পুলিশ কমিশনারের প্রণাম ভার্চুয়াল বৈঠক;
প্রবীণদের সঙ্গে যোগ দিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়
শুভ ঘোষ, ২০ জানুয়ারি ২০২২, কলকাতা: কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল সহ পুলিশের শীর্ষ কর্তারা প্রণাম কর্মসূচির আওতায় থাকা প্রবীণ নাগরিকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন।বিসিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে চন্দ্রবিন্দু খ্যাত গায়ক উপল সেনগুপ্ত, বার্ধক্য রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ধীরেশ চৌধুরী, প্রণাম প্রকল্পের যুগ্মআহ্বায়ক অরিন্দম শীল এবং এশা দত্তও যোগ দেন বৈঠকে। শহরের প্রবীণ নাগরিকদের জন্য কলকাতা পুলিশ এবং দ্য বেঙ্গল সংস্থার যৌথ উদ্যোগ এই প্রণাম কর্মসূচি।
এদিন তাঁদের আশ্বস্ত করে পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল বলেন,”আপনাদের যখনই প্রয়োজন হবে কলকাতা পুলিশ তখনই আপনাদের পাশে থাকবে।”
প্রবীণদের উদ্দেশ্যে তাঁর ভাষণে বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী বলেন, “আমি এটা জেনে খুব আনন্দিত যে আপনারা রাতে আমার টেলিভিশন প্রোগ্রাম উপভোগ করছেন। অনুগ্রহ করে নিজেদের যত্ন নেবেন এবং নিজের বাড়িতে হোক বা বাড়ির ছাদে বা যেকোনও জায়গায় নিয়মিত শরীরচর্চা করার চেষ্টা করবেন। আপনাদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য কলকাতা পুলিশ রয়েছে। ভালো থাকুন সুরক্ষিত থাকুন। আমি এবং আমরা সকলে একদিন আপনাদের মতই প্রবীণ হব। আমি প্রণামকে শুভেচ্ছা জানাই প্রবীণদের কথা ভেবে তাঁদের জন্য এতকিছু করার জন্য।”
দ্য বেঙ্গল এর তরফে সন্দীপ ভুতোরিয়া বলেন,”প্রবীণ নাগরিকদের দিনরাত মানসিক এবং শারীরিক ভাবে সহায়তা এবং নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য গৃহীত প্রণাম একটি মডেল প্রকল্প। প্রবীণদের কাছ থেকে অসংখ্য সাড়া পাওয়া এই প্রকল্প নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের সঙ্গে মানিয়ে নিতে নিয়মিত নিজেকে আরও উন্নত করে তুলছে। কোভিড কালে, বয়স জনিত কারণে ঘর বন্দী হয়ে যাওয়া মানুষকে নিয়মিত ওষুধসহ অন্যান্য আবশ্যকীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছে প্রণাম। প্রবীণ নাগরিকদের জন্য সামাজিক পরিষেবা প্রদানের একটি সফল মডেল তৈরি করেছে প্রণাম।”
চন্দ্রবিন্দু ব্যান্ডের গায়ক উপল সেনগুপ্ত প্রবীণদের উদ্দেশ্যে সঙ্গীত পরিবেশন করেন।বার্ধক্য রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ধীরেশ চৌধুরী শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যোগ দেওয়া প্রবীণদের স্বাস্থ্য বিষয়ে একটি প্রেজেন্টেশন দেন এবং কোভিড সচেতনতা বৃদ্ধি নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। অভিনেতা সোহম এবং পরিচালক রাজা চন্দও এই ভার্চুয়াল বৈঠকে সামিল হন।
বিগত এক সপ্তাহ ধরে কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন ডিভিশনে আলাদা আলাদা করে প্রণাম সদস্যদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। পোর্ট ডিভিশন ও ইস্ট সুবারবান ডিভিশন এবং সেন্ট্রাল ডিভিশন ও ইস্ট সুবারবান ডিভিশন, এসএসডি, এসিডি পর্ণশ্রী থানা যেখানে প্রণাম প্রকল্পের যুগ্ম-আহ্বায়ক এশা দত্ত এবং বিখ্যাত তবলা শিল্পী বিক্রম ঘোষ অংশ নেন। অভিনেত্রী তনুশ্রী প্রণাম সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং কণ্ঠশিল্পী ইমন চক্রবর্তী ভার্চুয়াল বৈঠকে সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
এর আগে, দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রণাম কর্মসূচি নিয়ে তাঁর প্রথম বৈঠকে কলকাতার পুলিশ কমিশনার কলকাতার সমস্ত থানাকে প্রবীণ নাগরিকদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় সহায়তা করার নির্দেশ দেন। শহরে কোভিড সংক্রমণ দ্রুত বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে পুলিশ কর্মীদের মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব বৃদ্ধি সংক্রান্ত নিয়ম পালন এর উপরেও তিনি যোগ দেন। এতে প্রবীণদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কাও কমবে কেননা প্রবীণদের কাছে এই ভাইরাস বেশি ঝুঁকির।
সাইবারক্রাইম বিভাগের সাব ইন্সপেক্টর সন্দীপ শাহ সাইবার জালিয়াতি নিয়ে বক্তব্য রাখেন এবং কিভাবে ব্যাংক জালিয়াতরা প্রবীনদের নিশানা করছে তা নিয়ে আলোচনা করেন। কলকাতা পুলিশ সদরের সার্জেন্ট প্রসূন দাস বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে শোনান। পার্ক স্টিট থানার অতিরিক্ত ওসি অমিত চ্যাটার্জি,অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (৪) ডক্টর তন্ময় রায় চৌধুরী আইপিএস, ওসি,সিপিডব্লিউ, কলকাতা পুলিশ, মানস ঝাঁ, বালিগঞ্জ এবং টালিগঞ্জ প্রণামের অতিরিক্ত এও শ্রীমতি মনিকা বটব্যাল প্রমূখ এই ভার্চুয়াল কনফারেন্সে অংশ নেন। হেয়ার স্ট্রেট থানার ইন্সপেক্টর দেবজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং সাব-ইন্সপেক্টর নিরুপম সঙ্গীত পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠান শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ডিসি সেন্ট্রাল ডিভিশন, আইপিএস রূপেশ কুমার।
এক দশকেরও বেশি সময় আগে কলকাতা পুলিশ এবং দ্য বেঙ্গল কলকাতার বাসিন্দা প্রবীণ নাগরিকদের সহায়তার উদ্দেশ্যে যুগ্মভাবে প্রণাম প্রকল্পের সূচনা করে। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু প্রথম সদস্য হিসেবে প্রণাম প্রকল্পের আওতায় নাম নথিভুক্ত করেন। প্রথম সারির সিমেন্ট উৎপাদক সংস্থা শ্রী সিমেন্ট কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি উদ্যোগের আওতায় এই প্রকল্পের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
বর্তমানে শহরের ১৮ হাজারের বেশি প্রবীণ নাগরিক প্রণাম প্রকল্পে নথিভূক্ত। তাঁদের পাশে দাঁড়াতে কলকাতা পুলিশ বিশেষ পরিকাঠামো-দফতর, বিশেষ টেলিফোন নাম্বার এবং ২৪x৭ কর্মী নিয়োগ করেছে।