Spread the love

ট্রেনের প্রতিদিন

সুবল সরদার

আমি প্রতিদিন ডাউন ৬ টা ২ ডায়মন্ড হারবার লোকালের খদ্দের । শিয়ালদহ স্টেশন থেকে উঠি । অফিস ফেরত যাত্রী আর কী । একেবারে পিছনের কম্পার্টমেন্টের শেষ বগিতে ঠিক ট্রেনের গার্ডের পিছনে । আজ জানালার ধারে সিট পেয়েছি । যাত্রীদের হাজার প্রশ্ন শুনছি, এই ট্রেনটা এখন যাবে কোথায়? বিরক্তবোধ না হয়ে তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে খুব ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে আমি তখন ট্রেনে ইনকোয়ারী অফিসে পিক আওয়ার্স এ আছি। যাত্রীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আমি নাজেহল নই , বরং তাদের প্রতিটা প্রশ্ন ধৈর্য্য সহকারে শুনে উত্তর দিতে বেশি করে স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করছি । মনে মনে ভাবছি এমন অফিসে চাকরি পেলে হয়তো এরকম করতে হতো ।
একজন যাত্রী ছুটতে ছুটতে এসে জিজ্ঞেস করে ,এটা কোথায় যাবে ? তখন ট্রেন ছাড়তে ৫ মিনিট বাকি আছে । বললাম, ডায়মন্ডহারবার যাবে । একজন যাত্রী -এটা কোথায় লেগেছে?
ডায়মন্ডহারবার লেগেছে , উত্তর দিলাম।
একজন যাত্রী -বাবা, সোনারপুর যাবে ? বললাম, হ্যাঁ, মাসিমা যাবে। একজন যাত্রী – এটা লক্ষী (মানে লক্ষীকান্তপুর) হবে?
বললাম,না, ডায়মন্ডহারবার হবে। উত্তর শুনে মনে হয় সে সন্তুষ্ট নয় । আসলে সে লক্ষীকান্ত পুরের যাত্রী । তাই এমন হতাশা । শীতকালে কাজকর্ম সেরে সবাই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে চায়। একজন বয়স্ক যাত্রী – এটা হাজিপুর? হবে । বলতেই পাশের যাত্রী ঘাবড়ে যায় । ডায়মন্ড হারবার আবার হাজিপুর হলো কবে থেকে! ডায়মন্ডহারবারকে এখনো অনেক বয়স্করা কেন হাজিপুর বলে আমার কাছে সুস্পষ্ট নয়। হাজিপুর পোস্ট অফিস আছে ডায়মন্ড হারবার হাইস্কুলের কাছে জানি । এখানে নাকি হাজী সাহেবের মাজা ছিল । তাই হয়তো এমন নামকরণ হবে। সব প্রশ্নের একটাই উত্তর ডায়মন্ড হারবার যদিও তাদের প্রশ্ন করে বিভিন্নভাবে । ট্রেন ছাড়ার সময় ছুটে ট্রেন ধরতে গিয়ে তারা অনেক সময় ডিসপ্লে বোর্ড দেখার সময় পায় না। তাই এমন প্রশ্ন করে । এখন ৬টা ২ । গার্ড বাঁশি বাজিয়ে দিয়েছে। টা টা করে এখন শিয়ালদহ ছেড়ে চলে যাচ্ছি আগামীকালের প্রস্তুতি নিতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *