নববর্ষের আনন্দে মেতে উঠল আদরবাসার শিশুরা
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী
নববর্ষের দিন পাড়ায় ওদের বয়সী অন্যান্য শিশুরা যখন নতুন পোশাক পরে আনন্দে মেতে ওঠে ওরা তখন অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকে ওদের দিকে। কে কিনে দেবে ওদের নতুন পোশাক! অথবা সন্ধ্যার সময় পাড়ার অনুষ্ঠানে রঙিন ঝলমলে পোশাক পরিধান করে ঐসব বাচ্চারা যখন মঞ্চে উঠে পারফর্ম করে সেটা দেখে ওরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আর ভাবে ওরা কি কোনোদিন মঞ্চে উঠে পারফর্ম করার সুযোগ পাবে! নতুন পোশাক কিনে দেওয়ার মত আর্থিক সামর্থ্য না থাকলেও অর্পিতা 'আণ্টি'র সৌজন্যে বছরের প্রথম দিন ওরা নিজেদের মধ্যে প্রাণখোলা আনন্দে মেতে ওঠার সুযোগ পায়। ওরা উত্তর দমদমের শরৎ বসু রোডের শরৎ কলোনির 'আদরবাসা'-র অসহায় অথচ আদরের ছেলেমেয়ে।
১৪৩০ সালের প্রথম দিনেই ওদের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল একটা ছোট্ট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। ছিলনা সুসজ্জিত কোনো মঞ্চ, চোখ ঝলসানো আলো অথবা অত্যাধুনিক সাউণ্ড সিস্টেম। কিন্তু ছিল আন্তরিকতা। ঘরটাই হয়ে উঠেছিল মঞ্চ। ওদের টানে হাজির ছিলেন দুই বিশিষ্ট বাচিক ও সংগীত শিল্পী মানসী সাহা ও সুতপা দাশগুপ্ত।
দুই বিশিষ্ট শিল্পী পরিবেশিত শ্রুতি নাটক, গান, আবৃত্তির সঙ্গে সঙ্গে আদরবাসার আদরের কচিকাচাদের নাচ, গান, আবৃত্তি নববর্ষের সন্ধ্যাটাকে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। দেবুু, দেবাশীষ, শঙ্কর, ঝর্না, বিশ্বজিৎ, কৃৃষটিনা, উর্মি, সুজয়, শুভ, অঙ্কিত, অঙ্কুশ, আলফাসানি, আরশি, শুভদের উৎসাহ দেখলে মনে হবে সমগ্র রাজ্যের আনন্দ যেন নেমে এসেছে ওখানে। বরাবরের মত সারাক্ষণ ওদের পাশে ছিলেন আদরবাসার দুই প্রাণভোমরা মাতা-কন্যা জুটি জয়তী ইন্দ্র ও অর্পিতা ইন্দ্র। ঐ দুই শিল্পী নিজেদের সাধ্যমতো বাচ্চাদের মিষ্টি মুখও করান।
মানসী দেবী বললেন – বহু জায়গায় আমরা অনুষ্ঠান করি। হাততালি পাই। প্রশংসাও জোটে। কিন্তু আজ এখানে যেটা পেলাম সেটা কোনোদিনই ভুলতে পারবনা। ঝিনুকের বুকে থাকা মুক্তোর মত আজীবন সযত্নে রেখে দেব। একই সুর শোনা গ্যালো সুতপা দেবীর কণ্ঠে। তার বক্তব্য – আজ যেটা পেলাম সেটা অমূল্য। আমাদেরকে আমন্ত্রণ করার জন্য অর্পিতাকে ধন্যবাদ। এখানে না এলে শিল্পী জীবন হয়তো অসম্পূর্ণ থেকে যেত।
দুই শিল্পীকে ধন্যবাদ জানিয়ে অর্পিতা দেবী বললেন - বহু কষ্টে পাঁচজনের সহযোগিতায় আমি আদরবাসার শিশুদের এগিয়ে নিয়ে চলেছি। ঐ দুই দিদির সৌজন্যে আমার ছেলেমেয়েরা আনন্দ করার সুযোগ পেল। সত্যিই খুব ভাল লাগছে।