প্রকৃতির বুনন: কলকাতার বুকে পরিবেশ-বান্ধব ফ্যাশনের নতুন দিগন্ত উন্মোচন

কলকাতা, ৫ই এপ্রিল, ২০২৫: যে শহরে ঐতিহ্যের স্পন্দন আধুনিকতার ছন্দের সাথে মিশে একাকার হয়ে যায়, সেখানে এক সবুজ বিপ্লবের সূচনা হয়ে গেলো। শ্রী গৌতম মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর সহধর্মিনী অধ্যাপিকা অনন্যা মুখোপাধ্যায়ের কল্পনার ডানায় ভর করে সৃষ্টি হয়েছে ওয়ান্ডার উইভস। তারই এক মনোমুগ্ধকর ব্যতিক্রমী প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা মহানগরকে ফ্যাশন বিষয়ে নতুন করে ভাবতে শেখালো, প্রদর্শনীর শিরোনাম ছিল “প্রকৃতি প্রতিটি সুতোয়: এক স্থিতিশীল ভবিষ্যতের নকশা”। এই অনুষ্ঠান পরিবেশ-সচেতন ফ্যাশনের প্রয়োজনীয়তার উপর এক সময়োপযোগী আলোকপাত করেছে।

যখন বিশ্ব ফাস্ট ফ্যাশনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান পরিবেশগত দূষণেরও মোকাবিলা করছে, যেখানে কোটি কোটি টন পোশাক ভাগাড়ের করুণ গানে পরিণত হচ্ছে, তখন ওয়ান্ডার উইভস্ আশার এক আলোকবর্তিকা রূপে আবির্ভূত হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে প্রাক্তন হিডকো চেয়ারম্যান শ্রী দেবাশিস সেন, স্বামী বেদাতীতানন্দ (রবি মহারাজ), রামকৃষ্ণ মিশন শিল্পমন্দির, বেলুড়, ডঃ সুস্মিতা ভট্টাচার্য, বিজ্ঞানী সি, আইসিএমআর, অধ্যাপিকা কণিকা দাস ভট্টাচার্য, অধ্যাপক-ইন-চার্জ, আইআইইএসটি শিবপুর, শ্রীমতি কাকলি দে, সহকারী পরিচালক, চাইল্ড ইন নিড ইনস্টিটিউট, শ্রী ইমরান জাকি, সমাজ-সেবী, শিক্ষাবিদ, শ্রীমতি অনিন্দিতা রায় সান্যাল, ব্রিজিং কালচারস, ইন্সপায়ারিং কমিউনিটি, শ্রী সঞ্জীব ঘোষ, প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন ক্লাব এবং চলচ্চিত্র পরিচালক দেবাশিস সেন শর্মার মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন, যা এক গভীর কর্মপ্রেরণার অনুরণন সৃষ্টি করেছিল।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল যখন নামল, তখন এক প্রাণবন্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে পরিবর্তনের ফিসফাস সমগ্র সভাকক্ষে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল, যা ব্র্যান্ড এবং ভোক্তা উভয়কেই স্থিতিশীল অভ্যাসকে আলিঙ্গন করার জন্য উৎসাহিত করছিল। আলোচনার প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল পাট, এক আশ্চর্য তন্তু, যা আমাদের গ্রহের মুক্তির গল্পে মুখ্য ভূমিকা নিতে প্রস্তুত।

“সমুদ্রের দিকে ধাবমান নদীর মতো, আমাদের ফ্যাশনের পছন্দগুলিকে স্থিতিশীলতার দিকে পরিচালিত করতে হবে,” বলেন শ্রী গৌতম মুখোপাধ্যায়, তাঁর কথাগুলি এমন এক ভবিষ্যতের উজ্জ্বল চিত্র এঁকেছিল যেখানে পাট, তার অসংখ্য রূপে – ফিউশন পোশাক থেকে শুরু করে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিস – এক সবুজ বিশ্বের ভিত্তিপ্রস্তর হয়ে উঠবে। তিনি সচেতনতা জাগানোর, এমন এক সম্মিলিত চেতনা প্রজ্বলিত করার চ্যালেঞ্জের কথা বলেন যা পৃথিবীকে লালন করে।

প্রদর্শনীটি ছিল প্রকৃতির প্রাচুর্যের এক কাব্যিক উপস্থাপনা – পাট, জুকো এবং কটন, প্রতিটি তন্তু পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদের সাক্ষ্য বহন করছিল। অপরিশোধিত পাটের গ্রাম্য আকর্ষণ থেকে শুরু করে মুদ্রিত কাপড়ের উজ্জ্বল রং, এই সংগ্রহ স্থিতিশীল উপকরণগুলির অসীম সম্ভাবনা প্রদর্শিত হয়েছিল। পাট, সেই নীরব নায়ক, এক বহুমুখী অনুপ্রেরণা রূপে আত্মপ্রকাশ করেছিল, যা মার্জিত ফ্যাশন সামগ্রী থেকে শুরু করে ব্যবহারিক প্যাকেজিং সমাধান পর্যন্ত সবকিছুতেই শোভা পাচ্ছিল।

এই অনুষ্ঠানটি কেবল একটি প্রদর্শনী ছিল না; এটি ছিল এক আন্তরিক আবেদন, এক সুরেলা সমবেত গান যা এমন এক বিশ্বের পক্ষে কথা বলছিল যেখানে ফ্যাশন পৃথিবীর উপর হালকা পদক্ষেপে চলে। বার্তাটি স্পষ্ট ছিল: পাট, তার কোমল পদচিহ্ন সহ, এমন এক ভবিষ্যতের দ্বার উন্মোচন করার চাবিকাঠি ধারণ করে যেখানে স্থিতিশীলতা এবং শৈলী নিখুঁত সামঞ্জস্যে নৃত্য করে।

কলকাতার হৃদয়ে, ওয়ান্ডার উইভ্স একটি বীজ বপন করেছে, আশার একটি বীজ যা এক সবুজ, শ্যামল আগামীতে পল্লবিত হবে। স্থিতিশীল ফ্যাশনের পথনির্দেশক হয়ে থাকবে। যা নিশ্চিত করে যে প্রকৃতির সৌন্দর্য আগামী প্রজন্মের জন্য অক্ষুণ্ণ থাকবে।

Leave a Reply