Spread the love

দুস্থ-আর্তের শেবায় দেবাশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়

গোপাল দেবনাথ,

রাতে বাড়ি ফেরার সময়ে তাঁকে ঘিরে ধরে পাড়ার কুকুরেরা। তাদের মন আনন্দে উথলে ওঠে মানুষটাকে দেখলে। তারা জানে, এবার তাদের খাবার এসে গেছে, এসে গেছে বিস্কুট, এমন কি ওষুধপত্র-ভিটামিন পর্যন্ত। সদাহাস্য মানুষটা বছরের পর বছর পাড়ার কুকুর-বেড়ালদের সেবা করে চলেছেন নীরবে। অবলা প্রাণীরা যেমন তাকে দূর থেকে দেখলেই চিনতে পারে, ছুটে কাছে চলে আসে, তেমনি তাঁকে ভালবাসেন না এমন মানুষ নেই। সেই ১৯৯২ সাল থেকে তিনি দুস্থ মানুষের পাশে। তাদের বিপদে, দুঃখের সাথী। চিকিৎসা, রোজকার ওষুধের ব্যবস্থপনা থেকে শুরু করে শীতের আগে কম্বল দেওয়া, অজস্র মানুষের শ্রদ্ধা-ভালবাসা আর প্রাণ ভরা আশীর্বাদে তাঁর প্রশস্ত হৃদয় আজ আরও আরও প্রশস্ত। সকলের প্রিয় দেবাশীষ বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২১ সালে কোভিডে লক-ডাউনের সময়ে পর্যন্ত একাকী লড়ে গিয়েছেন। গাড়ি নিয়ে চলে যেতেন সেইসব মানুষদের কাছে, যাদের স্যানিটাইজার, কি ভিটামিন-ক্যাপসুল কেনার সামর্থ্য নেই। গাড়ি ভর্তি হয়ে থাকত, মাস্ক, হ্যান্ড-ওয়াশ, স্যানিটাইজার, আর ব্লিচিং-পাউডারের কৌটোয়। চলে যেতেন শহর ছাড়িয়ে দূরে। মফস্বল কি দূর গাঁয়ে। বাড়িতে-বাড়িতে দিয়ে আসতেন কোভিডের সঙ্গে লড়ে বেঁচে থাকার আবশ্যিক সব উপকরণ। কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, এভাবে একাকী এগিয়ে যাওয়া, বিপদের সময়ে অচেনা মানুষের পাশে দাঁড়ানো, আজকের দিনে বিরল। হাসিমুখে তিনি মানুষের জন্য কাজ করে চলেছেন। চিকিৎসা আর ওষুধের খরচ বহন করা থেকে শুরু করে, কাউকে অসম্ভব তৎপরতায় হাসপাতালে ভর্তি করানো, কারও মেয়ের বিয়েতে সাহায্য করা, এমন কি অন্ত্যেষ্টিতেও সেই পাশে রয়েছেন একজনই। তিনি সকলের অন্তরের মানুষ, দেবাশিস-দা। টালিগঞ্জের মুর এভিনিউয়ের দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। মানুষের একটু ভালোর জন্য প্রাণপাত করে লড়ে যাওয়া, কুকুর-বেড়াল থেকে শুরু করে পাখি, সকলের জন্য যার বুক ভরা ভালবাসা, সেই ঋজু, দ্যুতিময় চোখের সদাহাস্য মানুষটা শুধু মানুষ আর তার সমাজ নয়, মানুষের সঙ্গে একসাথে বেঁচে থাকা পশুপাখিদেরকে নিয়ে এক বৃহত্তর সুন্দর নীরোগ পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন। তাঁর দু-চোখে অপূর্ব স্বপ্ন। সুস্থ নির্মল এক সমাজের জন্য তিনি এগিয়ে চলেছেন একলা। এমন কি সমাজেরই কোনও কোণে, অন্ধকারে চুপি চুপি বেড়ে ওঠা নেশার বিভিন্ন আখড়াতেও তিনি একাধিকবার পুলিশ নিয়ে এসেছেন। মাদক-বিক্রি করা বিভিন্ন দুষ্টচক্র বিনাশে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা কখনোই ভুলবে না টালিগঞ্জ এলাকার মানুষ। আজও রোজ সকালে গাড়ি বের করার সময় কখনোই তিনি সঙ্গে নিতে ভোলেন না কতগুলো অতি আবশ্যিক কিছু বস্তু। গাড়িতে সবসময়েই রাখেন, অনেক কম্বল, নিত্য প্রয়োজনের কিছু ওষুধ, শুকনো খাবার, শুকনো ফল। পথে যেতে যেতে যদি চোখে পড়ে কোনও বাসস্টপের ছাউনির নীচে সহায় সম্বলহীন একাকী বৃদ্ধ কি বৃদ্ধা, দাঁড়িয়ে যায় তাঁর গাড়ি। অসহায় মানুষটার পরমাত্মীয় তিনি তখন। শুধু খাবার কি কম্বল দেওয়া নয়, মানুষটিকে অসুস্থ মনে হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে তবেই স্বস্তি মেলে তাঁর। আবার এগিয়ে চলে তাঁর গাড়ি। আবার দাঁড়ায় কোথাও। দাঁড়াতে হয় একটু পর পরই। অসহায় আর দুস্থ মানুষের জন্য নিবেদিত প্রাণ দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় যে আজও অক্লান্ত, আপোসহীন একাকী এক যোদ্ধা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *