Spread the love

নতুন মৌলিক গানের হাওয়া নিয়ে আসছে “হাওয়া বদলের গান”

রাজকুমার দাস

সঙ্গীত আমাদের কাছে প্রাণের আরাম, আনন্দের সঙ্গী, চোখের জল এবং সর্বোপরি মনের মিলনের রসদ। এই প্রথমবার বাংলায় ২৬জন কৃতী সিংগার-সংরাইটার, কম্পোজার একত্রিত হয়েছেন তাঁদের গানের সম্ভার নিয়ে যা জীবনের আনন্দ- দুঃখ-বেদনার স্পন্দন বহন করছে, বলছে সমাজের কথা। বিগত কয়েকমাসের দীর্ঘ পরিশ্রমের পর বাংলার এই প্রতিভাবান ইন্ডিপেন্ডেন্ট মিউজিশিয়ানের ঝাঁক নিয়ে আসছে “হাওয়া বদলের গান”। এই অডিও-ভিস্যুয়াল সিরিজে ২৬ জন সিঙ্গার- সংরাইটার তাঁদের ৩৩টি অপ্রকাশিত গান ও জনপ্রিয় ৭টি বাংলা গান প্রকাশ করছেন। এই প্রথমবার ৪১জন শ্রোতাকে সঙ্গে নিয়ে এক অনন্য অভিজ্ঞতার সামাজিক পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাওয়া হল। সমগ্র পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য, সমভাবাপন্ন নতুন প্রতিভাবান মিউজিশিয়ানদের সঙ্গে বাংলার সঙ্গীত জগতের প্রতিষ্ঠিত কিছু মিউজিশিয়ানকে এক ছাদের তলায় আনা। বাংলা সঙ্গীতজগতের শ্রদ্ধেয় সিংগার-সংরাইটার, কম্পোজারদের উপস্থিতিতে ৫ই নভেম্বরে তার প্রকাশ অনুষ্ঠান হয়ে গেল ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন ক্লাবে।
“হাওয়া বদলের গান” অডিও- ভিস্যুয়াল সিরিজে থাকছেন বাংলার ইন্ডিপেন্ডেন্ট সঙ্গীত জগতের সক্রিয় শিল্পীরা। “Wind Of Change Resto Cafe”-র সহযোগিতায় তৈরি হওয়া এই সিরিজ আসলে বাংলার নতুন সিংগার-সংরাইটার, মিউজিশিয়ানদের সৃজনশীল সত্ত্বার বহিঃপ্রকাশের জন্য একটি মঞ্চ গড়ে তুলতে চায়। উৎসুক দর্শক-শ্রোতাদের জন্য থাকছে “হাওয়া বদল” নামের একটি নতুন ইউটিউব চ্যানেল। এই সিরিজে যে সকল ইন্ডিপেন্ডেন্ট গান থাকছে, তা UD সিরিজের মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে এবং তারাই আগামী চার মাস ধরে ছ’টা অ্যালবামে ভাগ করে তা ছড়িয়ে দেবেন সকলের মধ্যে। প্রত্যেক অ্যালবামে থাকছে বিভিন্ন ইন্ডিপেন্ডেন্ট শিল্পীদের সৃষ্ট ছ’টি করে নতুন বাংলা গান যেগুলো সমস্ত অডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ পাবে।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট শিল্পী, অভিষেক চক্রবর্তী-র কথায়― “বাংলার সংস্কৃতিতে সঙ্গীত আগাগোড়াই একটা বড় জায়গা জুড়ে ছিল। শুধুমাত্র বাংলাতেই নয়, সর্বভারতীয় এমনকী আন্তর্জাতিক স্তরেও বাঙালি শিল্পীরা সামগ্রিকভাবে সঙ্গীতকে নতুন রূপ দিয়েছেন। বাংলার জনপ্রিয় সংস্কৃতির সাথে সংগীতের যে ওতপ্রোত সম্পর্ক, এই প্রোজেক্টের মাধ্যমে শিল্পীরা আরও একবার তা নতুন করে আবিষ্কার করেছেন এবং বাংলার অনেক অনাবিষ্কৃত প্রতিভাকে সমকালীন শিল্পের পরিসরে তুলে ধরতে চেয়েছেন। চলচ্চিত্রের গান অনেক বেশি জনপ্রিয় হলেও, বাংলায় বিভিন্ন ধারার ইন্ডিপেন্ডেন্ট শিল্পীদের, যেমন― শাস্ত্রীয়সংগীত, লোকসংগীত, পপ অথবা রক শিল্পীদের এক বিরাট ইতিহাস রয়েছে। আমাদের সবার সম্মিলিত লক্ষ্য― এই বিপুল ঐতিহ্যকে সম্বল করে এমন এক শক্ত মাটি তৈরি করা, যেখানে আগামীর শিল্পীরা তাঁদের প্রতিভা এবং কাজের প্রতি অধ্যাবসায়কে বৃহত্তর দর্শক-শ্রোতামণ্ডলীর সামনে মেলে ধরবার সুযোগ নিজেরাই তৈরি করে নিতে পারেন।”
এই সিরিজের প্রতিটি গানের মিউজিক ভিডিওর শ্যুটিং-প্রক্রিয়া প্রকৃত অর্থেই ফার্স্ট অফ ইট’স্ কাইন্ড। গান নিয়ে এরকম সামাজিক নিরীক্ষামূলক ভিডিও এর আগে বাংলা, এমনকী ভারতের সংগীত জগতেও হয়নি।

