আন্তর্জাতিক  চোরাকারবারীরা ক্রাইম  কন্ট্রোল  ব্যুরোর হাতে

দুবাইয়ে পাচারের আগেই জোড়া হাতির দাঁত উদ্ধার

        খায়রুল   আনাম

জেলা বীরভূমকে করিডর হিসেবে ব্যবহার করে ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ থেকে মাদক, কয়লা, গোরু-মোষ থেকে শুরু করে বিস্ফোরক পাচারের ঘটনা প্রতিনিয়ত  ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে।  বিগত শান্তিনিকেতন পৌষমেলার সময় মণিপুর থেকে গাঁজা পাচারের সময়   ২০২৩ সালের  ২২ ডিসেম্বর শান্তিনিকেতনের প্রান্তিক এলাকার কোপাই-মহিষঢাল সেতুর কাছে দু’টি গাড়ি আটক করে  স্পেশাল  টাস্ক ফোর্স  কয়েক কুইন্টাল  গাঁজা উদ্ধার করে এবং এক মহিলা-সহ চারজনকে আটক করে।  এদের মধ্যে শিপ্রা বণিক নামে উত্তর ২৪ পরগনার  এক মহিলাও ছিলেন। এদেরই এক আত্মীয়ের  হোটেল রয়েছে প্রান্তিক এলাকায়। সেই হোটেলকে কেন্দ্র করেই এই গাঁজা পাচার কারবার চলতো বলে জানতে পারে  স্পেশাল টাস্ক ফোর্স।  শিপ্রা  বণিক নামে এই তন্বী  মহিলা  এর আগেও পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলো বলে জানা গিয়েছিলো। মাদক কারবার ছাড়াও এই  তন্বী  মহিলার  বিরুদ্ধে  ‘দেহ ব্যবসা’ চালাবার অভিযোগও পাওয়া গিয়েছিলো। আবার  বীরভূম  জেলাকে করিডর হিসেবে ব্যবহার করে ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ থেকে পাচার হয়ে আসা গোরু-মোষ থেকে শুরু করে বিস্ফোরক মুর্শিদাবাদ হয়ে বাংলাদেশে পাচারের ঘটনা প্রায় প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে।  সেইসাথে এবার এই পাচারের সাথে যুক্ত হচ্ছে হাতির দাঁত পাচারের ঘটনা। তবে, এই হাতির দাঁত অবশ্য বাংলাদেশে পাচার হচ্ছে না। হাতির দাঁত পাচার হচ্ছে  দুবাইয়ে।  হাতির জোড়া দাঁতের সাথে  তিন পাচারকারীকে গ্রেফতার করে এমনই তথ্য হাতে পেয়েছে  ওয়াইল্ড  লাইফ  ক্রাইম কন্ট্রোল  ব্যুরো।   গোপন সূত্রে হাতির দাঁত পাচারের বিষয়ে জানতে পেরে  ওয়াইল্ড  লাইফ  ক্রাইম কন্ট্রোল  ব্যুরো নলহাটি বাসস্ট্যাণ্ড এলাকা থেকে একটি বোলেরো গাড়ি-সহ  শঙ্কর রায়, সেকেন্দ্রার মুর্ম্মু ও রবিরঞ্জন  সাহা নামে তিনজনকে গ্রেফতার করে এবং গাড়ি থেকে পূর্ণ বয়স্ক হাতির ১৪ কেজি ওজনের দু’টি দাঁত উদ্ধার করে।  ধৃত তিনজনেরই বাড়ি ঝাড়খণ্ডে। ফরেস্ট প্রটেকশন বিভাগের এসপি  অজিত সিং যাদব জানিয়েছেন,  ঝাড়খণ্ড থেকে একটি গাড়িতে চোরাই হাতির দাঁত দু’টি বীরভূমের  নলহাটি বাসস্ট্যাণ্ডে নিয়ে এসে তা হাত বাদল  হবে  বলে তাঁরা গোপন সূত্রে জানতে পেরেছিলেন।  গাড়ি-সহ হাতির দাঁত দু’টি উদ্ধার করে তিনজনকে গ্রেফতার করতে পারলেও, এখানে তাঁরা কাদের হাতে হাতির এই দাঁত দু’টি তুলে দিতো তা অবশ্য জানা যায়নি। মনে করা হচ্ছে যে, এই তিন পাচারকারী  গ্রেফতার হতেই এখানে যাদের হাতে  হাতির এই দাঁত দু’টি তুলে দেওয়া হতো  তাঁরা গা ঢাকা দিয়ে চম্পট দিয়েছে। এদেশে হাতির দাঁত বেচাকেনা  সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।  কিন্তু দুবাইয়ে হাতির দাঁতের বিশাল চোরাবাজার রয়েছে। সেখানে সর্বনিম্ন প্রতি কেজি পূর্ণ বয়স্ক হাতির দাঁত পাঁচ লক্ষ টাকায় বিক্রি হলে হাতির এই দু’টি দাঁতের দাম হতো সত্তর লক্ষ টাকা। পাচারকারীরা অবশ্য  হাতির অনেক দাঁত সংগ্রহ করে তারপর দুবাইয়ে পাচার করে। ঝাড়খণ্ডের জঙ্গল এলাকায় প্রচুর পরিমাণে হাতি রয়েছে। সেখান থেকেই চোরাকারবারীরা হাতির দাঁত কেটে নিয়ে পাচার করছে। তবে,  মূল পাচারকারীরা থেকে যাচ্ছে আড়ালে।  টাকার বিনিময়ে তাঁরা বাহকদের ব্যবহার করে এই কারবার চালাচ্ছে।  ধৃত তিনজনের বিরুদ্ধে  বন্যপ্রাণ আইনের  ২, ৯, ৪৯,  ৪৯-বি,  ৪৪  ও ৫১ ধারা যুক্ত করে রামপুরহাট আদালতে হাজির করা হলে  ভারপ্রাপ্ত  এসিজেএম  অন্বেষা  চট্টোপাধ্যায়  তাদের  ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ  দেন।

    এর আগে একইভাবে ঝাড়খণ্ড থেকে বীরভূম হয়ে হাতির দাঁত পাচারের সময়  গত বছরের মার্চে মহম্মদবাজার থানার পুলিশ  ঝাড়খণ্ড রাজ্য সীমানার  হরিণশিঙ্গা-কাঁটাপাহাড়ি এলাকায় নাকাচেকিং চালাবার সময়  একটি গাড়ি আটক করে পূর্ণ বয়স্ক হাতির দু’টি দাঁত উদ্ধার করে।  এই পাচারকারীদের যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়  তাদের মধ্যে শেখ  সারু ও শেখ  রাজেশের বাড়ি মহম্মদবাজারে। অপর জন  মহেশ কুমার রায়ের বাড়ি ঝাড়খণ্ডের দুমকার রাণীশ্বরে।  এই মহেশ কুমার রায়-ই হাতির দাঁত পাচারের মাথা হিসেবে কাজ করতো  এবং এই ব্যবসায় সে  কোটি কোটি টাকা খাটাতো।  এবার যে তিনজনকে জোড়া হাতির দাঁত-সহ গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মাথা কে, তাই-ই এখন জানার চেষ্টা  হচ্ছে।।

 

Leave a Reply