠিক ভাবে করছে না, এই অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। মামলাকারীরা সিবিআই তদন্তের আবেদন জানান। বৃহস্পতিবার শুনানিতে রাজ্যকে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করে বলেন , -‘ কয়েকটা বই তো নয় যে সাইকেলে করে চুরি হয়ে যাবে, ২ লক্ষ বই কী ভাবে একটি অফিস থেকে চুরি হয়ে গেল?’ এর প্রতুত্তরে রাজ্য জানায়, -‘ দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নভেম্বর মাসে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। অনেক বই উদ্ধার হয়েছে’।রাজ্যের জবাব শুনে প্রধান বিচারপতি আবার প্রশ্ন করেন, -‘অভিযুক্তেরা যদি ধরা পড়েন, তবে এখনও কেন বই উদ্ধার করা গেল না? দু’বছরের মধ্যেও বই উদ্ধার হল না? আর কত সময় লাগবে? ‘ এর পরই প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, – ‘ এই মামলায় নিম্ন আদালতে চার্জশিট পেশ হয়েছে, এই অবস্থায় হাইকোর্ট পদক্ষেপ করলে বিচার প্রক্রিয়ার উপর প্রভাব পড়বে। তাই আদালত তদন্ত নিয়ে আপাতত কিছু বলবে না’। তবে তিন সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্যকে।চুরি যাওয়া বইয়ের মূল্য আনুমানিক তিন কোটি টাকা। স্কুলপড়ুয়াদের জন্য ওই সব বই রাজ্যের শিক্ষা দফতর থেকে জেলা স্কুল পরিদর্শকের অফিসে যায়। সেখান থেকে বইগুলি এসআই অফিসে পাঠানো হয়। জেলার প্রাথমিক স্কুলগুলি সেই অফিস থেকে বই সংগ্রহ করে। তার পর তা বিনামূল্যে পড়ুয়াদের মধ্যে বিলি করা হয়। সেই বই এসআই অফিস থেকে চুরি গিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। হাইকোর্টে মামলাকারীদের আবেদন, -‘ঘটনার তদন্ত যেকোনও নিরপেক্ষ সংস্থাকে দিয়ে করানো হোক’।আদালত সূত্রে জানা গেছে , ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ইসলামপুর সার্কেলের এস আই (স্কুল ইনন্সপেকটর) অফিসের গোডাউন থেকে প্রায় ২ লক্ষ বই চুরি হয়ে যায়। যার বাজার মূল্য ৩ কোটি টাকা। ২ ডিসেম্বর এ ব্যাপারে ইসলামপুর থানায় অভিয়োগ দায়ের করা হয়েছিল। তদন্তে নেমে গোডাউনের দায়িত্বে থাকা এক ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতকে জেরা করে পরে আরও একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ওই দু’জন জামিনও পেয়ে যায়। বই চুরির মামলায় চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর নিম্ন আদালতে চার্জশিটও পেশ করেছে পুলিশ।