দহন
চিত্রা কুণ্ডু বারিক
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জ্বলতে থাকা আগুনের শিখা চিরন্তন সত্য।
একটি শিশু মাতৃভূমিতে যখন নিজের জায়গা করে নেয় তখন তাকে প্রদীপের আলোতে বরণ করে আহ্বান জানানো হয়। শিশুটি সেসময় বোঝে না সেই আগুনের ইতিহাস। শুধু মায়ের কোলে হাত পা ছড়িয়ে হাসি মুখে চারিদিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে।
বড় হতে থাকা শিশুটি এমন করে কতবার যে আগুন নিয়ে খেলেছে, তখন ও বোঝেনা কতখানি ভয়ঙ্কর খেলায় মেতে উঠেছে।
শেষ সময়ে ও বোঝেনা সে কার গ্রাসে যেতে হবে।
সারাদিন খিদের জ্বালায় ছটফট করতে থাকে, চব্বিশ ঘণ্টা জিভ লকলক করে চলেছে কখন আসবে নতুন নতুন রক্ত আর মাংসের স্বাদ। সারাক্ষণ ডেকে চলেছে আয় তাড়াতাড়ি আয় ভীষণ খিদে ভীষণ খিদে আমার ভিতর।
প্রতিটি মানুষ তার বশে। যখন যাকে পছন্দ এক ইশারায় টেনে আনছে। ফিসফিস করে ডাক দেয় ” আ..য়… তাড়াতাড়ি আ..য়..”। পারছি না আর অপেক্ষা করতে। মনে হয় যেন পালিত হয়েছে তার আদেশে। ছুটে যায়, বলে আসবি না আ…য়… বলছি। অবচেতন মনে চলতে থাকে। তারপর হঠাৎ করে পড়ে যায়। একটু জলের জন্য হা হা করে, আর অগ্নী দেবতা চিৎকার করে হাসতে থাকে, বলতে থাকে গলা শুকিয়ে আসছে? কিসের ভয় আয় সবথেকে বিশ্রাম আমি দেবো যা কখনও কোথাও পাসনি। দেখ আমার হাসি দেখ এমন হাসি তোকেও দেবো আজীবন।
লাশ হয়ে যায় সেই মানুষ সুখের আশায়। চারধারে সাদা কাপড়ে মোড়ানো দেহটা জিব ললকানো আগুনের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে, বলছে ছেড়ে দাও আমাকে বাঁচতে সাহায্য করো। এমন করে ছুঁয়ো না, আমার সমস্ত শরীর ঝলসে গেল। এ তুমি কেমন ভালবাসা দিলে আমায়!
একি…একি আমি যে জ্বলে যাচ্ছি। আমার শরীরের মাংসগুলো ফাটল ধরছে। আমাকে বেঁধে রাখা হয়েছে কেন? আমি বাঁচতে চাই।
কিন্তু অগ্নীদেবতা উচ্চস্বরে হা হা হা হা করে হেসে চলেছে। এ কেমন পৃথিবীর নিয়ম। জন্মের সময় এই তুমি আমাকে হাসি মুখে আহ্বান জানিয়ে ছিলে। আর আজ শুয়ে বেঁধে তুমি গিলে খাচ্ছো অট্টহাসিতে!
একটা সময় আমাকে নিয়ে তোমরাও ছেলেখেলা করেছো। আজ নয় সামান্য কিছু খেলা আমার হোক।
পারছি না আমি এ আগুনের শয্যা নিতে পারছি না। হে ঈশ্বর এ তোমার কেমন বিচার! আর কখনও যেন আমার পরজন্ম ফিরে না আসে।
বিদায় বিদায়।