পূর্ব মেদনীপুরে জমি আন্দোলনের ১০ টি ফৌজদারি মামলায় পুনরায় বিচারের নির্দেশ ডিভিশন বেঞ্চের
মোল্লা জসিমউদ্দিন ,
রাজ্যে প্রত্যাহার করা মামলা আবার শুনবে নিম্ন আদালত। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে রাজ্য সরকারের প্রত্যাহার করা জমি আন্দোলন পর্বের ১০টি মামলার বিচার শুরু হবে আবার। ১৫ দিনের মধ্যেই সরকারি আইনজীবীদের এই বিষয়ে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্যের উচ্চ আদালতের তরফে। আদালতের এই নির্দেশে খুশি জমি আন্দোলন পর্বের মৃতদের পরিবার। চলতি সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং মহাম্মদ সাব্বির ডিভিশন বেঞ্চ আবার এই মামলা শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে। প্রসঙ্গত ২০০৭ এবং ২০০৯ সালের মধ্যে সিপিএম নেতাদের পরিবার খেজুরি আর নন্দীগ্রাম থানায় বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করেছিলেন। পরবর্তীতে ২০২০ সাল নাগাদ রাজ্য সরকারের দাবি মেনে ওই ১০টি মামলা প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছিল হলদিয়া মহকুমা আদালত। নিম্ন আদালতের ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই ছ’টি মামলার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন আইনজীবী নীলাঞ্জন অধিকারী। এরপর হাইকোর্ট অন্তর্বর্তীকালীন পুরনো ছ’টি মামলা আবার চালু করার নির্দেশ দেয়। সম্প্রতি হাইকোর্টে ডিভিশন বেঞ্চ নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলন পর্বের নন্দীগ্রাম থানার ছ’টি এবং খেজুরি থানার চারটি মামলা আবার চালু করার নির্দেশ দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকারের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, -‘সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের অধীনে যে সমস্ত দরিদ্র, ভূমিহারারা তাঁদের জীবিকা রক্ষার জন্য তখনকার ভূমি নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, তাঁদের ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার জন্য কিছুটা অধিকার প্রয়োগ করতে হয়েছিল। তার জেরেই এই ঘটনা ঘটেছিল’। তবে আদালতের ৪৪ পাতার নির্দেশে স্পষ্ট বলা হয়েছে,’যাঁরা ১০টি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত, তাঁদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। কেস ডায়েরি, ময়নাতদন্তে স্পষ্ট, খুন তো হয়েইছে।। ফলে সমাজে এখনও এমন ব্যক্তি রয়েছেন, যাঁরা খুনের জন্য দোষী’। হাইকোর্ট জানিয়েছে, ‘সিআরপিসির ৩২১ ধারার অধীনে মামলা প্রত্যাহারের অনুমতি দেওয়া জনস্বার্থে ঠিক হবে না। নন্দীগ্রামের রানিচকের অন্নপূর্ণা মণ্ডল খুনের মামলায় অভিযুক্তের তালিকায় নাম রয়েছে তৃণমূল নেতা সোয়ুম কাজি-সহ আরও ৫৪ জনের। এছাড়া গোকুলনগরে দুলাল গারু খুনে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে খেজুরি প্রাক্তন তৃণমূল গ্রাম প্রধান সমর শঙ্কর মণ্ডল-সহ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে। চঞ্চল মিদ্যা খুনে তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ান, আবু তাহেরের পাশাপাশি, নাম জড়িয়েছে বিজেপি নেতা অশোক করণ, স্বদেশ দাস অধিকারীদের। এছাড়াও ভাঙাবেড়ায় ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ ও গুলিতে চারজনের খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা সুফিয়ান এবং বিজেপি নেতা শরৎ ভুঁইয়া।রাজ্যের উচ্চ আদালতের নির্দেশে আবার ওই সব মামলার বিচার শুরুর হওয়ায় খুশি নিহতদের পরিজন। এপ্রসঙ্গে মৃত দুলাল গারুর স্ত্রী দুর্গা গারু এবং হরিপদ দাস বলেছেন,’দীর্ঘদিন ধরে আমরা অত্যাচারিত। তার পরেও মামলা তুলে নিয়েছিল রাজ্য সরকার। হাইকোর্ট যা নির্দেশ দিয়েছে, তাতে সাধুবাদ জানাই। আশা করি আমরা বিচার পাব।’ আগামী বিধানসভা ভোটার আগে আবার এই মামলা শুরু হওয়ায় বিরাট অস্বস্তিতে তৃণমূল এবং বিজেপি দুই দলের নেতারা। এপ্রসঙ্গে নন্দীগ্রামে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির নেতা তথা তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি শেখ সুফিয়ান দাবি করেছেন, ‘আমরা নির্দোষ। রাজ্য সরকার পদ্ধতি মেনে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করেছিল। এখন আমাদের আইনি লড়াই চলবে।’ যদিও আত্মবিশ্বাসের সাথে বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পাল বলেছেন, ‘আমাদের দলের কয়েকজনের নাম আছে ঠিকই। কিন্তু ওই সব পুরনো মামলায় তদন্ত শেষ হয়ে গিয়েছে। চার্জশিট জমা পড়েছে। তাই বিচার শুরু হলেও কোন অসুবিধা নেই।’