যেহেতু ইন্ডিপেন্ডেন্ট শিল্পীদের করোনার জন্য অনেকেই আর্থিক দিকে পিছিয়ে পড়েছে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে
এই পরিস্থিতিতে Wind of Change Resto Cafe শিল্পীদের জন্য এই উদ্যোগটা নিয়েছেন ওঁদের প্রথম বর্ষপূর্তির উপহার হিসেবে। শুধু তাই নয়। গত ১ বছরে তাঁরা বহু শিল্পীর পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁদের শিল্পকর্মকে মানুষের কাছে পৌঁছনোর মঞ্চ হিসেবে। ওঁদের বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা ছাড়া এই বিশাল মাপের কাজ করা সম্ভব হত না।
আমাদের এই কর্মকান্ডের মূল পৃষ্টপোষক এবং বিনিয়োগকারী, Wind of Change Resto Cafe-র কর্ণধার, শ্রী অমিত মন্ডল।

বাংলার শিল্পীরা বাংলা গানকে জাতীয় স্তরের সংগীতিক পরিমণ্ডলে আরও একবার প্রতিষ্ঠা করবার জন্য যে সম্মিলিত উদ্যোগ নিয়েছেন, তা অত্যন্ত আনন্দের এবং উত্তেজনার বিষয়। আমরা তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সানন্দে অঙ্গীকারবদ্ধ।
একটি গোষ্ঠী হিসেবে সঙ্গীত শিল্পীদের উচিৎ একে অপরের সংগীতিক যাত্রাপথে উৎসাহ প্রদান করা এবং ইন্ডিপেনডেন্ট শিল্পীদের নিজেদের শিল্প প্রদর্শনে সহায়তা করে বাংলার সংগীতিক বৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করা। রূপম ইসলাম, উপল সেনগুপ্ত, গৌরব চ্যাটার্জি (গাবু) প্রমুখ প্রসিদ্ধ সিংগার-সংরাইটার ও কম্পোজাররা বারবার তাঁদের লাইভ অনুষ্ঠান ও ডিজিটাল/অফলাইন কনসার্টে শ্রোতাদের কাছে এই আবেদন রেখেছেন। প্রচুর শিল্পী ও ব্যান্ড তাঁদের সাউন্ড ও ইন্সট্রুমেন্ট নিয়ে করা পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রদর্শনের মাধ্যম হিসেবে ইন্টারনেটকে বেছে নিয়েছেন। মানুষও এখন অপরিচিত শিল্পীদের থেকে এক্সপেরিমেন্টাল মিউজিক শুনতে আগ্রহী। আমাদের মত বলিউড/ফিল্ম মিউজিক শাসিত দেশে ইন্ডিপেন্ডেন্ট শিল্পীদের এই হঠাৎ উত্থান সত্যিই প্রশংসনীয়। ইন্ডিপেন্ডেন্ট শিল্পীরা ভারতের বিশাল সংগীতিক ঐতিহ্যের একটা বড় অংশ হলেও তাঁদের স্বাগত জানানো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম-গুলি তাঁদের এই উত্থানকে ত্বরান্বিত করেছে। এর ফলে নিজস্ব উদ্যোগে তৈরি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম-গুলি ভারতের ইন্ডিপেন্ডেন্ট মিউজিকের পুনরুত্থানের সহায়ক হয়েছে। ভারতের বৈচিত্র্যপূর্ণ সঙ্গীত পরিবেশে প্রযোজক এবং উদ্যোগপতিদের নিঃসন্দেহে নতুন আশার আলো দেখাচ্ছেন এই ইন্ডিপেন্ডেন্ট শিল্পীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *