‘দাগি প্রার্থীদের পক্ষে সহানুভূতি চলবে না’, এসএসসি কে তোপ ডিভিশন বেঞ্চের
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে শিক্ষক নিয়োগ মামলায় ফের কাঠগড়ায় স্কুল সার্ভিস কমিশন । এবার সরাসরি প্রশ্নের মুখে স্কুল সার্ভিস কমিশনের ভূমিকা। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি সৌমেন সেন শুনানি পর্বে জানান , ‘দাগি অযোগ্য প্রার্থীদের জন্য এত সহানুভূতি কেন এসএসসি-র?’বিচারপতি আরও বলেন, ‘এসএসসি যেন অযোগ্য প্রার্থীদের মুখপাত্র হয়ে উঠেছে। এই আচরণ কাম্য নয়। যাঁদের নাম আগেই বাতিল হয়েছে দুর্নীতির অভিযোগে, তাঁদের পক্ষে দাঁড়িয়ে কী বার্তা দিতে চাইছে কমিশন?’ কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, -‘আগে যাঁদের সুপারিশ বাতিল হয়েছে, তাঁদের পুনর্বহালের আর্জি নিয়েই সম্প্রতি কমিশন আবার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে’। এই নিয়েই ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি। বলেন, ‘কমিশনের কাজ হল যোগ্যদের সুযোগ করে দেওয়া, অযোগ্যদের পক্ষে সওয়াল করা নয়।’বিচারপতির আরও জানান , ‘এসএসসি কি ভুলে যাচ্ছে, আদালত স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার উপর নজর রাখছে? দাগি প্রার্থীদের পক্ষে সহানুভূতি চলবে না।’নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে গত এপ্রিলে ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট। ফের স্বচ্ছ নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অযোগ্যদের আবেদন জমা নিয়ে হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে। সেই মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট এর সিঙ্গেল বেঞ্চ আগেই জানিয়েছিল, -‘চিহ্নিত অযোগ্যরা নতুন নিয়োগ পরীক্ষায় আবেদন করতে পারবে না। এবং যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁদেরও আবেদন বাতিল করতে হবে। নিয়োগ হবে সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশ মেনেই’।হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছে এসএসসি। এদিন রাজ্যের উচ্চ আদালতে কমিশনের যুক্তি, -‘কিছু প্রার্থীর ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত তথ্য ছিল না, তাই তাঁদের সুযোগ দেওয়া হোক’। এরপরই স্কুল সার্ভিস কমিশনকে ভর্ৎসনা করে হাইকোর্ট। চিহ্নিত অযোগ্যদের পাশে দাঁড়িয়ে ডিভিশন বেঞ্চের প্রশ্নের মুখে স্কুল সার্ভিস কমিশন। নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চিহ্নিত অযোগ্যরা থাকবেন না জানিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে মামলা হয় ডিভিশন বেঞ্চে। সেখানেও প্রশ্নের মুখে পড়ল কমিশন। বিচারপতি সৌমেন সেনের প্রশ্ন, “চিহ্নিত অযোগ্যদের নিয়ে সওয়াল করার মতো জায়গায় কি কমিশন আছে?চিহ্নিত অযোগ্যদের নিয়োগে অংশ নেওয়া বা না নেওয়া নিয়ে কমিশন কীভাবে প্রভাবিত হচ্ছে?”এদিন, সিঙ্গেল বেঞ্চের মতো ডিভিশন বেঞ্চেও চিহ্নিত অযোগ্যদের পাশে দাঁড়ায় স্কুল সার্ভিস কমিশন। আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় হাইকোর্টে কমিশনের হয়ে সওয়াল করে বলেন, “চিহ্নিত অযোগ্যরাও অংশ নিতে পারবে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায়। চিহ্নিত অযোগ্যরা নিয়োগে অংশ নিতে না পারলে, অসফল প্রার্থীরাও পারবেন না।” এরপর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেনের প্রশ্ন, “কেউ কোনও একটা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছেন, সেখানে অসফল হয়েছেন। তাঁরা ভবিষ্যতে কোনও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না ?” সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী যাঁরা দুর্নীতি করেছেন, প্রতারণার জন্য যাঁদের চাকরি বাতিল করা হয়েছে তাঁরাও এই নিয়োগে অংশ নিতে পারবেন ? স্কুল সার্ভিস কমিশনকে পাল্টা প্রশ্ন ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি সৌমেন সেনের।